বেল-বেনজেমা-রোনালদো আক্রমণত্রয়ীর যুগ শেষ

বেনজেমা ও বেলকে মৌসুম শেষে বেচে দিতে পারে রিয়াল। ছবি: এএফপি
বেনজেমা ও বেলকে মৌসুম শেষে বেচে দিতে পারে রিয়াল। ছবি: এএফপি
>
  • বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে কাল রিয়ালের একাদশে শুধু রোনালদো নিশ্চিত
  • গ্যারেথ বেল কিংবা করিম বেনজেমার রিয়ালের একাদশে খেলা নিশ্চিত নয়
  • ২৭৯ দিন পর গত জানুয়ারিতে সর্বশেষ রিয়ালের একাদশে খেলেছে ‘বিবিসি’ জুটি

মাত্র চার দিনের ব্যবধান। নইলে বলা যেত, চার বছর আগে এই দিনে বায়ার্ন মিউনিখের ঘরে ঢুকে ‘মেরে’ এসেছিল রিয়াল। ২৯ এপ্রিল সেই হারের পর বায়ার্ন কোচ পেপ গার্দিওলা সেই হারের পর স্বীকার করে নিয়েছিলেন, ‘কোচ হিসেবে এটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়।’

গার্দিওলার কোচিং ক্যারিয়ারে সেই বিপর্যয় ডেকে আনার ‘নাটের গুরু’ রিয়ালের ‘ত্রিফলা’ আক্রমণভাগ—‘বিবিসি’—বেনজেমা, বেল ও ক্রিস্টিয়ানো। প্রায় চার বছর পর কাল বায়ার্নের মাঠে নামবে রিয়াল। মঞ্চটা সেই চ্যাম্পিয়নস লিগেরই সেমিফাইনাল। পার্থক্য শুধু চার বছর আগের সেই ম্যাচটা ছিল ফিরতি লেগ, আর কালকেরটা প্রথম লেগ।
তবে এই চার বছরে অনেক কিছুই পাল্টেছে। বায়ার্নের ঘরে ৪-০ ব্যবধানে জয়ের সেই ম্যাচে রিয়ালের ‘বিবিসি’ আক্রমণভাগ ছিল ফর্মের শীর্ষে। রিয়াল সমর্থকদের তৃতীয় গোলটা নিশ্চয়ই মনে আছে? অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার পাস ডান প্রান্তের কোনায় পেয়েছিলেন করিম বেনজেমা। বায়ার্ন ডিফেন্ডার দান্তেকে এক ঝটকায় ছিটকে ফেলে মাঝমাঠ চিড়ে ছুটতে থাকা গ্যারেথ বেলকে বাড়ালেন পাস। ওয়েলশ উইঙ্গার কিছু দূর এগিয়ে পাস দিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। বায়ার্ন গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যারকে এক কোণে একা পেয়ে রোনালদোর গোল করতে কোনো ভুল হয়নি।
নয়টি ছোঁয়ার সমন্বয়ে ‘বিবিসি’র সেই গোল করতে সময় লেগেছিল মাত্র ১০ সেকেন্ড! প্রতিপক্ষের ওপর বিদ্যুৎগতির সেই আক্রমণটুকু নির্মমতার চেয়ে প্রতিভার ভাস্বর হিসেবেই বেশি মনে রেখেছেন সবাই। কিন্তু অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনায় কাল যখন রিয়াল মাঠে নামবে, তখন এই ‘বিবিসি’ আর আগের ‘বিবিসি’ নেই। শুধু রোনালদো ছাড়া এই ম্যাচে বেল কিংবা বেনজেমার একাদশে থাকা নিশ্চিত নয়। এত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ‘ত্রিফলা’ আক্রমণের ওপর রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদানের আস্থা না থাকাটা কিন্তু বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ। ‘বিবিসি’ কি তাহলে শেষ দেখে ফেলেছে?
পরিসংখ্যান বলছে অনেকটা সে রকমই। রোনালদো-বেল-বেনজেমাকে নিয়ে জিদান সর্বশেষ রিয়ালের একাদশ সাজিয়েছিলেন গত জানুয়ারিতে। তার আগে ২৭৯ দিন ‘বিবিসি’কে একসঙ্গে রিয়ালের একাদশে দেখা যায়নি। ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল বার্সেলোনার মুখোমুখি হওয়ার পর গত জানুয়ারিতে প্রথম একসঙ্গে রিয়ালের একাদশের হয়ে মাঠে নেমেছিল ‘বিবিসি’ জুটি।
তবে রোনালদোর কাছে বেনজেমার গুরুত্ব আলাদা। আক্রমণভাগে এই ফরাসি তাঁর পছন্দের সতীর্থ। বেনজেমার নিঃস্বার্থ দৌড়গুলোই তো রোনালদোকে এত দিন গোলের সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু দল তো তাঁর কাছ থেকে গোল চায়। বেনজেমা এই মৌসুমে তা আর করতে পারছেন কোথায়! সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৯ ম্যাচে মাত্র ৯ গোল। এর মধ্যে ২ গোল করেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগে। ১০টি ‘অ্যাসিস্ট’ করলেও তা ইউরোপিয়ান মঞ্চের বাইরে। রিয়ালের ‘নম্বর নাইন’-এর পাশে সংখ্যাটা কতটুকু মানানসই?
বেলের গোল পরিসংখ্যান এই মৌসুমে বেনজেমার চেয়ে কিছুটা ভালো। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৩ ম্যাচে ১৪ গোল। চ্যাম্পিয়নস লিগে এবার শুধু বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে গোলের মুখ দেখেছেন। রিয়ালে প্রথম মৌসুমটা দুর্দান্ত কাটালেও ইনজুরির কারণে গত দুই মৌসুম দলকে সেভাবে সেবা দিতে পারছেন না এই ‘হানড্রেড মিলিয়ন ইউরোম্যান’। এবার লা লিগার শুরুতে রোনালদো যখন গোলখরায় ছিলেন, তখন বেল কিংবা বেনজেমাদের কেউ কিন্তু দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারেননি।
আর তাই কাল বায়ার্নের মাঠে রোনালদো গোল না পেলে বেল-বেনজেমা যে পাবেন, এই নিশ্চয়তার বিপক্ষে বাজি ধরার লোকই বেশি। সে রকম কিছু ঘটলে কিন্তু মৌসুম শেষেই ‘বিবিসি’ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার লা লিগার শিরোপা (বার্সা জিতবে তা মোটামুটি নিশ্চিত) হারানোর ব্যথাটা কিন্তু রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের বুকে থেকেই যাবে। মৌসুম শেষেই তাই বেলকে বেচে দিতে পারে রিয়াল। আর রবার্ট লেভানডফস্কিকে কেনা নিশ্চিত হলে বেনজেমাকেও বার্নাব্যু ছেড়ে দিতে হবে।
‘বিবিসি’ কি তাহলে সত্যি সত্যিই গোধূলিলগ্নে?