সব ভুলে ফাইনালে চোখ

কাল অনুশীলন ছিল না। হোটেল লবিতে ফুরফুরে মেজাজে দলের চার সদস্য (বাঁ থেকে) লিটন, নাজমুল, সৌম্য ও আবু হায়দার।  ছবি: শামসুল হক
কাল অনুশীলন ছিল না। হোটেল লবিতে ফুরফুরে মেজাজে দলের চার সদস্য (বাঁ থেকে) লিটন, নাজমুল, সৌম্য ও আবু হায়দার। ছবি: শামসুল হক

কলম্বোর মুভেনপিক হোটেল কাল সকালেই অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেল। আগের রাতের হারের জ্বালা বুকে চেপে ভোর থেকেই শ্রীলঙ্কা দলের খেলোয়াড়েরা নিজ নিজ ঠিকানায় চলে যেতে শুরু করেন। কেউ নাশতা করে বের হয়েছেন, কেউ নাশতা না করেই। হোটেলের লিফটে উঠতে-নামতে এই কয় দিন যে বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়েরা প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হয়ে যেতেন, সেটি তাই কাল তেমন হলো না।

ভাবতে পারেন, অন্য দিনের মতো কালও দেখা-সাক্ষাৎটা বজায় থাকলে হয়তো মাঠের মতোই যুদ্ধংদেহী হয়ে উঠতেন দুই দলের খেলোয়াড়েরা। আসলে তা নয়। পরশু রাতে ম্যাচের পরই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে সব মিটিয়ে নেন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহরা। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররাও নাকি বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের রাগ তাঁদের ওপর নয়, আম্পায়ারদের ওপর। মাঠের চোখ লাল করা মুহূর্তগুলো ভুলে খেলোয়াড়দের মধ্যে ফিরে এসেছে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। বাংলাদেশ শিবিরের আলোচনাটাও কাল সকাল থেকে আর শ্রীলঙ্কাকেন্দ্রিক ছিল না। সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে আজকের ফাইনাল।

ঢাকা থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ হতেই মুশফিকুর রহিমের প্রথম বক্তব্য, ‘সবচেয়ে বড় ম্যাচটাই তো এখনো বাকি। আগের ম্যাচগুলো যেভাবে খেলে এসেছি, এ ম্যাচটাও সেভাবেই খেলতে চাই।’ প্রসঙ্গক্রমে এল মাহমুদউল্লাহর ম্যাচ জেতানো ইনিংসের কথা। সেই ছক্কা যেন এখনো চোখে লেগে আছে মুশফিকের, ‘দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ)। আমার দেখা সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস এটি।’

না খেলেও পরশু মাঠের হইচইয়ে ভালোভাবেই ছিলেন নুরুল হাসান। মাহমুদউল্লাহ যখন ‘নো’ বল নিয়ে আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনই পানি নিয়ে মাঠে ঢুকে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের তোপের মুখে পড়েন নুরুল। থিসারা পেরেরাই নাকি বেশি উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। ‘তোমার এখানে কাজ কী, এভাবে মাঠে এলে কেন’ ইত্যাদি প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছিলেন নুরুলের দিকে। ‘এটা শ্রীলঙ্কা, এখানে এসব করা যাবে না’ বলেও নাকি শাসান তাঁকে। নুরুলও কম যাননি। তাঁর উত্তর ছিল, ‘তোমরা যখন আমাদের দেশে বিপিএল খেলতে যাবা, তখন কথাটা মনে রেখো।’

এ ঘটনার সূত্র ধরে পরে যা যা হলো, ক্রিকেট মাঠে সে রকম এর আগে খুব কমই দেখা গেছে। সাকিব তো হাতের ইশারায় দুই ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ আর রুবেলকে মাঠ থেকে উঠেও আসতে বলেন। তবে খেলা শেষে বাংলাদেশ দলের সবাই মাঠে এমন আচরণের সম্ভাব্য পরিণতিটা অনুধাবন করতে পারছিলেন। ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রডের কাছে তাই দলের পক্ষ থেকে অনুশোচনামূলক বার্তা পাঠানো হয়। তাঁকে নাকি জানানো হয়, ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সবাই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে। ক্রিস ব্রড উত্তরটাও দিয়েছেন মজার, ‘এক ঘণ্টা আগে এটা বুঝলে তো আর এত সমস্যা হতো না।’ বাংলাদেশ দলের অনুশোচনার কারণেই হোক বা পুরো ঘটনার পেছনে আম্পায়ারের ভুলটাই প্রধান কারণ বলে হোক, ব্রড শেষ পর্যন্ত ন্যূনতম শাস্তিই দিয়েছেন সাকিব আর নুরুলকে। দ্বিমত না করে তাঁরাও সেটি মেনে নিয়েছেন হাসিমুখে।

নুরুল কাল আর এসব নিয়ে কথাই বলতে চাইলেন না, ‘আসলে জেতার তাড়না সবারই ছিল। সে জন্যই হয়তো এ রকম একটা ঘটনা ঘটে গেছে। এর আগে শ্রীলঙ্কা আমাদের দেশে এসে আমাদের হারিয়ে গেছে। আমরাও চেয়েছি সুযোগ কাজে লাগাতে। তবে খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসবও শেষ হয়ে গেছে।’

আজ ফাইনাল, ট্রফি ছুঁয়ে দেখার দিন। বাংলাদেশের ভাবনায় তাই এখন আর শ্রীলঙ্কা নেই, আছে কেবলই ভারত।