উকিল বাবা মাশরাফি, স্মিথদের নাকে 'রুমাল'

তাসকিনের বিয়েতে মাশরাফি পরিবার। ছবি: সংগৃহীত
তাসকিনের বিয়েতে মাশরাফি পরিবার। ছবি: সংগৃহীত

দেখতে দেখতে ২০১৭ সাল চলে এসেছে একেবারে শেষ দিকে। বছরটা কেমন গেল, কদিন ধরে চলছে সেটিরই সালতামামি। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স কিংবা বিসিবির কোনো বিতর্কিত-আলোচিত ঘটনা নয়, এই বর্ষপরিক্রমা সাজানো হয়েছে দেশের ক্রিকেটের কিছু মজার, ব্যতিক্রম কিংবা আবেগস্পর্শী ঘটনা নিয়ে—

উকিল বাবা মাশরাফি
৩০ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে ঢাকায় এসে পৌঁছান সকালে। মাঝে কয়েক ঘণ্টার ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়েন তাসকিন আহমেদ। কনে সৈয়দা রাবেয়া নাঈমা, তাঁর দীর্ঘদিনের প্রেমিকা। গায়েহলুদ, আংটিবদল, বিয়ে—আকস্মিকভাবেই ঘটে গেছে সবকিছু। চারদিকে বেশ আলোড়ন তুলেছিল তাসকিনের বিয়েটা। জাতীয় দলের সতীর্থদের মধ্যে তাঁর বিয়েতে এসেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবাল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাসকিনের বিয়েতে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের ভূমিকা ছিল উকিল বাবার!

তামিমের ফাঁড়া
ঘটনাটা ১০ আগস্টের। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চলছিল একটি তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ। দ্বিতীয় দিন ২৯ রান করে রানআউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে তামিম করে বসেন এক কাণ্ড। ড্রেসিংরুমের সামনের বারান্দায় ওঠার সময় হতাশা থেকেই ব্যাট দিয়ে বাড়ি দেন দরজার কাচে। ঢোকার জন্য কাচের দরজায় হাত দিয়ে ধাক্কা দিতেই সেটি ঝনঝন করে ভেঙে পড়ে। ভারসাম্য হারিয়ে তামিম পড়ে যান কাচের ওপরই। মাথায় হেলমেট আর পায়ে প্যাড থাকায় বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচলেও ভাঙা কাচের টুকরো পেটে ঢোকায় চারটি সেলাই পড়ে সেখানে।

রুবেলের নামবিভ্রাট
অপকর্ম করেছেন এক রুবেল হোসেন। সেটির জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয় ক্রিকেটার রুবেল হোসেনকে! দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাঁর। ১৬ সেপ্টেম্বর দলের সঙ্গেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার কথা ছিল পেসার রুবেলের। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ইমিগ্রেশন বিভাগে রুবেল হোসেন নামের আরেক বাংলাদেশি কালো তালিকাভুক্ত হয়ে থাকাতেই হয় বিপত্তি। ইমিগ্রেশন থেকে ছাড়পত্র না দেওয়ায় এমিরেটস এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিমানে তুলতে অস্বীকৃতি জানায়। দলের সবাই চলে গেলেও রুবেল ফিরে আসেন বাসায়। বিসিবির তৎপরতায় সমাধান হয় সমস্যার। ২১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় রওনা দেন বাংলাদেশ দলের এই পেসার।

স্মিথদের নাকে ‘রুমাল’
অনেক জল ঘোলার পর গত আগস্টে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসে অস্ট্রেলিয়া। সফরের শুরুতে নতুন বিপত্তি প্রস্তুতি ম্যাচের মাঠ নিয়ে। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ২২ ও ২৩ আগস্ট দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচটা হওয়ার কথা ছিল ফতুল্লায়। বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় ফতুল্লায় আউটার স্টেডিয়ামে এক-দেড় ফুট পচা ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ও কিছু জায়গায় জমে যায় পানি। তা থেকে স্টেডিয়াম ও আশপাশের এলাকায় ছড়ি পড়ে চরম দুর্গন্ধ। বিসিবির অনুরোধে ২১ আগস্ট ফতুল্লা স্টেডিয়াম চূড়ান্ত পরিদর্শনে গিয়ে দুর্গন্ধ শুঁকে এসে স্টিভেন স্মিথ-ড্যারেন ল্যামেন জানিয়ে দেন, প্রস্তুতি ম্যাচই খেলবেন না তাঁরা!

মাঠ উপযুক্ত না থাকায় ফতুল্লায় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে রাজি হয়নি অস্ট্রেলিয়া দল। সৌজন্য ছবি
মাঠ উপযুক্ত না থাকায় ফতুল্লায় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে রাজি হয়নি অস্ট্রেলিয়া দল। সৌজন্য ছবি

অস্ট্রেলিয়ার টিম বাসে ঢিল
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনের খেলা শেষে হোটেলে ফেরার সময় রাস্তায় ঢিল পড়ে অস্ট্রেলিয়ার টিম বাসে। এ নিয়ে ভীষণ হইচই, তোলপাড় শুরু হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে। গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। তাদের তদন্তে জানা যায়, সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে যেখানে ওই ঢিলটি চলন্ত বাসে এসে লাগে, সেটির সূত্রপাত একটি ক্রিকেট ম্যাচ থেকেই! ঢিলটি বাসে গিয়ে লেগেছে নিছকই ঘটনাচক্রে। টিম বাস ওই ঢিলের লক্ষ্য ছিল না। রাস্তার পাশে একটি মাঠে টেপ টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলছিল কিছু শিশু-কিশোর। খেলা নিয়েই তাদের মধ্যে গন্ডগোল লাগে। শুরু হয় পাথর ছোড়াছুড়ি। এরই একটি পাথর গিয়ে লাগে অস্ট্রেলিয়ার টিম বাসে।

তামিম কেন পাঁচে
এর আগে খেলা ৫১ টেস্টের সব কটিতেই করেছেন ওপেন। সব সময়ই খেলেছেন ইনিংসে প্রথম বল। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতেও তা-ই। অথচ ২৯ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পচেফস্ট্রুম টেস্টের প্রথম ইনিংসে তামিম ব্যাটিং করতে নামলেন পাঁচ নম্বরে। পচেফস্ট্রুম টেস্টে দ্বিতীয় দিনের চা-বিরতিতে ইনিংস ঘোষণা করে প্রোটিয়ারা। দিনের দ্বিতীয় সেশনে চা-বিরতির আগে ৪৯ মিনিট ফিল্ডিং করেননি তামিম, ছিলেন মাঠের বাইরে। চা-বিরতির পরই শুরু হওয়া বাংলাদেশ ইনিংসের ৪৯ মিনিট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাটিংয়ের সুযোগ ছিল না তামিমের। ইমরুল কায়েস, লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম আউট হয়ে যাওয়ার পর ব্যাট করতে নামার সুযোগ পান তামিম।

সংবাদ সম্মেলনে আবেগতাড়িত মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে আবেগতাড়িত মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো

মুশফিকের কান্না
১৫ জুলাই দুপুরে আকস্মিকভাবেই সংবাদমাধ্যমের সামনে এলেন মুশফিকুর রহিম। বিপর্যস্ত চেহারা, মুখ থমথমে। বিসিবির তখনকার অন্যতম পরিচালক ও বিপিএলের দল বরিশাল বুলসের স্বত্বাধিকারী এম এ আওয়াল চৌধুরী একটি বেসরকারি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে শুধু হতাশই হননি, ভীষণ অপমানিত বোধ করেছেন মুশফিক। একজন ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্বাধিকারীর এমন মন্তব্যে তিনি এতটাই মর্মাহত, সংবাদ সম্মেলনে নিজের কথাও ঠিকমতো শেষ করতে পারেননি। কাঁদো কাঁদো গলায় বিষয়টা ছেড়ে দেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের ওপর।

সাব্বিরের কাণ্ড
এই ঘটনা ২১ ডিসেম্বর, রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ডে রাজশাহী-ঢাকা মহানগরের ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করছিল ঢাকা মহানগর। সাব্বির খেলেছেন রাজশাহীর হয়ে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, লাঞ্চের ঘণ্টা খানেক পর ড্রেসিংরুম থেকে নেমে সাব্বির যাচ্ছিলেন মাঠের দিকে। গ্যালারি থেকে তাঁকে উদ্দেশ্য করে কেউ একজন মুখ দিয়ে বাজে শব্দ করে। খানিক পরে খেলা চলার সময়ই পরিচিত কাউকে দিয়ে ১০-১২ বছর বয়সী ওই কিশোর দর্শককে সাইটস্ক্রিনের পেছনে এনে মারধর করেন সাব্বির। বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শেখ সোহেল জানিয়েছেন, এ ঘটনায় বড় শাস্তিই পেতে পারেন সাব্বির।