ব্রাজিল কোচের করুণা হয় সেই ৮ ফুটবলারের জন্য

>

২০০৯ সালে বাংলাদেশের কোচ হয়ে এসেছিলেন ডিডো। সে সময় এই ব্রাজিলীয় কোচের অধীনে অনুশীলন বর্জন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন জাতীয় দলের ৮ ফুটবলার। আজ এত বছর পর প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় ডিডো জানিয়েছেন, এখনো নাকি তাঁর সেই আট ফুটবলারের জন্য করুণা হয়। করুণা হয় তাঁর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জন্যও।

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ব্রাজিলীয় কোচ ডিডো। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ব্রাজিলীয় কোচ ডিডো। ফাইল ছবি

এখন পর্যন্ত অনেক কোচই দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ডাগ আউটে। এঁদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত ছিলেন ব্রাজিলীয় ডিডো। তাঁর অধীনে খুব খারাপ করছিল না বাংলাদেশ। জয় এসেছিল বেশ কয়েকটি। তবে ডিডো এ দেশের ফুটবলের স্মরণীয় হয়ে থাকবেন কিছু ব্যাপারে তাঁর কঠোর মনোভাবের জন্য। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ডিডো জাতীয় দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন ৮ শীর্ষ ফুটবলারকে। নয় বছর পর তিনি জানালেন, সেই ঘটনায় তাঁর মনে কোনো দুঃখবোধ তো নেই-ই, উল্টো তাঁর করুণা হয় ওই ফুটবলারদের জন্য। ডিডোর করুণা হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) জন্যও। সেই সময় ডিডোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই যে ছিল বাফুফের অবস্থান!

আট ফুটবলারকে বহিষ্কার করার সেই ঘটনাটিই নিয়োগের মাত্র ১১ মাস পর বাংলাদেশের কোচ হিসেবে তাঁর চাকরির ইতি টেনে দেয়। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগের মাসে ডিডোকে বরখাস্ত করা হয়। যে কারণে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়, তার নজির ফুটবল দুনিয়াতে নেই। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে বহিষ্কৃত আট ফুটবলারের ছয়জনকে সাফের দলে না রাখার খেসারত দিতে হয় তাঁকে।

২০০৯ সালের সাফকে সামনে রেখে কন্ডিশনিং ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছিল কক্সবাজার ও বিকেএসপিতে। কক্সবাজারের ক্যাম্পটি ছিল তিন সপ্তাহের। সেখান থেকে বিকেএসপিতে আসতেই শুরু হয় সমস্যা। কোচের সঙ্গে মতপার্থক্য হয় দলের আট ফুটবলারের। রজনীকান্ত বর্মণ, আরমান আজিজ, জাহিদ হাসান এমিলি, জাহিদ হোসেন, ওয়ালি ফয়সাল, মোফাজ্জল সৈকত, আরিফুল ইসলাম ও জাহিদ পারভেজ চৌধুরী—এই আটজনই ছিলেন সে সময়ের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার। ডিডো অবশ্য ক্যাম্পের শৃঙ্খলার সঙ্গে কোনো আপস করেননি। আটজনকেই বের করে দেন জাতীয় দল থেকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জাতীয় দলের ক্যাম্পের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কোচের এই ভূমিকাটা পছন্দ করেনি বাফুফে।

ডিডোর কঠোর মনোভাবের কারণে পরবর্তী সময়ে মাফ চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন সেই আট ফুটবলার। ব্যাপারটা হয়েছিল বাফুফের মধ্যস্থতাতেই। কিন্তু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দলে সেই আটজন থেকে মাত্র দুজনকে সুযোগ দেওয়ায় বাফুফে ব্রাজিলীয় কোচকে বরখাস্ত করে।

২০০৯ থেকে ২০১৮—সময় গড়িয়ে গেছে নয় বছর। প্রথম আলোর সঙ্গে এক মেইল-আলাপচারিতায় ডিডো জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে যে কারণে তাঁকে বিদায় নিতে হয়েছে, সেটি নিয়ে তাঁর মধ্যে কোনো দুঃখবোধ নেই। তিনি মনে করেন, ওই সময় আট ফুটবলারকে বাদ দিলেই বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের লাভ হতো, ‘আমি এখনো বিশ্বাস করি, সেই আটজন ফুটবলার ছাড়া বাংলাদেশ দল আরও বেশি শক্তিশালী হতে পারত। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র দুজন কে দলে রাখায় ফেডারেশন আমাকে বহিষ্কার করল। এ নিয়ে আমার কোনো দুঃখ নেই; বরং করুণা হয় সেই আট ফুটবলার ও ফেডারেশনের জন্য।’ বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেওয়ার পর তিনি ইসরায়েলে কাজ করেছেন অনেক দিন। এখন তিনি অবস্থান করছেন নেদারল্যান্ডসে।

ডিডো বাংলাদেশকে এখন মনে রাখেন আনন্দময় স্মৃতিগুলোকে কেন্দ্র করেই। বাংলাদেশি বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গ ভুলতে পারেন না তিনি, ‘আমার অনেক বন্ধু–বান্ধব ছিল। আমি খুব গান গাইতে পছন্দ করতাম। ফলে আমার গান শোনার জন্য অনেকেই আসত। ওদের কখনোই ভুলব না।’