ভয়ংকর 'সুন্দর' স্পিনার পেয়েছে ভারত

ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেকে চিনিয়েছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ছবি: এএফপি
ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেকে চিনিয়েছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ছবি: এএফপি

• নিদাহাস ট্রফিতে ওয়াশিংটন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
• পাওয়ার প্লেতে বল করেও দুর্দান্ত ইকোনমি।
• সবচেয়ে কম বয়সে টুর্নামেন্ট–সেরা হওয়ার নতুন বিশ্ব রেকর্ড।

নামের কী বাহার! কারও প্রশ্ন, ছেলেটার কী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র আছে? কিংবা জর্জ ওয়াশিংটনকে হয়তো ভীষণ পছন্দ করতেন তাঁর বাবা। সে জন্যই বুঝি এই নাম?

নামের ব্যাখ্যায় পরে আসা যাবে। আগে একটা প্রশ্ন, নিদাহাস ট্রফিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি কে? পরিসংখ্যান ঘাঁটলেই পেয়ে যাবেন ১৮ বছর বয়সী ছেলেটাকে, যাঁকে ভারতের হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে ২০১৯ বিশ্বকাপে। তাঁকেই ভাবা হচ্ছে ভারতের স্পিন আক্রমণের ভবিষ্যৎ।

ত্রিদেশীয় এই টুর্নামেন্টে পুরো শক্তির দল পাঠায়নি ভারত। কিন্তু তারুণ্যে ভরসা রেখেই তারা ট্রফি জিতেছে। রোহিত শর্মার এই দলে তারুণ্যের ঝান্ডা কিন্তু ছিল সুন্দরের হাতে। ২০ ওভার বল করে ৮ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। তার চেয়েও বেশি চোখ কেড়েছে তাঁর ইকোনমি রেট (৫.৭০)। বেশির ভাগ সময় পাওয়ার প্লেতে বল করেও ছয়ের নিচে রান রেখেছেন। ১৮ বছর বয়সী এই স্পিনার আইপিএলেও দুর্দান্ত।

সুন্দরের বোলিং দেখে থাকলে নিশ্চয়ই মানবেন, পাওয়ার প্লেতে এই ছেলের মস্তিষ্ক ভীষণ ক্ষুরধার। যেন প্রাণের কমিকের সেই ‘চাচা চৌধুরী’—যেখানে বলা হতো চাচা চৌধুরীর মস্তিষ্ক কম্পিউটারের চেয়েও প্রখর!
ভারতের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের স্পিন বিভাগকে তাই অচিরেই অনেকে দেখছেন ‘ত্রিফলা’ আক্রমণভাগ হিসেবে—যুজবেন্দ্র চাহাল, কুলদীপ যাদব ও সুন্দর। গত আইপিএলে পুনে সুপারজায়ান্টসে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের জায়গায় খেলে সুন্দর দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। আইপিএলে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ম্যাচসেরা হওয়ার রেকর্ডও তাঁর দখলে। এবার তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে টুর্নামেন্ট-সেরা হওয়ার বিশ্ব রেকর্ডও গড়লেন।

বোঝাই যাচ্ছে, ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ব্যাটসম্যানকে আটকে রাখার ক্ষেত্রে সুন্দরের মাথাটা দারুণ খেলে। নতুন বলে বাউন্ডারি সীমানায় মাত্র দুজন ফিল্ডার রেখে বোলিং করাটা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। সুন্দর এই কঠিন কাজটাই অবলীলায় করে যাচ্ছেন সহজভাবে।
ব্যাটসম্যানের মন পড়তে পারঙ্গম এই স্পিনারের পাওয়ার প্লের বোলিং নিয়ে রোহিতের ‘প্রশংসাপত্র’ শুনুন, ‘ওয়াশিংটন আমার কাছ থেকে বল নিতে ভয় পায় না। ফ্লাইট দিতেও সে ভীত নয়। কী করতে চায় সেটা জানে। এতে আমার কাজটা সহজ হয়ে যায়। যখন একজন বোলার জানে কেমন ফিল্ডিং সাজাতে হবে—সেটা কিন্তু তার পরিণত মানসিকতারও পরিচায়ক।’

হাই-আর্ম অ্যাকশনের এই স্পিনার কিছুটা থেমে ডেলিভারিগুলো ছাড়েন। ব্যাটসম্যানের ফুটওয়ার্ক দেখে ঠিক করেন নিজের লাইন-লেংথ। সুন্দর বলেছেন, ‘ব্যাটসম্যানের মন পড়াটা গুরুত্বপূর্ণ। একসময় আমি নিজেও ব্যাটসম্যান ছিলাম; তাই ব্যাটসম্যান কী ভাবছে আর কোথায় মারতে পারে, তা আন্দাজ করতে পারি। আমি ভাগ্যবান যে পাওয়ার প্লেতে উইকেট নিতে পারি।’ পাওয়ার প্লেতে ব্যাটসম্যানদের শট খেলার জায়গা না দিয়ে সফল হন বোলাররা। ত্রিদেশীয় সিরিজে সাফল্য পেয়েছেন তাতেই। ব্যাটসম্যানরা তাঁকে মারতে না পেরে উইকেট দিয়েছেন।

অশ্বিনের মতো ওয়াশিংটনও উঠে এসেছেন তামিলনাড়ু থেকে। তাঁর বাবা এম সুন্দর নিজেও সাবেক ক্রিকেটার। তামিলনাড়ুতে থাকতে তাঁদের প্রতিবেশী ছিলেন পি ডি ওয়াশিংটন নামে সামরিক বাহিনীর এক সাবেক কর্মকর্তা। তিনি ওয়াশিংটনের বাবাকে খেলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে দিতেন, ক্রিকেট খুব ভালোবাসতেন। পি ডি ওয়াশিংটনের প্রতি এই শ্রদ্ধা থেকেই এম সুন্দর নিজের ছেলের নাম রেখেছিলেন ওয়াশিংটন। এ জন্যই তাঁর নামটা এমন। দেখতেও সুদর্শন। তবে এর চেয়েও বেশি সুদর্শন তাঁর বোলিং।
ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য এ তো সুখবরই!

কম বয়সী টুর্নামেন্ট-সেরা

১৮ বছর ১৬৪ দিন

ওয়াশিংটন সুন্দর

ভারত, নিদাহাস ট্রফি, ২০১৮

১৮ বছর ১৬৯ দিন

ওয়াকার ইউনিস     

পাকিস্তান, অস্ট্রেলেশিয়া কাপ, ১৯৯০

১৯ বছর ১৬৬ দিন

নরেন্দ্র হিরওয়ানি

ভারত, শারজা কাপ, ১৯৮৮