বিপিএলে কেমন করলেন বাংলাদেশের তারকারা

চোখ দেশের তারকাদের ওপরেই ছিল বেশি।
চোখ দেশের তারকাদের ওপরেই ছিল বেশি।

ক্রিস গেইলের ব্যাটের ঝড়ে শেষ হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসর। বিদেশি খেলোয়াড়েরা এই টুর্নামেন্টের বড় আকর্ষণ হলেও ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রে কিন্তু ছিলেন দেশি তারকারাই। আসুন, দেখে নেওয়া যাক এবারের বিপিএলে বাংলাদেশি তারকা ক্রিকেটাররা কতটা আলো ছড়ালেন।

সাকিব আল হাসান

টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বল হাতে বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের এবারের বিপিএল দুর্দান্তই গেছে। ১৩ ম্যাচে ২২ উইকেট পেয়েছেন। আসরের সর্বোচ্চ উইকেট তাঁরই। গড়টাও দুর্দান্ত—১৩.২২। একটি ৫ উইকেট–কীর্তিতে তিনি ‘বোলার’ সাকিবের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করেছেন দারুণভাবেই। কিন্তু ব্যাট হাতে সেভাবে প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি তিনি। ১৩ ম্যাচে ২৩.৪৪ গড়ে ২১১ রান তাঁর। ব্যাটিংয়ে বোলিংয়ের মতোই নিজের পারফরম্যান্সটাকে আরও উন্নত করার যথেষ্ট সুযোগ ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারের।

মাশরাফি বিন মুর্তজা
গত এপ্রিলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এবারের বিপিএলটা তাই মাশরাফির জন্য অন্য কিছু। নিজেকে প্রমাণ করার কিছু না থাকলেও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে তাঁর এখান থেকে অনেক কিছুই তুলে নেওয়ার ছিল। জার্সির পেছনে ‘শূন্য’ সংখ্যাটি লাগিয়ে সেটি তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রথমেই। রংপুর রাইডার্সকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বিপিএলে নিজের চতুর্থ ট্রফিটি ঘরে তুলেছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ী খেলোয়াড় হিসেবে বসেছেন রোহিত শর্মা ও ইমরান নাজিরের পাশে। বল হাতে যা করেছেন, তা অনেকের চেয়ে ভালো—১৪ ম্যাচে ১৫ উইকেট। ৬.৭৪ ইকোনমি রেট বলছে, রান দেওয়াতে ছিলেন কৃপণ। ‘ব্যাটসম্যান’ মাশরাফিও কয়েকটি ক্যামিও ইনিংসে দেখিয়েছেন নিজের সামর্থ্য।

তামিম ইকবাল
এবারের বিপিএলে ব্যাট হাতে সবচেয়ে সফল বাংলাদেশি ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। চোটের কারণে প্রথম দিকে না থাকলেও পরের ১০ ম্যাচ খেলে ৩৩২ রান করেছেন। গড় ৩৬.৮৮। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৬৪। তাঁর দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে কোয়ালিফায়ারে উঠলেও তামিমের দুর্ভাগ্য, বৃষ্টির কারণে ভাগ্যবিপর্যয় ঘটে তাদের। বৃষ্টির কারণে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘দুই দিনে’ শেষ হওয়া কোয়ালিফায়ারে রংপুরের কাছে হেরে শিরোপার কাছে যাওয়া হয়নি কুমিল্লার। এ আসরে সবচেয়ে বেশি চার (৪৫টি) এসেছে তামিমের ব্যাটে।

মুশফিকুর রহিম
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজের খারাপ সময় গেছে মুশফিকুর রহিমের। সেই রেশ বিপিএলেও কাটাতে পারেননি সদ্যই টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব হারানো মুশফিকুর রহিম। রাজশাহী কিংসের হয়ে ব্যর্থ একটা মৌসুমই কাটালেন। ১১ ইনিংসে তাঁর রান মাত্র ১৮৫। ফিফটি একটি। বেশির ভাগ ম্যাচেই ব্যাট কথা বলেনি তাঁর। গড় ১৮.৫০। তাঁর দল রাজশাহী কিংসও ভালো করেনি। সব মিলিয়ে বিপিএলের এবারের আসরটি দ্রুতই ভুলে যেতে চাইবেন মুশফিক।

মাহমুদউল্লাহ
বিপিএলে দেশি তারকাদের মধ্যে ওপরের দিকেই আছেন মাহমুদউল্লাহ। ব্যাট হাতে ১২ ম্যাচে ৩১২ রান তাঁর। প্রতিটি ম্যাচেই খুলনা টাইটানসের অধিনায়ক মাঝের ওভারগুলোতে ব্যাট চালিয়েছেন দুর্দান্ত। টুর্নামেন্টে দুটি ফিফটি করেছেন। তবে টুর্নামেন্টটা আরও ভালো হতে পারত তাঁর দলের। খুলনা বিপিএলের এলিমিনেটর ম্যাচে হেরে যায় ক্রিস গেইলের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের কাছেই। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও খুব খারাপ করেননি মাহমুদউল্লাহ। এবারের বিপিএলে আলাদা করে নজর কেড়েছে তাঁর ঠান্ডা মাথার নেতৃত্ব। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে সবচেয়ে ধারাবাহিক দল কিন্তু ছিল খুলনাই। টুর্নামেন্টের নবম সর্বোচ্চ রান এসেছে তাঁর ব্যাটে।

নাসির হোসেন
সিলেট সিক্সারসের অধিনায়ক নাসিরের শুরুটা কিন্তু দারুণ হয়েছিল। তবে ব্যাট নয়, বল হাতে। প্রথম ম্যাচেই বোলিংয়ের জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন। এরপর থেকে নিজ দলের মতোই রং হারিয়েছেন। ১১ ম্যাচে ১২ উইকেট খুব মন্দ নয়। তবে ব্যাট হাতে খুব বেশি সুযোগ পাননি নাসির। ১১টি ম্যাচ খেললেও ব্যাট করতে নেমেছেন ৮টি ম্যাচে। ২ ম্যাচে অপরাজিত থেকে করেছেন ১৫৮ রান। ফিফটি পেয়েছেন একটি।

সাব্বির রহমান
টি-টোয়েন্টি সংস্করণে সাব্বির রহমানকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এবারের বিপিএলে নামের প্রতি সেভাবে সুবিচার করতে পারেননি। ১১ ম্যাচে ১০ ইনিংসে ব্যাটিং করে ২১১ রান করেছেন। গড় ২৩.৪৪। আইকন খেলোয়াড় হিসেবে সিলেট সিক্সারসের যে প্রত্যাশা তাঁর ওপর ছিল, সেটি যে পূরণ হয়নি, তা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।

সৌম্য সরকার
বিপিএলে বাংলাদেশি তারকাদের মধ্যে ফ্লপ সৌম্য সরকার। চিটাগং ভাইকিংসের এই ওপেনার বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলোতে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু বিপিএলে যে-ই কে সে-ই। ১১ ম্যাচ খেলে ১১ ইনিংসে মাত্র ১৬৯ রান তাঁর। গড় ১৫.৩৬।

তাসকিন আহমেদ
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম স্ট্রাইক বোলার তাসকিন ১১ ম্যাচে তুলে নিয়েছেন ১৪ উইকেট। গড় ২৩.৯২। তবে হতাশার জায়গাটা তাঁর ইকোনমি রেট—৯.৩৪ সংখ্যাটা যেকোনো বোলারকেই হতাশায় ডোবাতে পারে। এবারের বিপিএলটা চিটাগং ভাইকিংসের তাসকিনকে খুব বেশি কিছু দেয়নি—এটা বলে দেওয়াই যায়।

মোস্তাফিজুর রহমান
গত মৌসুমে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে পুরো বিপিএলই বসে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। চোটের কারণে খেলতে পারেননি। এবারও চোট হানা দিয়েছিল। মিস করেছেন বেশির ভাগ ম্যাচই। রাজশাহী কিংসের হয়ে মাত্র ৫টি ম্যাচ খেলে উইকেট ৪টি। সেরা বোলিং ১৮ রানে ২ উইকেট নেওয়া। তবে টুর্নামেন্টে তাঁর ৮.৯০ ইকোনমি রেটটা চিন্তার কারণ হবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে। মোস্তাফিজ কখনো কখনো পুরোনো রূপে ফেরার আভাস দেন। কিন্তু শীতের সকালের কুয়াশার মতো তা উবে যায় দুপুর নাগাদ!

ইমরুল কায়েস
দেশি তারকাদের মধ্যে এবারের বিপিএলে মোটামুটি ধারাবাহিকই ছিলেন ইমরুল কায়েস। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের এই ব্যাটসম্যান দলের সাফল্যে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। ১৪ ম্যাচে তাঁর মোট রান ২৯৯। কোনো ফিফটি পাননি অবশ্য। সর্বোচ্চ ৪৭। গড় ২৭.১৮, টি-টোয়েন্টি বিবেচনায় মন্দ নয়। এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ রানের মালিক সেরা দশের তালিকাটা তাঁকে দিয়েই শেষ হয়েছে।

মুমিনুল হক
টেস্ট ব্যাটসম্যান স্পেশালিস্ট তকমা দিয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে তাঁকে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গতবার বেশ ভালো শুরু করেছিলেন। এবারের বিপিএলেও দেখা গেছে নিজেকে ছোট সংস্করণেও প্রমাণের তাগিদ। শুরুর দিকে দেশি তারকাদের মধ্যে তাঁর ব্যাটই কথা বলছিল বেশি। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৪৪ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরাও হয়েছেন। তবে তাঁর দল রাজশাহী কিংসের মতো মুমিনুলও পথ হারিয়েছেন। ২০.৯০ গড়ে ২৩০ রান করেছেন।