বাংলাদেশের জন্য খেলবে বাংলাদেশ

>
  • তামিমরা প্রেমাদাসায় খেলবে শোকবিধুর বাংলাদেশের জন্য
  • মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা পাশে রেখে মুশফিকরা নামছেন লড়াইয়ে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হতাহত ব্যক্তিদের ছবিগুলো যখন চোখে পড়ছে, আঁতকে উঠছেন তামিম-মুশফিকরা! চোখেমুখে তাঁদের শোক আর বিষাদের ছায়া—আহ, এতগুলো জীবন; কীভাবে ঝরে গেল কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে!

মাহমুদউল্লাহ কাল যেমন শোকার্ত কণ্ঠে বললেন, যাঁরা দুর্ঘটনার শিকার, কারও না কারও স্বজন, কাছের মানুষ। বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের মলিন মুখটা দেখে মনে হলো, যাঁরা হতাহতের শিকার—সবাই তাঁরই কাছের কেউ। শুধু মাহমুদউল্লাহ কেন, কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত-আহত ব্যক্তিরা এখন ১৬ কোটি মানুষেরই স্বজন, যাঁদের জন্য কাঁদছে পুরো বাংলাদেশ।

কাঁদছে বাংলাদেশ দলও। দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে এই কলম্বোয় তাঁদেরও স্পর্শ করছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ঘুরেফিরে খেলোয়াড়দের আলোচনায় আসছে বিমান দুর্ঘটনা। খেলার জন্য খেলোয়াড়দের বেশির ভাগই চলাচল করতে হয় বিমানে—এমন দুর্ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের ভাবিয়ে তুলছে। কেন ঘটেছে, যাঁরা দুর্ঘটনার শিকার, তাঁদের সর্বশেষ কী অবস্থা—সব খবরই রাখার চেষ্টা করছেন খেলোয়াড়েরা।

এ ঘটনায় পুরো দেশে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় শোক, গোটা জাতি নিহত ব্যক্তিদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে কাল। নিহত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানাতে আজ প্রেমাদাসায় ভারতের বিপক্ষে কালো ব্যাজ পরে নামবেন তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা।

পুরো দেশ শোকে নিমজ্জিত, জনজীবনে বেদনার ছায়া—এ মর্মান্তিক ঘটনা পাশে রেখে বাংলাদেশ দলকে নামতে হচ্ছে মাঠের লড়াইয়ে। পঞ্চাশাধিক তাজা প্রাণ হারানোর ক্ষত কিছুতেই পূরণীয় নয়, দ্রুত ভোলারও নয়। এ দুর্ঘটনা বারবার যাতনার গল্প হয়ে বারবার ফিরে আসবে স্মৃতিপটে। তবে শোকে মুহ্যমান দেশে সান্ত্বনার প্রলেপ হতে পারে বাংলাদেশ দলের জয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই একটা ক্ষমতা আছে, তারা ভালো খেললে সব বিভেদ, যন্ত্রণা, দুঃখ, নিপীড়ন, শোক কীভাবে যেন সাময়িক উবে যায়। মানুষ একবিন্দুতে মিলে যায়, কষ্ট-যন্ত্রণা খানিকক্ষণ ভুলে থাকা যায়। চারদিকে বইতে থাকে খুশির হাওয়া।

বাংলাদেশ দল এটিই চাচ্ছে। নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ওঠার সমীকরণ মেলানো, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের ছন্দটা ধরে রাখা—ক্রিকেটীয় জটিল হিসাবের বাইরেও তামিম-মুশফিকদের আরও একটা দায়িত্ব আছে, দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। হ্যাঁ, এটা তাঁদের দায়িত্বই হয়ে গেছে। ক্রিকেটের প্রতি মানুষের যে বিপুল আশা-প্রত্যাশা-ভালোবাসা, বাংলাদেশ দলই পারে মানুষের ওপর জেঁকে বসা শোকের চাদরটা সাময়িক সরাতে। তামিমরাই পারেন বিধ্বস্ত বিমানে মৃত মুখগুলোর অসহনীয় ছবি সাময়িক ভুলিয়ে রাখতে।
বাংলাদেশ দল এটি জানে বলেই প্রেমাদাসায় আজ তারা খেলবে শোকবিধুর বাংলাদেশের জন্য।