সেরা হয়েও জায়গা মিলল না জাতীয় দলে!

আরদুজ্জামান মুন্সি
আরদুজ্জামান মুন্সি

সতীর্থ এক খেলোয়াড় কিছুদিন আগে তাঁকে কথাচ্ছলে বলেছিলেন, ‘এবার হয়তো তোমাকে অধিনায়কত্ব থেকে বাদ দেবে।’ কাবাডি খেলোয়াড় আরদুজ্জামান মুন্সি বিষয়টা শুনে হেসেই উড়িয়ে দেন। এমন কিছু কখনোই ঘটবে না বলে বিশ্বাস ছিল আরদুজ্জামানের। তবে শেষ পর্যন্ত শুধু অধিনায়কত্বই হাতছাড়া হয়নি, দল থেকেও বাদ পড়েছেন দেশের অন্যতম সেরা কাবাডি খেলোয়াড়। ১৯ সেপ্টেম্বর নেপালে আমন্ত্রণমূলক আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টে খেলতে গেছে বাংলাদেশ। সেই দলে জায়গা হয়নি নৌবাহিনীর এই খেলোয়াড়ের! 

ভিয়েতনামে ২০০৯ এশিয়ান ইনডোর গেমসে প্রথম জাতীয় দলে ডাক পান আরদুজ্জামান। এরপর থেকে কোর্টের পারফরম্যান্স দিয়ে টানা খেলে চলেছেন জাতীয় দলে। এখনো বাংলাদেশের সেরা পাঁচ কাবাডি খেলোয়াড়ের একজন ধরা হয় আরদুজ্জামানকে। সেই আরদুজ্জামানই কিনা জাতীয় দলে উপেক্ষিত! জাকার্তায় অনুষ্ঠেয় আগামী বছরের এশিয়ান গেমসের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রের আভাস, শেষ পর্যন্ত উপেক্ষিতই থেকে যেতে পারেন আরদুজ্জামান।
গত বছর আহমেদাবাদে হওয়া কাবাডি বিশ্বকাপের সেরা রেইডারের তালিকায় ছিলেন আরদুজ্জামান। ৫২ রেড পয়েন্ট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। গত মৌসুমে প্রো-কাবাডিতে খেলেছিলেন ইউ মুম্বা দলের হয়ে। অথচ এবারের প্রো-কাবাডির নিলামে ওঠানো তালিকাতেই আরদুজ্জামানের নাম রাখেনি ফেডারেশন! এখন তো জাতীয় দল থেকেই বাদ পড়লেন।
আরদুজ্জামান ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে পুলিশ দলের হয়ে খেলতেন। পরে যোগ দেন নৌবাহিনীতে। কাবাডি অঙ্গনে গুঞ্জন, পুলিশ ছেড়ে নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়ায় ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের কাছে তিনি উপেক্ষিত। কেননা বর্তমানে কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদকসহ বেশ কিছু কর্মকর্তা পুলিশের।
অবশ্য ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক গাজী মোজাম্মেল হক দাবি করেছেন, আরদুজ্জামানের বাদ পড়ার মূল কারণ ফিটনেসে ঘাটতি, ‘ম্যারাডোনাকে এখন আর্জেন্টিনা দলে ঢোকালে বিষয়টা যেমন হবে, ওর বেলাতেও তাই। ওর বয়স হয়ে গেছে। ফিজিক্যাল ফিটনেস আগের মতো নেই। ফিজিও রিপোর্ট পাওয়ার পরই তাকে বাদ দিয়েছি।’ নৌবাহিনীর খেলোয়াড় বলে তাঁকে উপেক্ষা করা হচ্ছে তা মানতে নারাজ এই কর্মকর্তা, ‘নৌবাহিনীর অনেক খেলোয়াড়কেই নেপালে পাঠিয়েছি। অথচ পুলিশের মাত্র তিনজন সুযোগ পেয়েছে। আমি আগে ফেডারেশন কর্মকর্তা, পরে পুলিশ সদস্য। আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফেডারেশন, দেশ ও জাতি।’
যদিও আরদুজ্জামান নিজেকে ফিট বলছেন। যাঁকে দিয়ে ফিটনেস টেস্ট করানো হয়েছে তাঁরই যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি, ‘একজন খেলোয়াড়ের ফিটনেসে ঘাটতি হলে খেলোয়াড়ই আগে বুঝতে পারে। আমি এখনো খেলার মতো ফিট। যেকোনো সময় দলের অন্যদের সঙ্গে ফিটনেসের পরীক্ষা দিতে পারব। আর যাঁকে দিয়ে ফিটনেস টেস্ট করানো হয়েছে উনি পুলিশের একজন কনস্টেবল। তাঁকে দিয়ে জাতীয় দলের ফিটনেস টেস্ট করানো কতটা যৌক্তিক, সেটাও দেখা উচিত।’
গত স্বাধীনতা কাপে সেনাবাহিনীর বিপক্ষে ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন। এরপর ফেডারেশনে কোনো টুর্নামেন্ট হয়নি। ফিটনেস নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে, তখনই পিরোজপুরের নাজিরপুরে গিয়ে আট দলের আমন্ত্রণমূলক কাবাডি টুর্নামেন্টে খেলে এসেছেন ৪ সেপ্টেম্বর। সেখানেও স্থানীয় এক দলের হয়ে অংশ নিয়ে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন। ফিটনেসের কারণে বাদ পড়ায় আক্ষেপটা তাই বেশিই আরদুজ্জামানের, ‘আমার সঙ্গে ফেডারেশন অন্যায় আচরণ করছে। আমি যদি ফিট না থাকি তাহলে খেলছি কীভাবে?’
আবারও জাতীয় দলে ফেরার আকুতি এই খেলোয়াড়ের কণ্ঠে, ‘এক বেলা না খেয়ে থাকতে পারব, কিন্তু খেলা ছেড়ে এক মুহূর্তও থাকতে পারব না। আবারও আমি জাতীয় দলে ফিরতে চাই।’