তিনি ছোড়েন তির, স্বামী ঘোরান চাকা

মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে ৫১ বছর বয়সী আর্চার ফিরুজা জুবাইদোভা। ছবি: প্রথম আলো
মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে ৫১ বছর বয়সী আর্চার ফিরুজা জুবাইদোভা। ছবি: প্রথম আলো

‘এগ গুড?’

‘ইয়েস’
‘চিকেন?’
‘ইয়েস গুড’

টেবিলে বসে আলাদা করে এভাবে বিভিন্ন খাবার নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেওয়াটা বোধ হয় আর ভালো লাগল না তাঁর। তাই পানির বোতলে চুমুক দিয়ে একটু থেমে বললেন, ‘ঝাল বেশি হলেও বাংলাদেশের সব খাবারই আমার খুব ভালো লাগে।’

এই নিয়ে তিনবার বাংলাদেশ সফর করছেন তাজিকিস্তানের ফিরুজা জুবাইদোভা। সেটা আর্চারি খেলার সুবাদে। বাংলাদেশের খাবার সম্পর্কে তাঁর ভালোই জানা। তবে এই আর্চারকে সবচেয়ে অবাক করে বাংলাদেশের মানুষের বন্ধুত্বসুলভ ব্যবহার। এ দেশের মানুষের ব্যবহারের প্রশংসা অবশ্য অধিকাংশ বিদেশিই করেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে বাংলাদেশ সম্পর্কে যার এত প্রশংসা, সে জুবাইদোভার গল্পটা শুনলে অবাক না হয়ে হয়তো পারা যাবে না।

চার ছেলেসন্তানের মা জুবাইদোভার বয়স ৫১। এই বয়সে হয়তো ছেলেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকা কিংবা ছেলেদের বউদের নিয়ে ঘর গোছানোর দায়িত্বে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তির-ধনুকের নেশায় পড়ে তাজিকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর জন্য ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন দেশে। পারফরমেন্সের বিচারে তাঁর অর্জন হয়তো আহামরি কিছু নয়। কিন্তু পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন নারী তাঁর সন্তানের বয়সী প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়াইয়ে নামছেন, এটাই-বা কম কী!

জুবাইদোভা অংশগ্রহণ করে থাকেন রিকার্ভ ইভেন্টে। যেখানে তির ছুড়তে হয় ৭০ মিটার দূরত্বে, যার জন্য প্রয়োজন প্রচুর শক্তি। মাথা ঠান্ডা রেখে ধৈর্য সহকারে মনোযোগ দিতে হয়। এই বয়সে এসেও একসঙ্গে এত কিছু বিষয় ঠিক রেখে খেলা চালিয়ে যাওয়া কীভাবে সম্ভব? সে রহস্যটা জানালেন জুবাইদোভা, ‘আমি আগে কুস্তি খেলতাম। যার জন্য আমাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো।’

তির-ধনুকের বাইরে তাঁর পরিবারটাও চমৎকার। চার ছেলের সবাই পেশাদার খেলোয়াড় না হলেও আছেন খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ শুনে মনে প্রশ্ন জাগতেই এমন খেলাপাগল পরিবারের কর্তা কী করেন? নিশ্চয় খেলা নিয়ে কাজকারবার তাঁর। এখানেই চমক, জুবাইদোভার স্বামী একজন ট্রাক ড্রাইভার। এতে যে জুবাইদোভার খেলায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না সেটা তো তাঁর পারফরম্যান্সই বলছে।

২০০৩ সালে আর্চারি খেলা দেখা ভালো লেগে যাওয়ায় কুস্তি ছেড়ে তির–ধনুক নিয়ে শুরু করেন নতুন জীবন। খেলাটা যেহেতু তাজিকিস্তানে তখন নতুন, তাই সাফল্যও পেয়ে যান জুবাইদোভা। ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত টানা ৯ বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। নিজ দেশে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। খেলেছেন দুটি এশিয়ান ও একটি বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপও।