'সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরির চেয়ে অসুস্থ মানুষের জন্য প্রার্থনা করার তুলনা নেই'

>
টাটেন্ডা টাইবু
টাটেন্ডা টাইবু
জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ ও স্বর্ণযুগ-পরবর্তী সময়ের মধ্যে সেতুবন্ধ বলতে পারেন তাঁকে। দলটার দুঃসময়ের কান্ডারি ছিলেন, ছিলেন ছোট দলের বড় তারকা। মাঝে হঠাৎই ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে গিয়ে ধর্মযাজকের জীবন। বছর দেড়েক হলো টাটেন্ডা টাইবু আবার ফিরেছেন ক্রিকেটে। এবার প্রধান নির্বাচকের ভূমিকায়। ত্রিদেশীয় সিরিজ উপলক্ষে ঢাকায় এসে জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক কথা বলেছেন তাঁর একাল-সেকাল নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারেক মাহমুদ

ভালোবাসায় বাংলাদেশ

এখানে এসে দারুণ লাগছে। বাংলাদেশে আসার পর দেশের অনেক বন্ধু আমাকে বলেছে, ‘বাংলাদেশ তো তোমার দ্বিতীয় বাড়ি।’ ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশেই আমার বন্ধু বেশি। বন্ধুত্ব ছাপিয়ে এখানে পরিবারের আমেজটাও পাই। সিটি ক্লাবে খেলার পর থেকে রিয়াজউদ্দিন আল-মামুন (ইপিলিয়ন গ্রুপের কর্ণধার ও বিসিবির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক) আমার ভাইয়ের মতো। বিমানবন্দরে নেমে সবার আগে তাঁকেই ফোন করি।

বাংলাদেশে খেলার স্মৃতি
যারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, তাদের বিপক্ষে খেলাটাই বেশি উপভোগ্য। আমার কাছে যেমন রফিক ছিল দারুণ চ্যালেঞ্জিং। ওর বিপক্ষে খেলা আমি উপভোগ করতাম। আমার চরিত্রটাই এমন ছিল যে, সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষকেই চ্যালেঞ্জ জানাতে পছন্দ করতাম। তখন রফিকই ছিল সবচেয়ে কঠিন বোলার। কাল (পরশু) হাবিবুল বাশারের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলছিলাম। রফিক, আশরাফুল, খালেদ মাসুদসহ তখনকার ক্রিকেটাররা মিলে যদি একসঙ্গে কিছু সময় কাটানো যায়।
ওই সময় মাশরাফি তরুণ ছিল। তবে বোঝা যেত ছেলেটা অন্য ধাতুতে গড়া। আজ যে ও সফল অধিনায়ক, তাতে আমি অবাক নই। ক্রিকেটে সেঞ্চুরি বা ভালো পারফরম্যান্সই সবকিছু নয়। আমাকে বেশি টানে ওই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো। চ্যালেঞ্জ জয়ের পর যখন প্রতিপক্ষ করমর্দন করে, পিঠ চাপড়ে দেয়, একের প্রতি অন্যের শ্রদ্ধাটা বেড়ে যায়। বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

ধর্মযাজকের জীবন
চার্চে আমি ছিলাম ট্রাস্টি। পাশাপাশি অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য প্রার্থনা করতাম। ট্রাস্টি হিসেবে চার্চের সব সম্পদের দেখভালও করতাম। এখনো আমি অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য প্রার্থনা করি। তবে ট্রাস্টির কাজ আর করি না। আমি আসলে নতুন কিছু ভাবার, নতুন পথ খোঁজার চেষ্টা করি। চার্চ ভিন্ন এক জগৎ। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া কিছু ব্যাপার সেখানে আছে। বেশির ভাগ সময়ই এমন রোগী আসে, যাদের চিকিৎসকেরা আর কোনো আশা দেখাতে পারেন না। স্রষ্টা যদি কিছু করতে পারেন। প্রার্থনা করার পর তারা যখন সুস্থ হয়ে ওঠে, সেই আনন্দটা বলে বোঝানো যাবে না। আমি এখনো ক্রিকেট ভালোবাসি। কিন্তু ভালো লাগার তুলনা করতে বললে বলব, চার্চের অভিজ্ঞতা জীবন বদলে দেওয়ার মতোই। আমি সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করতে পারি, কিন্তু একজন অসুস্থ মানুষের জন্য প্রার্থনা করার পর তিনি সুস্থ হলে সেই ভালো লাগার তুলনা নেই।

যে কারণে ক্রিকেট ছাড়া
ক্রিকেট থেকে বছর চারেক দূরে ছিলাম। খেলাটার সঙ্গে সম্পর্ক ছিলই না বলতে গেলে। আসলে আমার ধরনটাই হলো, যখন যা করি সবটুকু উজাড় করে দিই। খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই। এমন একটা ম্যাচ নেই, যেখানে আমি শতভাগ দিইনি। নির্বাচক হিসেবে ফিরেও শতভাগ দেব। পালিয়ে যাব না। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট এখনো অনেকটা দোদুল্যমান। চেষ্টা করছি পরিস্থিতি বদলাতে।

আবার কেন ফেরা

চার্চের ট্রাস্টির দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায় হাতে অন্য কিছু করার সময় ছিল। আমাদের চেয়ারম্যানও অনুরোধ করলেন ক্রিকেটে ফিরতে। বছরখানেক ধরে তাঁর অনুরোধ উপেক্ষা করার পর শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছি। ট্রাস্টি থাকার সময় সেটা সম্ভব ছিল না। আমি তাহলে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম না। পুরোটা না দিতে পারলে আমি কোনো কাজ করি না। ক্রিকেটে ফেরার আরেকটি কারণ বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ। তাঁর ব্যক্তিগত অনুরোধ ছিল। কারও ব্যক্তিগত অনুরোধ ফেলা উচিত নয়।

টাটেন্ডা টাইবু
টাটেন্ডা টাইবু

ক্যারিয়ার দ্রুত শেষ হওয়া
যেখানেই যাই, সবাই বলে, ‘তুমি তো এখনো দারুণ ফিট। চাইলেই খেলতে পারো।’ কিন্তু আমার নিজের তো বিশ্বাস থাকতে হবে যে, আমি শতভাগ দিতে পারব। সত্যি বলতে, আবার খেলার ব্যাপারটা নিয়ে গভীরভাবে ভাবিইনি।

টাটেন্ডা টাইবু এখন
নির্বাচক হওয়ার পর আমি জাতীয় দলে নেওয়া যায়, এমন সব সম্ভাব্য ক্রিকেটারের তালিকা নিলাম। দেখলাম, খেলোয়াড় খুব কম। তখন চিন্তা করি, কীভাবে আরও ক্রিকেটার পেতে পারি। আমার মানসিকতা যেমন ছিল, তেমন ক্রিকেটার।
সেই ধারণা থেকেই একটা একাডেমি গড়ে তুলি। আমি ক্রিকেট খেলেছি হৃদয় দিয়ে। সে জন্যই ভেবেছি, যদি এমন ক্রিকেটার বের করতে পারি, যারা হৃদয় দিয়ে খেলবে। একাডেমি করার একটি অন্যতম কারণ, আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে ওপরে ওঠার জন্য কোনো হাইপারফরম্যান্স পথ নেই। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ভালো করলেও জাতীয় দলে আসার ঠিক পথটা পায় না। একাডেমির জন্য আমি ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী ছেলেদের টার্গেট করি। ওদের ছয় মাসের জন্য ইংল্যান্ডে নিয়ে যাচ্ছি। এই ছয় মাসে ওরা অন্তত ৫০টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে।

জিম্বাবুয়ের স্বর্ণযুগের সাক্ষী
অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নেতৃত্বে এবং তাঁর সঙ্গে খেলাটা আমার জন্য বিরাট গৌরবের ছিল। দুজনই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ছিলাম, একসঙ্গে অনেক অনুশীলন করেছি। অনেক কিছু শিখেছি তাঁর কাছে। আমিও বর্তমান ক্রিকেটারদের সেসব শেখাতে চেষ্টা করছি।