ক্রিকেটের ৫ 'বিস্ময়বালক'

১৭ বছর বয়সে পেশাদার ক্রিকেট? জাতীয় দলের সঙ্গে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ, ঘড়ির কাঁটা ধরে অনুশীলন, টিম মিটিং, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা! যে বয়সে ছেলেকে একা কোথাও ছাড়তেও ভয় পান মা-বাবা, সে সময় পেশাদারির চাপ সামলানো! অবাক হওয়ার মতোই ব্যাপার। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ছিলেন, বয়সটা ১৭ হওয়ার আগেই যাঁরা পেশাদারির তপ্ত জমিনে পা রেখেছিলেন।

এই দলের সবচেয়ে বড় নাম শচীন টেন্ডুলকার। ১৯৮৯ সালে ১৬ বছর ২০৫ দিন বয়সে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল তাঁর। তবে ক্রিকেটে ‘বিস্ময়-বালক’ উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে পাকিস্তান। আমাদের বাংলাদেশও কিন্তু ‘বিস্ময়-বালকে’র ব্যাপারে খুব একটা পিছিয়ে নেই। টেস্ট মর্যাদার ১৭ বছরের মাথায় বাংলাদেশের হয়ে একাধিক ক্রিকেটারের বয়স ১৭ হওয়ার আগেই টেস্ট অভিষেক হয়েছে। মুশফিকুর রহিম, এনামুল হক জুনিয়র ও তালহা জুবায়েররা আছেন এই দলে। ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে ক্রিকেটের এমন বিস্ময়-বালকদের একটা তালিকা বানালে কেমন হয়!

হাসান রাজা
হাসান রাজা

হাসান রাজা
পাকিস্তানের হয়ে হাসান রাজার টেস্ট অভিষেক হয়েছিল মাত্র ১৪ বছর ২২৭ দিন বয়সে। ১৯৯৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যখন তাঁর টেস্ট অভিষেক হয়, সে সময় রাজাকে সবচেয়ে কম বয়সী অভিষিক্ত টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে দাবি করেছিল পাকিস্তান। তবে পরে ডাক্তারি পরীক্ষায় বয়স নিয়ে গরমিল দেখা দিলে পাকিস্তান সে দাবি প্রত্যাহার করে নেয়। যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে রাজা ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, সে অনুযায়ী খেলতে পারেননি তিনি। নিয়মিত সুযোগ পাননি। ১৯৯৬-২০০৫ সালের মধ্যে খেলেছেন মাত্র ৭ টেস্ট।

আকিব জাভেদ
আকিব জাভেদ

আকিব জাভেদ
শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেক হওয়ারও ৯ মাস আগে অভিষেক হয়েছিল আকিব জাভেদের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে নিজের অভিষেক টেস্টে ৩৪ ওভার বল করে ১০৩ রান দিয়ে উইকেট-শূন্য ছিলেন তিনি। টেস্টের রেকর্ড (৪৩ টেস্টে ৮২ উইকেট) খুব ভালো না হলেও ওয়ানডেতে (১৬৩ ম্যাচে ১৮২ উইকেট) বড় তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ম্যাচ-পাতানোর ডামাডোলে ক্যারিয়ারে যতি পড়ে আকিব জাভেদের। নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন আকিব। ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা তাঁকে কাটাতে হয়েছে ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিসের ছায়ায়।

এনামুল হক জুনিয়র
এনামুল হক জুনিয়র

এনামুল হক জুনিয়র
১৭তম জন্মদিনের আগেই টেস্ট অভিষেক। এই বাঁহাতি স্পিনারকে নিয়ে সবার প্রত্যাশা যে বাড়াবাড়ি ছিল না, সেটা প্রমাণ করেছেন দ্রুত। মাত্র ১৮ বছর ৪০ দিনে টেস্টে ১০ উইকেট পাওয়ার কীর্তি গড়েছেন। সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে ম্যাচে ১০ উইকেট পাওয়ার এ রেকর্ড এখনো টিকে আছে। কিন্তু ওয়াসিম আকরামের রেকর্ড ভেঙে যে প্রত্যাশার বেলুন ফুলিয়েছিলেন, সেটা বেশি দিন ওড়াতে পারেননি। জাতীয় দলে আসা-যাওয়া করেই ক্যারিয়ারের বাকি সময় কাটিয়েছেন।

খালিদ হাসান
খালিদ হাসান

খালিদ হাসান
নামটা অচেনা লাগছে? লাগারই কথা। ১৬ বছর ৩৫২ দিন বয়সে খালিদ হাসানের টেস্ট অভিষেক যে হয়েছিল ৬৩ বছর আগে। ১৯৫৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লাহোরে এই লেগ স্পিনার নটিংহাম টেস্টে নেমেই মুখোমুখি হয়েছিলেন বড় পরীক্ষার। ডেনিস কম্পটন সে টেস্টে খেলেছিলেন ২৭৮ রানের এক ইনিংস। খালিদ সে ম্যাচে কম্পটনের উইকেট পেয়েছিলেন, পেয়েছিলেন গডফ্রে ইভান্সের। তবে ২১ ওভার বল করে ১ মেডেনে ১১৬ রান দিয়ে ২ উইকেট—এই পরিসংখ্যানটি পছন্দ হয়নি পাকিস্তানি নির্বাচকদের। ১৬ বছর ৩৫৬ দিন বয়সেই শেষ হয়ে যায় খালিদের টেস্ট ক্যারিয়ার। অর্থাৎ একটি টেস্টেই খেলেছেন খালিদ। সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়া ক্রিকেটারও তিনি।

নাসিম-উল-গণি
নাসিম-উল-গণি

নাসিম-উল-গণি
১৬ বছর ২৪৮ দিন বয়সে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় নাসিম-উল-গণির। সেই টেস্টে হানিফ মোহাম্মদ খেলেছিলেন বিখ্যাত ৩৩৭ রানের ইনিংসটি। অভিষেকে উইকেট-শূন্য ছিলেন নাসিম। সিরিজটি অবশ্য তিনি শেষ করেছিলেন দুটি ৫ উইকেট-কীর্তি দিয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই সিরিজে ৩০ উইকেট পাওয়া এই বাঁহাতি স্পিনার অবশ্য এরপর উইকেট পাওয়া এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিলেন। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই সিরিজে ৩০ উইকেট পাওয়া বোলার পরের ২১ টেস্টে পেয়েছেন মাত্র ২২ উইকেট। নাসিম বিখ্যাত আর একটি কারণে। ১৯৬২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাটিংয়ে নেমে ১০১ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।