কাতারকে হারানো কিশোর ফুটবলারদের হাহাকার

কাতারকে হারানো অনূর্ধ্ব ১৬ জাতীয় ফুটবল দল। ফাইল ছবি সংগৃহীত
কাতারকে হারানো অনূর্ধ্ব ১৬ জাতীয় ফুটবল দল। ফাইল ছবি সংগৃহীত
এএফসি অনূর্ধ্ব ১৬ বাছাইপর্বে কাতারকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রতিভাবান দলটিকে নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার কথা বলেছিল বাফুফে। কিন্তু সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো লক্ষ্মণ নেই এখনো পর্যন্ত।


কত উচ্ছ্বাস, কত আহ্লাদ, কত আবেগ—সব শেষে প্রতিশ্রুতির মালা। কোথায় গেল সব! গত বছর সেপ্টেম্বরে এএফসি অনূর্ধ্ব ১৬ বাছাইপর্বে র‍্যাঙ্কিংয়ে ১১১ ধাপ এগিয়ে থাকা কাতারকে ২-০ গোলে হারিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশের কিশোররা। এরপর দলটিকে নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো লক্ষ্মণ এখনো পর্যন্ত নেই।

দলটিতে এমন কয়েকজন খেলোয়াড় ছিল, যাদের ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে আত্মপ্রকাশের সব যোগ্যতাই ছিল। ক্রীড়াশৈলী, দম, গোল করার ক্ষমতা—সবকিছুই। কাতারকে হারানোর আগে ইয়েমেনের বিপক্ষে সমান তালে খেলেও হেরে যাওয়া সেই দলে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, দীপক নাথরা মুগ্ধ করেছিল সবাইকে। দেশের ফুটবলে তারকা-সংকটের এই সময়ে এই কিশোরেরা আশার আলো হয়েই এসেছিল। কিন্তু বাফুফের নির্লিপ্ততায় সে দলটি এখন ভাঙা হাট। খেলোয়াড়দের গন্তব্য এখন ভিন্ন ভিন্ন দিকে। অথচ, ২০২২ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কাতার যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, বাংলাদেশের কাছে হারা দলটি ছিল তারই অংশ।

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন চার বছর মেয়াদি পরিকল্পনার কথা। তাঁর কথা অনুযায়ী একটি ট্রেনিং ক্যাম্পও শুরু হয়েছিল গোপালগঞ্জে। এক মাস চলার পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে সেটি আবার শুরু করার কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। বাছাইপর্ব শেষে কাতারকে হারানোর আগের মাসেই অনূর্ধ্ব ১৫ সাফে দুর্দান্ত খেলেছিল বাংলাদেশের এই কিশোরেরা। 

দলটা ভেঙে যাওয়া নিয়ে খুব আফসোস কাতারের বিপক্ষে প্রথম গোল করা ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের কণ্ঠে, ‘আমাদের বলা হয়েছিল চার বছরের ক্যাম্প হবে। কিন্তু তা তো হলো না। আমাদের যদি মেয়েদের মতো ধরে রাখা যেতো অবশ্যই ভালো রেজাল্ট এনে দিতে পারতাম আমরা।’ বাফুফের ক্যাম্পের কোনো আশা না দেখে বর্তমানে সাইফ স্পোর্টিংয়ের জুনিয়র দলে নাম লিখিয়েছে নেপালে অনূর্ধ্ব ১৫ সাফে সাত গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া এই ফাহিম। 

স্ট্রাইকার মিরাজ মোল্লাকে ভুলে যাওয়ার কথা নয়। সাফে চার গোল করে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছিল সে। যার গতি ও গোল করার সহজাত ক্ষমতা দেখে বাফুফে কর্তারা নিশ্চিন্ত হয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের স্ট্রাইকার সমস্যা কেটে গেছে।’ সেই মিরাজ এদিক-সেদিক ঘুরে এখন ঠাঁই নিয়েছে মোহামেডান অনূর্ধ্ব ১৮ দলে। নিজের হতাশাটা লুকাতে পারল না সেও, ‘গোপালগঞ্জের ক্যাম্পে ছুটি দিয়ে বলল ডাকার সঙ্গে সঙ্গেই যেন চলে আসি। কিন্তু আমাদের আর ডাকা হলো না। কোচদের ফোন দিই, তারাও কিছু বলতে পারেন না। এদিকে বাড়ি থেকে বলে ফুটবল খেলা বাদ দিয়ে দে। বিপদেই পড়ে গিয়েছিলাম।’ ফাহিমের মতো মিরাজেরও প্রশ্ন, মেয়েদের যদি সারা বছর ক্যাম্প করানো হয় তাহলে তাদের সমস্যা কোথায়?

কয়েক দিন আগে দলটাকে ধরে রাখতে না পারার আক্ষেপ ঝরেছিল সে দলের ম্যানেজার ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সদস্য অমিত খান শুভ্রর কণ্ঠেও, ‘মেয়েদের এ সাফল্য এক দিনে আসেনি। দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের পর তারা এখন সাফল্য পাচ্ছে। কিন্তু আমরা ছেলেদের নিয়ে কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছি না। ছেলেদের নিয়ে পরিকল্পনা করা গেলে নিঃসন্দেহে ছেলেরাও মেয়েদের মতোই ভালো করত। আমরা মাত্র কয়েক মাসের অনুশীলন নিয়ে কাতারকে হারিয়েছি। এ থেকেই প্রমাণ হয় আমাদের ছেলেরা কতটা প্রতিভাবান ছিল।’