মেসির কারণেই জায়গা পাননি ইকার্দি?

আর্জেন্টিনা দলে ইকার্দির জায়গা না পাওয়ার পেছনে আছেন মেসি? ছবি: এএফপি
আর্জেন্টিনা দলে ইকার্দির জায়গা না পাওয়ার পেছনে আছেন মেসি? ছবি: এএফপি
>সিরি আর মতো লিগে ৩৩ ম্যাচে করেছেন ২৯ গোল। বক্সে পায়ে বল পেলে তাঁর মতো ভয়ংকর এই মুহূর্তে খুব কম জনই আছে। ফ্রি কিক বা কর্নার থেকে হেডে দুর্ধর্ষ। এমন একটা স্ট্রাইকারকে দলে না রাখা তো আর্জেন্টিনার তো বিলাসিতা! এই বিলাসিতা করার সুযোগ কি আছে? প্রশ্নটা যদি করা হয় হারনান ক্রেসপোকে, আর্জেন্টিনার সাবেক তারকা সরাসরি বলবেন, ‘না’! শুধু তা-ই নয়, ক্রেসপো মনে করেন, ইকার্দিকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না রাখার পেছনে কোনো ফুটবলীয় কারণ নেই। কারণটি ফুটবল মাঠের বাইরের!

গাজেত্তা দেল্লো স্পোর্তকে ক্রেসপো বলেছেন, কেবল মেসির বন্ধু-বৃত্তের মধ্যে নেই বলেই ইকার্দির জায়গা হলো না বিশ্বকাপে, ‘ইকার্দি মেসির বন্ধুদের একজন নয়। জাতীয় দল এখন তৈরি হয় একটা জাদুর চক্র দিয়ে, কী বলছি বুঝতে পারছেন তো? ইকার্দি সেই চক্রের অংশ নয়। এ কারণে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওর রাশিয়া বিশ্বকাপে যাওয়া হচ্ছে না। এটা আমার মত।’

দুর্দান্ত ফর্মে থেকেও ইকার্দি যখন জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছিলেন না, তখনই প্রশ্নটা উঠেছিল। হিগুয়েইন-আগুয়েরোরা যখন পরীক্ষিতভাবে ব্যর্থ, সে সময় আর্জেন্টিনা নতুন স্ট্রাইকারকে দিয়ে চেষ্টা করে দেখছে না কেন? তখনই শোনা যায়, ইকার্দিকে মেসি পছন্দ করেন না। কারণ মেসির খুব কাছের বন্ধু ম্যাক্সি লোপেজের স্ত্রীকে ‘ভাগিয়ে নিয়ে’ বিয়ে করেছেন ইকার্দি! এমনকি ম্যারাডোনার মতো লোকও ইকার্দিকে বলেছিলেন ‘দুধ-কলা দিয়ে পোষা সাপ’।

কিন্তু সেসব তো অনেক আগের কথা। এখনো মেসি ব্যক্তিগত রোষ পুষে রেখেছেন? জাতীয় দলের চেয়ে এই ব্যক্তিগত অহংয়ের লড়াই বড়? সাম্পাওলি কোচ হয়ে আসার পর হিগুয়েইনকে পুরো ছেঁটে ফেলেছিলেন। তখন ভাবা হয়েছিল, ইকার্দির জন্য দরজা খুলে যাবে এবার। কিন্তু তবুও ইকার্দির অপেক্ষা ফুরোচ্ছিল না। এরপর যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন, তাতে নিজেও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। তবে ইকার্দি যথেষ্ট সুযোগ পাননি, সেও তো সত্যি।

ক্রেসপো তাই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এই দলটার এখন ওর মতো একটা স্ট্রাইকার ভীষণ দরকার। কিন্তু সাম্পাওলি আর মেসি অন্য রকম মনে করে। পেনাল্টি এরিয়ায় এখন ওর মতো ভালো খেলোয়াড় আর কেউ নেই। বল পেলে ও হয়ে ওঠে মারাত্মক।’

এটা ঠিক, আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইকার্দির সামর্থ্য পরীক্ষিত নয়। কিন্তু মাত্র ২৫ বছর বয়সে প্রায় একাই মাঝারি সারির ইন্টার মিলানকে নেতৃত্ব দিয়ে আবার চ্যাম্পিয়নস লিগে তুলে এনেছেন। ইকার্দি আর কীভাবে নিজের প্রমাণ দিতেন?
তাঁর খেলার ধরন কি আসলেই আর্জেন্টিনার সঙ্গে যায় না। আর্জেন্টিনা একটু নিচ থেকে পাসের পর পাস দিয়ে আক্রমণ তৈরি করতে ভালোবাসে। বার্সেলোনার খেলার ধরনও ঠিক তেমন। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় স্ট্রাইকারকে একটু নিচে নেমে এসে আক্রমণ তৈরিতে অংশ নিয়ে আবার বক্সে ফিরে যেতে হয় চূড়ান্ত আঘাতের জন্য তৈরি থাকতে। কিন্তু ইকার্দি অনেকটা সরাসরি ফুটবল খেলে অবশ্য। এখানে পাসিং ফুটবল হবে কম। কয়েকটা পাসেই তৈরি হবে আক্রমণ। এরপর ক্রস করে বল যাবে বক্সে।
ক্রেসপো মানছেন, ‘এটা ঠিক, আপনি যদি খেলাটা একটু নিচ থেকে তৈরি করতে চান, তাহলে ইকার্দির চেয়ে আগুয়েরো বেশি ভালো মানান সই।’ কিন্তু এখানেই শেষ কথা নয়। ফুটবল পাস দিয়ে জেতা যায় না। জিততে হয় গোল করে। আর ক্রেসপো মনে করেন, গোল করায় এখন মেসি-রোনালদোর পরে রাখতে হবে ইকার্দিকে, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর মেসি তো অন্য গ্রহের ফুটবলার। এদের পর তৃতীয় সেরা কে, সেটা বাছাই করতে গেলে এই মুহূর্তে অনেকের নামই আসবে। আমার মতে, ইকার্দিকেও এর মধ্যে রাখতে হবে।’

এমন একজন স্ট্রাইকারকে আর্জেন্টিনা তাদের ২৩ জনের স্কোয়াডে রাখল না! শোরগোল তো হবেই!