মাশরাফিদের সঙ্গে সময় কাটালেন গ্রিনিজ

>মাশরাফিদের সঙ্গে কথা বললেন গর্ডন গ্রিনিজ। পরামর্শ দিলেন। যেমনটি দিতেন দুই যুগ আগে মিনহাজুল-আমিনুল-আকরামদের।


বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এই বিশাল সাম্রাজ্য গর্ডন গ্রিনিজের আগে দেখা হয়নি। ১৯৯৭-৯৯, প্রায় তিন বছর যখন বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন, তখন বিসিবির ছিল না এই ঐশ্বর্য, ছিল না নিজস্ব মাঠ। ছিল না খেলোয়াড়দের উন্নত সুযোগ-সুবিধা।
আজ বিকেলে দেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পা রেখে নিশ্চয়ই মুগ্ধ গ্রিনিজ। যে দলকে মাত্র হাঁটতে শিখতে দেখেছিলেন, তারা এখন বেশ জোরের সঙ্গেই দৌড়াচ্ছে। যাঁদের হাতে এখন এই দলটার মশাল, তাঁদের সঙ্গে একটু কথা না বললে কী হয়। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সবুজ মাঠে একটু পদধূলি দিয়ে বিসিবির কার্যালয়ে ঢুঁ মারলেন। বিকেল পাঁচটার দিকে এলেন বিসিবি একাডেমি মাঠে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রাথমিক দলে ডাক পাওয়া প্রায় সব খেলোয়াড় সেখানে উপস্থিত।
মাহমুদউল্লাহ ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন গ্রিনিজকে। মুশফিকুর রহিম সবার সই করা জাতীয় দলের একটা টুপি উপহার দিলেন। মাশরাফি বিন মুর্তজা উপহার দিলেন লাল–সবুজ জার্সি।
‘সবাই কাছে এসো’—অভ্যর্থনার পর গ্রিনিজ খেলোয়াড়দের কাছে ডেকে নিলেন। মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহর কাছে জানতে চাইলেন, পরের সিরিজগুলো বাংলাদেশ কোথায় কোথায় খেলবে। দুজনই জানালেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে পূর্ণাঙ্গ সফরে যাবেন জুনে ।
বিদেশের মাটিতে এই দুটি সিরিজ ভালো খেলতে হলে কী করতে হবে, সেটি সংক্ষিপ্ত সময়ে বলা কঠিন। তবে দুই মিনিটে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের যে পরামর্শ দিলেন গ্রিনিজ, সেটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, ‘ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ো। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে যেকোনো জায়গায় ভালো করা সম্ভব।’ নিজে কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ছিলেন বলেই ব্যাটসম্যানদের পরামর্শ দিলেন নিজেদের উইকেটের মূল্যটা বোঝার। বোলারদের বললেন ঠিক জায়গায় বল ফেলতে, এখন ওয়ানডে ক্রিকেটে ভালো বলেও বাউন্ডারি হয়ে যায়।

তিনি এ দেশের ক্রিকেটের বাঁকবদলের কান্ডারি। দেশকে নিয়ে গেছেন বিশ্বকাপে। দুই যুগ পর নিজের পুরোনো কাজের ক্ষেত্রে ফিরে আড্ডা দিলেন এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ক্রিকেট প্রজন্মের সঙ্গে। মাশরাফিদের সঙ্গে গর্ডন গ্রিনিজের এই ছবিটি বাঁধিয়ে রাখার মতোই। ছবি: শামসুল হক
তিনি এ দেশের ক্রিকেটের বাঁকবদলের কান্ডারি। দেশকে নিয়ে গেছেন বিশ্বকাপে। দুই যুগ পর নিজের পুরোনো কাজের ক্ষেত্রে ফিরে আড্ডা দিলেন এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ক্রিকেট প্রজন্মের সঙ্গে। মাশরাফিদের সঙ্গে গর্ডন গ্রিনিজের এই ছবিটি বাঁধিয়ে রাখার মতোই। ছবি: শামসুল হক

গ্রিনিজ জানতে চাইলেন, ‘এখানে কে কে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান?’ তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার হাত তুললেন। সৌম্যকে গ্রিনিজের প্রশ্ন, ‘তুমি কি মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করেছ?’ সৌম্য হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলেন। কিন্তু তামিম জানালেন, ওপেনিংয়েই সব সময় খেলা হয় তাঁর। তামিমকে গ্রিনিজের পরামর্শ, ‘কখনো কখনো দলের ভারসাম্য আনতে প্রয়োজনে ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করা যেতে পারে। বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে। অবশ্য যেকোনো দলের জন্য একটা ভালো শুরু সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ।’
ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনার—এই পরিচয়ের চেয়েও বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি পরিচিত এ দেশের ক্রিকেটের বাঁকবদলের কারিগর হিসেবে। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জিতিয়ে আকরাম-আমিনুল-মিনহাজুলরা যদি নায়ক হন, গ্রিনিজ হচ্ছেন বাংলাদেশের মানুষের কাছে নায়কদের নায়ক। গ্রিনিজও জানিয়েছেন, তাঁর হৃদয়ের বড় জায়গাজুড়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দল যেখানেই খেলুক, গ্রিনিজের শুভকামনা এ দলটার প্রতি থাকবেই।
আজও ব্যতিক্রম নয়। মাশরাফি-তামিম-মুশফিকের প্রতি অন্তর থেকে শুভকামনা জানালেন গ্রিনিজ, ‘আমি তোমাদের শুধু সৌভাগ্যই কামনা করতে পারি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা ভারত, যেখানেই খেল না কেন। আমি তোমাদের এতটুকু পরামর্শ দিতে পারি, নিজের খেলার প্রতি শতভাগ মনোযোগী থেকো। এটাই তোমাকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সহায়তা করবে। শুরুতেই নায়ক কিংবা অতি আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করো না। শুভকামনা। নিয়ম করে অনুশীলন করো, আশা করি বাংলাদেশের হয়ে সফল হবে তোমরা।’
নতুন পথ দেখিয়ে দেওয়ার দিশারি হিসেবে যিনি এসেছিলেন, তাঁর সঙ্গে এ দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল প্রজন্মের মেলবন্ধন, গ্রিনিজের সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশ দলের ফ্রেমবন্দী হওয়ার এই অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্যের কি প্রতিদিন দেখা মেলে?