লঙ্কান ক্রিকেটে চমকে দেওয়া প্রযুক্তি 'মস্তিষ্ক কেন্দ্র'!

>
শ্রীলঙ্কায় স্কুল ক্রিকেটই এত জমজমাট! ছবি: শামসুল হক
শ্রীলঙ্কায় স্কুল ক্রিকেটই এত জমজমাট! ছবি: শামসুল হক
• শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে ইতিহাসের পাশে আছে আধুনিক প্রযুক্তিও। সফটওয়্যারটির নাম ‘ব্রেন সেন্টার’
• প্রত্যেক খেলোয়াড়ের আলাদা ‘অ্যাকাউন্ট’ থাকছে, যার মাধ্যমে কোচ-খেলোয়াড় সবাই সব তথ্য পেয়ে যাবেন
• প্রায় ৭৫ হাজার ডলার খরচ হয়েছে ‘ব্রেন সেন্টার’ নামের প্রযুক্তিটির পেছনে

‘অজুহাতের সংস্কৃতি আর নয়।’ প্রযুক্তিটার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলছিলেন শ্রীলঙ্কান হাইপারফরম্যান্স ম্যানেজার সিমন উইলিস। অজুহাত নয়, নয় অনুমাননির্ভর সিদ্ধান্ত বা সংশয়ের দোলাচলও। কী ঘটছে, সব চোখের সামনেই থাকবে। সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যের আকারে। 

এমন একটা প্রযুক্তিই ব্যবহার করছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট। সফটওয়্যারটির নাম ‘ব্রেন সেন্টার’। বলতে পারেন, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের নতুন দিনের পথরেখা তৈরি করে দেওয়ার মস্তিষ্ক! নিদাহাস ট্রফিতে আসা সাংবাদিকদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের সভাপতি থিলাঙ্গা সুমাথিপালার আলোচনাসভাতেই কাল জানানো হয়েছে এই প্রযুক্তির ব্যাপারে।

জানানো হয়েছে অবশ্য রেখেঢেকেই। সব বলে দেওয়ার বোকামি শ্রীলঙ্কান বোর্ড কেন করবে!
কী থাকবে না এই তথ্যভান্ডারে! কোনো খেলোয়াড়ের চোটের সর্বশেষ অবস্থা থেকে শুরু করে তাঁর কতটুকু বিশ্রাম প্রয়োজন, কতটুকু পরিশ্রমে ম্যাচ ফিটনেসে পৌঁছাতে পারবেন...সেসব তো আছেই। ফেসবুক-টুইটারের মতো প্রত্যেক খেলোয়াড়ের আলাদা ‘অ্যাকাউন্ট’ থাকছে, যার মাধ্যমে কোচ-খেলোয়াড় সবাই সব তথ্য পেয়ে যাবেন। একজন খেলোয়াড় ম্যাচের জন্য ফিট কি না, বোঝা যাবে তাঁর নামের পাশে থাকা সবুজ, হলুদ বা লাল চিহ্ন দেখে। সবুজ মানে ফিট, লাল মানে ফিট নয়, হলুদ মানে সংশয়।

শ্রীলঙ্কার স্কুল ক্রিকেটের বয়স ১৩৯ বছর। অ্যাশেজের পর ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরোনো দ্বৈরথ এখানেই হয়! ছবি: প্রথম আলো
শ্রীলঙ্কার স্কুল ক্রিকেটের বয়স ১৩৯ বছর। অ্যাশেজের পর ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরোনো দ্বৈরথ এখানেই হয়! ছবি: প্রথম আলো

ম্যাচের সময় একজন ক্রিকেটার কতটা দৌড়েছেন, কতটুকু ধকল গেছে তাঁর ওপর, তাঁর হৃৎস্পন্দনের গতি, এমনকি কত কদম হেঁটেছেন বা দৌড়াচ্ছেন...সবই জিপিএস-প্রযুক্তির মাধ্যমে চলে যাবে ড্রেসিংরুমে থাকা ল্যাপটপে। জিপিএসটা বাঁধা থাকবে ক্রিকেটারের জার্সির নিচের ছোট জামায়।
ক্রিকেটে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকার নামই সবার আগে আসে। ফুটবলে প্রচলিত এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবাইকে টেক্কাই দিতে চাইছে শ্রীলঙ্কা।

এ তো গেল শারীরিক অবস্থা, একজন ক্রিকেটারের শক্তি-দুর্বলতাও তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ করে ফেলা যাবে এই প্রযুক্তি দিয়ে। ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে হয়তো দেখা গেল কোন জায়গায় বল ফেললে তিনি বিপদে পড়ছেন, বোলারের ক্ষেত্রে কোন জায়গায় বল ফেললে মার খাচ্ছেন বেশি—সবই।

ক্রিকেটে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে অনেকে। শ্রীলঙ্কা ব্যবহার করতে চায় আধুনিকতম প্রযুক্তি। ছবি: ইইটিউব
ক্রিকেটে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে অনেকে। শ্রীলঙ্কা ব্যবহার করতে চায় আধুনিকতম প্রযুক্তি। ছবি: ইইটিউব

এত কিছুর উদ্দেশ্য? বিশ্বমঞ্চে নিজেদের নতুন করে চেনানো। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের প্রধান নির্বাহী অ্যাশলি ডি সিলভা বলছিলেন, সবকিছুর শুরু নাকি সুমাথিপালার কারণেই। এর আগে তিন দফায় লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সুমাথিপালা ২০১৫ সালে চতুর্থ মেয়াদে এসেই ডি সিলভাকে বলেছিলেন, দলকে বিশ্বসেরা বানাতে যা দরকার, সবই চাই। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই নতুন বিনিয়োগ হলো, নতুন প্রযুক্তি এল, সেটি কাজে লাগানোর মতো দক্ষ মানুষ নিয়ে আসা হলো। চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে কোচ করে নিয়ে আসাও সম্ভবত এই প্রক্রিয়ারই অংশ।

হাথুরুসিংহে এসেই বলেছিলেন, ২০১৯ বিশ্বকাপে চোখ রেখেই দলটাকে গড়ে তুলতে চান। এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু হাথুরুসিংহেই নন, পুরো শ্রীলঙ্কান বোর্ডেরই প্রাথমিক লক্ষ্য ১৯৯৬-এর পর দেশকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ এনে দেওয়া। ডি সিলভা সেটি পরিষ্কারই বলে দিলেন, ‘বিশ্বকাপ সামনে রেখেই খেলায় উন্নতির জন্য প্রযুক্তিতে আমরা এত বিনিয়োগ করছি।’
প্রায় ৭৫ হাজার ডলার খরচ হয়েছে ‘ব্রেন সেন্টার’ নামের প্রযুক্তিটির পেছনে, যেটির ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে এই নিদাহাস ট্রফিতেই।