'দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই আমাদের'

রাসেল মাহমুদ জিমি
রাসেল মাহমুদ জিমি

আন্তবাহিনী হকি শুরু ২৬ নভেম্বর। নৌবাহিনীর হয়ে ওই টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি নিতে এখন মহাব্যস্ত রাসেল মাহমুদ জিমি। ওমানে দুটি ক্লাবে খেলার আমন্ত্রণ ছিল। গতকালই ওমান যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু নিজ দলের খেলার কারণে যাননি। সেসব নিয়ে গত সন্ধ্যায় মিরপুর কচুক্ষেত কলোনি মাঠে নৌবাহিনীর অনুশীলন শেষে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ হকি দলের অধিনায়ক। তবে মূল বিষয় থাকল ঢাকায় সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স। সঙ্গে দেশের হকির বর্তমান-ভবিষ্যৎ নিয়েও আশা-হতাশার কথা—

প্রশ্ন: ঘরের মাঠে এশিয়া কাপটা কেমন গেল?
রাসেল মাহমুদ জিমি: এশিয়া কাপে ষষ্ঠ হওয়ার লক্ষ্য পূরণ হয়েছে, এটা একটা তৃপ্তি। ষষ্ঠ হওয়ায় এখন আমরা অনেক সুবিধা পাব। সেটা কাজে লাগাতে পরিকল্পনা দরকার।

প্রশ্ন: কী চাইছেন আপনি? কী করলে ভালো হবে?
জিমি: প্রথম কথা, পরবর্তী এশিয়া কাপ এবং এশিয়ান গেমসে সরাসরি খেলব আমরা। তা ছাড়া এই প্রথম ছয় দলের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস ট্রফির টিকিটও পেয়েছি। আমার ক্যারিয়ারে এশীয় পর্যায়ে ষষ্ঠ হওয়া এই প্রথম। আগে সাত বা আটে থাকতাম। এখন ষষ্ঠ স্থান ধরে রেখে আরও ভালো অবস্থানে যেতে হবে আমাদের। এ জন্য চাই ভালো প্রস্তুতি।

প্রশ্ন: কিন্তু সামগ্রিকভাবে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ভালো খেলেনি। আপনারা নিজে কি খুশি?
জিমি: হ্যাঁ, মানছি, সামগ্রিকভাবে অনেক ভুল ছিল আমাদের। আরও ভালো করতে পারতাম। সেদিক থেকে আমি খুশি নই।

প্রশ্ন: সমস্যাটা আসলে কী ছিল?
জিমি: অনভিজ্ঞতার কারণে আমরা মাঠে সেরাটা দিতে পারিনি।

অনভিজ্ঞতার কথা বলবেন, নাকি সামর্থ্যই এটুকু?
জিমি: সামর্থ্য আছে। কিন্তু সেটির প্রয়োগ মাঠে দেখাতে পারিনি। আপনি দেখুন, গত চার বছরে আমরা ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে কয়টি ম্যাচ খেলেছি? একেবারেই আঙুলে গুনে বলতে হবে। অথচ ভারত অনেক ম্যাচ খেলে। তাদের স্থানীয় লিগও নিয়মিত হয়, অনুশীলন চলে সারা বছর। এভাবে সব দলই বছরব্যাপী খেলায় থাকে। আমাদের তো এটা নেই।

প্রশ্ন: আমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ওমান অষ্টম হলেও খুব ভালো খেলেছে। প্রতিটি ম্যাচেই লড়েছে এবং গোল করেছে। ওমানের সঙ্গে খেলা পড়লে বাংলাদেশ দল জিততে পারত না বলেই অনেকের বিশ্বাস। আপনি কী বলেন?

জিমি: ভাই, ওমানের সঙ্গে আমরা পারব না কেন? দু-একটা ম্যাচে অঘটন হতেই পারে। অনেক সময় ওরা দারুণ খেলে জিতে যায়। তবে পাঁচটা খেললে চারটা জেতার ক্ষমতা রাখি। একটা ম্যাচে অঘটন হতেই পারে।

প্রশ্ন: কিন্তু একসময় পিছিয়ে থেকেও ওমান এখন আপনাদের ছাড়িয়ে গেছে। এটা মানবেন তো?

জিমি: ওমান অনেক ম্যাচ খেলে। দেশের বাইরে যায়। পরিকল্পনা নিয়ে এগোয়। কিন্তু আমাদের তো একটি টুর্নামেন্টে ভালো খেলার পর আর পরিকল্পনা থাকে না।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলের পরবর্তী পরিকল্পনা কী, জানেন কিছু?

জিমি: কিছুই জানি না। দেখুন, আমাদের অনূর্ধ্ব-১৮ দল ভারতকে হারাল। ঢাকায় এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টের ফাইনালে সেই ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হলো। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৮ দল অনুশীলনে আছে, ম্যাচ খেলে। আমাদের অনূর্ধ্ব-১৮ দল কোথায় কেউ কি জানে! এভাবে তো উন্নতি হবে না। ম্যাচ খেলতে হবে, অনুশীলনে থাকতে হবে।

প্রশ্ন: আপনি নিজে এই টুর্নামেন্টে ক্যারিয়ারে শততম ম্যাচ খেললেন। বলা হয়, জিমি খেললে বাংলাদেশ খেলে। অথচ আপনার সেই ঝলকটা মিস করেছে সবাই। এটা কেন?

জিমি: দল ভালো খেললে ব্যক্তি পারফরম্যান্সও ভালো হয়। এই একটা কথাতেই সব বুঝে নিন। আমি বারবারই ওই একটা কথা বলব—প্রতিটি দলেরই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে। আমাদের নেই। জাপানের দিকে তাকান, পরবর্তী অলিম্পিক টার্গেট করেছে ওরা। চীনও তা-ই।

প্রশ্ন: চীনের বিপক্ষে শেষ কোয়ার্টার ছাড়া বাকি চার ম্যাচে আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি বাংলাদেশ দলকে। এটা ভাবলে খারাপ লাগে না?

জিমি: খারাপ লাগে। তবে আরও কম গোল হজম করলে ভালো হতো। যা-ই হোক, ভুল থেকে আমরা শিক্ষা নেব।

প্রশ্ন: চীনের সঙ্গে শুটআউটে শেষ হিটটি নিলেন আপনি। গোটা টুর্নামেন্টে তখনই জিমিকে জিমির মতো লেগেছে।

জিমি: ওটাই এই টুর্নামেন্টে আমার সেরা মুহূর্ত। আমি সাধারণ পেনাল্টি স্ট্রোক নিই না। তবে শুটআউটে নিই। চাপের মধ্যে ভালো খেলি, চ্যালেঞ্জ নিই। সেদিনও নিয়েছি। হিটটা নেওয়ার সময় ভাবছিলাম, গোটা দেশ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নার্ভাস হইনি। ভালো লাগছে এই ভেবে যে, ২০১৩ সালে চীনের বিপক্ষে ম্যাচসেরা ছিলাম, এবারও
তা-ই।

প্রশ্ন: ঢাকায় পঁচাশির এশিয়া কাপের আমেজটা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল এবার। আনা গেছে কি?

জিমি: পঁচাশিতে বাংলাদেশ দল ষষ্ঠ হয়, আমরাও ষষ্ঠ হয়েছি। ফল তো খারাপ না। তখন ঘাসের মাঠে ভালো খেলেছে দল। আমরা টার্ফে খেলেছি। তা ছাড়া দুটি তো দুই সময়।

প্রশ্ন: যা-ই হোক, এশিয়া কাপ শেষ। এখন কী করবেন?

জিমি: এখন দ্রুত লিগ চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয়, গত ১৪ বছরে মাত্র সাতটি লিগ পেয়েছি আমি! প্রথম তিনটি আবাহনীতে, পরের চারটি মোহামেডানে। সর্বশেষ লিগ হয়েছে দেড় বছর আগে। আর দুই বছর না হলে ব্যাপারটা অলিম্পিক গেমসের মতো হয়ে যাবে (হাসি)। ঢাকার বাইরে হাতে গোনা যে দু-চারটি জেলায় লিগ হয়, সেগুলোও অনিয়মিত। এসব ভাবলে কষ্ট বাড়ে।

প্রশ্ন: তাহলে হকির ভবিষ্যৎ কী?

জিমি: সম্ভাবনা আছে আমাদের। কিন্তু ঘরোয়া লিগ চাই। ঢাকার বাইরে খেলা চাই। এগুলো নিয়মিত হলে আমাদের হকি এগিয়ে যাবে বলে আশা করি।