রয়ের রেকর্ডে চুরমার অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড

রেকর্ড গড়ে দলকে জেতালেন জেসন রয়। ছবি: এএফপি
রেকর্ড গড়ে দলকে জেতালেন জেসন রয়। ছবি: এএফপি

এমসিজিতে সিরিজের প্রথম ওয়ানডের নায়ক শেষ পর্যন্ত জেসন রয়। অস্ট্রেলিয়ার অ্যারন ফিঞ্চ নায়ক হতে পারতেন, মঞ্চ প্রস্তুত ছিল, কিন্তু ইংলিশ রয়ই সব আলো কেড়ে নিলেন। তাঁর ১৮০ রানের ইনিংসেই অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। অথচ টসে হেরে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়া ফিঞ্চের সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ৩০৪ রান গড়েছিল।

এই ম্যাচের আগে বিগব্যাশে রীতিমতো রানখরায় ভুগছিলেন রয়। ৬ ম্যাচে ৬২ রান করা রয় আজ মেলবোর্নে ঝড় তুললেন ১৮০ রানের। এ কারণেই অস্ট্রেলিয়ার ৩০৪ রানের এত বড় সংগ্রহটা শেষ পর্যন্ত মামুলি হয়ে গেল। ইংল্যান্ডের জন্য এটি ছিল বেশ বড় বোঝাই। বিদেশের মাটিতে এর আগে ইংলিশরা সবচেয়ে বড় রান তাড়া করেছিল আজ থেকে ১৮ বছর আগে। ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে করাচিতে ৩০৫ রান করে জয় পেয়েছিল তারা। ১৮ বছর যা করা যায়নি, আজ তারা তা করেছে স্রেফ রয়ের বিধ্বংসী ব্যাটের ওপর ভর করে। এটি মেলবোর্নের মাঠে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও। ২০১৬ সালে ভারতের বিপক্ষে ২৯৬ রান তুলে রেকর্ডটি গড়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

রয়ের ১৮০ রান এসেছে ১৫১ বলে। ১৬টি চার ও ৫টি ছয় ছিল তাঁর ইনিংসে। ৩২ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন, নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছেন। তাঁর আগের ফিফটির রেকর্ডটি ছিল ৩৪ বলের। তবে রয়ের পাশাপাশি জো রুটের নাম না নিলেই নয়। তিনি শেষ অবধি অপরাজিত ছিলেন ৯১ রান করে। খেলেছেন ১১০ বল। রয়ের ঝড়ের পাশে ধীরস্থির ব্যাটে মেরেছেন ৫টি চার।

৩০৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। মাত্র ৪.২ ওভারেই পঞ্চাশের কোটা পেরিয়েছিল তারা। বড় রান তাড়া করতে শুরুটা যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আবারও প্রমাণিত ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে। ২০০২ সালের পর এটি ছিল কোনো ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের সেরা শুরু।

ইংল্যান্ডের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসটি এখন রয়ের। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ট্রেন্টব্রিজে ১৭১ রান করেছিলেন অ্যালেক্স হেলস—দেড় বছর ধরে এটিই ছিল ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।

জনি বেয়ারস্টো আর রয়ের ওপেনিং জুটিটা স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। ৫৩ রানের মাথায় বেয়ারস্টো মিচেল স্টার্কের বলে টিম পেইনের শিকার হলে ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। হেলসও ৪ রানে আউট হলে বেশ বিপদে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের সংগ্রহ তখন ৫.৫ ওভারে ৬০, জয়ের আশা তখন দূরে সরে যাচ্ছে ইংলিশদের। কিন্তু রুটকে সঙ্গে নিয়ে দলকে পথ দেখালেন রয়—২২১ রানের জুটি গড়লেন অস্ট্রেলীয় বোলারদের নাকের জল চোখের জল এক করে। এই জুটিতে রয়ের অবদান ১৪০, রুটের ৭৫। তবে দলকে জয়ের দোরগোড়ায় (২৮১/৩) রেখে রয় বিদায় নেন। অধিনায়ক এউইন মরগানও (২৮৮/৪) তাঁকে অনুসরণ করেন খুব দ্রুত। কিন্তু রুট তাঁর আত্মবিশ্বাসী ব্যাটে মঈন আলীকে সঙ্গে নিয়ে ৪৮.৫ ওভারে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে।

এর আগে অস্ট্রেলীয় ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ তাঁর প্রিয় প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জ্বলে উঠেছিলেন। এটি ইংল্যান্ডের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফিঞ্চের সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক। আজকের ১০৭ রানের ইনিংসটির আগের দুটি ইনিংস ১২১, ১৩৫। ফিঞ্চের কাছে ইংল্যান্ড কতটা প্রিয় প্রতিপক্ষ, সেটি একটি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট—ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪টি ইনিংসে ৫টি সেঞ্চুরি পেয়েছেন ফিঞ্চ। ৯১ ম্যাচে তাঁর সেঞ্চুরি ওই ৫টিই। তাঁর ১০৭ রান এসেছে ১১৯ বলে, ১০টি চার ও ৩টি ছক্কায়। ফিঞ্চ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান মিচেল মার্শ আর মার্কাস স্টয়নিস। মার্শ ৬৮ বলে করেছেন ৫০। আর স্টয়নিসের ফিফটিটি ঝোড়োগতির—৪০ বলে ৬০।

বোলারদের জন্য আজকের দিনটি দুঃস্বপ্নেরই বলা যায়। এটি প্রযোজ্য দুই দলের বোলারদের জন্যই। ইংল্যান্ডের জন্য ৭১ রানে ৩ উইকেট পেয়েছেন লিয়াম প্লাংকেট। ক্রিস ওকস, মার্ক উড ও মঈন আলী। ২টি উইকেট নিয়েছেন আদিল রশিদ। অস্ট্রেলিয়ার ২টি করে উইকেট মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। একটি উইকেট পেয়েছেন মার্কাস স্টয়নিস।