সৌম্যের পাগলামির পরও বাংলাদেশেরই দিন

সৌম্য সরকার
সৌম্য সরকার

দিনের আর মাত্র দুই ওভার বাকি। এটা আম্পায়াররা জানতেন, অস্ট্রেলিয়ানরা জানতেন, মনোযোগী দর্শকেরও জানা ছিল সেটা। সবচেয়ে বেশি জানা দরকার ছিল যার, তিনি কি আর জানতেন না? কিন্তু যেভাবে শটটা খেলে আউট হলেন, প্রশ্নটা উঠছেই। অ্যাশটন অ্যাগারের নিরীহ এক বল দেখে লোভ সামলাতে পারলেন না সৌম্য সরকার। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়লেন। তাতেই সফল এক দিনে কালি লাগল খানিকটা। সৌম্যকে হারিয়ে ৪৫ রান তুলেছে বাংলাদেশে, দ্বিতীয় দিন শেষে ৮৮ রানে এগিয়ে আছে স্বাগতিক দল। ৩০ রানে অপরাজিত তামিমের সঙ্গে অন্য প্রান্তে দিনের বাকিটা নিরাপদে পার করে দিয়ে এসেছেন তাইজুল ইসলাম।

১২টি বল ঠিকমতো পার করে দিলে বাংলাদেশ সব কটি উইকেট নিয়ে মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিন শুরু করতে পারত। সৌম্যকে বাংলাদেশের দরকার ছিল, তার চেয়ে বেশি সৌম্যের নিজেরই দরকার ছিল অপরাজিত থেকে দিন শেষ করা। ভীষণ চাপের মুখে আছেন। এই ইনিংসটা হতে পারত সব চাপ থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসা। ১৫ রান করে উইকেটে মানিয়েও নিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে যে শটটা খেললেন, পাগলামি, স্রেফ পাগলামি!

ক্যাচটি ধরার আগে অবশ্য সৌম্যকে নিয়েও কিছুটা খেলেছিল ভাগ্য। নাকি উসমান খাজা! প্রথম চেষ্টায় বলটা হাতে নিতে পারলেন না খাজা, সেটা পড়ল শরীরে। তবুও আটকাল না বল, সে বল যখন আবার মাটি ছুতে যাচ্ছে, তখন আরও দুবার হাত ফসকাল খাজার। চারবারের চেষ্টায় ক্যাচ ধরলেন। ৪৩ রানে থামল বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি।

এর আগ পর্যন্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন শেষ বিকেলটা আলোকিত করে তুলেছিলেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য। মিরপুরের উইকেট তার স্বভাব ধরে রেখেছে আজও। স্পিনারদের বল একবার লাফ দিচ্ছে তো আরেকবার গড়িয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে। যে কয়েক ওভার বল হাতে নিতে পেরেছেন, তাতেই ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন হ্যাজলউড ও কামিন্স। কিন্তু তাতেও ধৈর্যে চিড় ধরতে দেননি ব্যাটসম্যানেরা। ২১তম ওভারের প্রথম বলের আগ পর্যন্ত আর কী!

সৌম্যের আউটের পর তাই দিনটা নিরাপদে কাটাতে নামতে হলো ‘নাইটওয়াচম্যান’ তাইজুল ইসলামকে। ৯ বল খেলে দিনটা পার করে দিয়ে সে কাজে সফল তাইজুল। তবে আগামীকাল মূল কাজটা করতে হবে তামিমকে। ৭০ বলে ৩০ রান করে এখনো ভরসা হয়ে আছেন দেশসেরা ব্যাটসম্যান।
তবে কাল বাংলাদেশ যতক্ষণই ব্যাট করুক না কেন, এ ম্যাচে মূল দায়িত্ব সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের। এই দুই স্পিনারের কারণেই ৪৩ রানের লিড পেয়েছে বাংলাদেশ। ৬৮ রানে ক্যারিয়ারের ১৬তম বারের মতো পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন সাকিব। আর অস্ট্রেলিয়ার মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া মিরাজ পেয়েছেন ৩ উইকেট। নবম উইকেটে কামিন্স-অ্যাগারের ৪৯ রানের জুটিটা বাধা হয়ে না দাঁড়ালে আজ বাংলাদেশ এক শ রানের বেশি লিড নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারত। শফিউল ইসলামের মাখন গলা হাতও অবশ্য ভূমিকা রেখেছে তাতে।
এর আগে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানে অলআউট করেছে। নিজের ৫০তম টেস্ট খেলতে নামা সাকিব নিয়েছেন ৫ উইকেট।

স্কোরকার্ড

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস

রান

বল

ওয়ার্নার এলবিডব্লু ব মিরাজ

১৫

রেনশ ক সৌম্য ব সাকিব

৪৫

৯৪

খাজা রান আউট

লায়ন এলবিডব্লু ব সাকিব 

স্মিথ ব মিরাজ

১৬

হ্যান্ডসকম্ব এলবিডব্লু ব তাইজুল

৩৩

৬৭

ম্যাক্সওয়েল স্টা. মুশফিক ব সাকিব

২৩

৩৯

ওয়েড এলবিডব্লু ব মিরাজ

অ্যাগার অপরাজিত

৪১

৯৭

কামিন্স ব সাকিব

২৫

৯০

হ্যাজলউড ক ইমরুল বা সাকিব

১৫

অতিরিক্ত

২৩

মোট (৭৪.৫ ওভারে অলআউট)

২১৭

উইকেট পতন: ১-৯ (ওয়ার্নার, ৫.৩), ২-১৪ (খাজা, ৬.১), ৩-১৪ (লায়ন, ৬.৬), ৪-৩৩ (স্মিথ, ১১.৬), ৫-১০২ (হ্যান্ডসকম্ব, ৩২.৩), ৬-১১৭ (রেনশ, ৩৫.১), ৭-১২৪ (ওয়েড, ৩৬.৬), ৮-১৪৪ (ম্যাক্সওয়েল, ৪৩.১), ৯-১৯৩ (কামিন্স, ৬৮.৩), ১০-২১৭ (হ্যাজলউড)।

বোলিং: শফিউল ৬-০-২১-০, মিরাজ ২৬-৬-৬২-৩, সাকিব ২৫.৫-৭-৬৮-৫, তাইজুল ৮-১-৩২-১, মোস্তাফিজ ৮-৩-১৩-০, নাসির ১-০-৩-০।

স্কোর বাংলাদেশ

বাংলাদেশ

২য় ইনিংস

রান

বল

তামিম অপরাজিত

৩০

৭০

সৌম্য ক খাজা ব অ্যাগার

১৫

৫৩

তাইজুল অপরাজিত

অতিরিক্ত

মোট ২২ ওভারে, ১ উইকেটে

৪৫

উইকেট পতন: ১-৪৩ (সৌম্য, ২০.১)।

বোলিং: হ্যাজলউড ৩-১-৩-০, কামিন্স ২-০-৫-০, লায়ন ৯-৩-১১-০, ম্যাক্সওয়েল ৩-০-১৭-০, অ্যাগার ৫-০-৯-১।