জার্মানি সব সময়ই সেরা হতে চায়

বাজতে শুরু করেছে বিশ্বকাপের বাঁশি। শুরু হয়ে গেছে ক্ষণগণনা। প্রথম আলোতেও শুরু হয়ে গেল বিশেষ আয়োজন। বিশ্বকাপ নিয়ে বিশ্বসেরা ৩০ জন ফুটবলার ও কোচের বিশেষ সাক্ষাৎকার ধারাবাহিকভাবে ছাপা হচ্ছে বাংলাদেশে শুধুই প্রথম আলোয়।

মেসুত ওজিল
মেসুত ওজিল

রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছিলেন আর্সেনালের জন্য এবং সেখানে এরই মধ্যে মেসুত ওজিল কিংবদন্তিতুল্য। ২৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার জার্মানির মাঝমাঠে তো আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন অনেক বছর ধরেই। দেশের হয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপ জিতেছেন। জোয়াকিম লোর দল বিশ্বকাপ ধরে রাখতে চাইলে সেরা ফর্মের ওজিলকে লাগবে রাশিয়ায়ও—

প্রশ্ন: ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল হিসেবে বিশ্বকাপে যাচ্ছে জার্মানি...

মেসুত ওজিল: এটা আমাদের জন্য ভালো। কিন্তু এটা কোনো কিছুর (বিশ্বকাপ জয়ের) নিশ্চয়তা দেয় না। র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল মানে আমরা অনেক দিন ধরে ভালো খেলেছি, আমরা ধারাবাহিক। অন্যদিকে বিশ্বকাপে আপনাকে মাত্র সাতটি ম্যাচ ভালো খেলতে হবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ওই সাত দিনের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করবে। বিশেষ করে নকআউট পর্বে একটা খারাপ দিনই আপনাকে ভোগাতে পারে।

প্রশ্ন: মারাকানায় ওই জয়ের পর (২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল) জার্মানি একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। বিশ্বজয়ের তৃপ্তিতে ভুগেই কি এমনটা হয়েছে?

ওজিল: না, ঠিক তেমন নয়। বিশ্বকাপের পরপরই আমাদের সেরা কিছু খেলোয়াড় অবসর নিয়েছিল। গুছিয়ে উঠতে আমাদের কিছুটা সময় লেগে গিয়েছিল। চার বছরের মধ্যে এবং ঠিক বিশ্বকাপের আগে আগে আমরা সেরা ফর্মে ফিরেছি। এটা বোঝায় দল হিসেবে জয়ের ক্ষুধাটা আগের মতোই আছে। বিশ্বকাপের জন্য আমরা উন্মুখ হয়ে আছি।

প্রশ্ন: ২০১৬ ইউরোর সেমিফাইনালের হার কতটা বেদনাদায়ক ছিল?

ওজিল: ওই হারটা আমি আজও ভুলতে পারিনি। আমরা খুব করে ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন হতে চেয়েছিলাম। কয়েক বছর আগে স্পেন যেটা করেছিল, আমরাও সেটা করতে চেয়েছিলাম। আমাদের বিশ্বাসও ছিল যে আমরা পারব। আর সেমিতে উঠে আমরা সেরা চার দলের একটিও হয়ে গিয়েছিলাম। হারটা মেনে নিতে কয়েক দিন লেগেছিল।

প্রশ্ন: ইউরো ২০১৬ কী শিক্ষা দিয়েছিল?

ওজিল: নকআউট পর্বে আপনাকে প্রতিটি ম্যাচে সেরা খেলাটা খেলতে হবে। সেখানে ভুল করার কোনো সুযোগ নেই, একদম না।

প্রশ্ন: বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আত্মতুষ্টিতে ভুগেছিলেন আপনারা?

ওজিল: না, কখনোই না। আমরা জানতাম, টুর্নামেন্টটা কঠিন হবে। কারণ সেখানে ইউরোপের সব বড় দল খেলছিল। সেরার মুকুটের জন্য সেরা দলগুলো মুখোমুখি হলে লড়াইটা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। সেদিন ফ্রান্স ভালো খেলেছিল। আর ভাগ্যও আমাদের পক্ষে ছিল না।

প্রশ্ন: জোয়াকিম লোর অধীনে জার্মানি প্রতিটি বড় টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠেছে। ২০১০ বিশ্বকাপ, ২০১২ ও ২০১৬ ইউরোর সেমিফাইনালে হেরেছেন। ২০০৮ ইউরো ফাইনালে হেরেছেন স্পেনের কাছে। এই পরিসংখ্যান লোর অধীনে দলটির অসামান্য ধারাবাহিকতার কথাই বলে।

ওজিল: জার্মান ফুটবলের বিশেষত্বই হলো আমরা সব সময়ই সেরা হতে চাই। এটা সত্যি আমরা চারটা সেমিফাইনাল হেরেছি। কিন্তু এর মানে হলো, অংশ নেওয়া প্রতিটি টুর্নামেন্টের সেরা চার দলের একটি আমরা। অর্জন হিসেবে এটা অসাধারণ। অন্য দিকে, কখনোই তৃপ্ত না হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটাও কিন্তু আমরা পেয়েছি।

প্রশ্ন: গ্রুপ পর্বে জার্মানির সঙ্গী মেক্সিকো, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়া। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের জন্য বেশ সহজ গ্রুপ।

ওজিল: কাগজে-কলমে হয়তো তেমনই। কিন্তু সামনে যেতে হলে আমাদের ভালো খেলতে হবে। যেকোনো টুর্নামেন্টের প্রথম লক্ষ্যই হলো গ্রুপ পর্ব পেরোনো। এরপর আপনাকে প্রতিটি ম্যাচ ফাইনাল ধরে নিয়ে খেলতে হবে। বড় টুর্নামেন্টে সাফল্যের সূত্রই এটি।

প্রশ্ন: ক্লাবে আপনার মৌসুমটা অতটা ভালো কাটেনি এবং আপনার কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারও ক্লাব ছেড়েছেন। আপনার অভিমত?

ওজিল: আমার ওপর আর্সেনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কথাটা আমার বাকি গানার সতীর্থদের জন্যও সত্য। আমাদের পক্ষে তাঁকে ও তাঁর অবদানকে ভোলা অসম্ভব। হ্যাঁ, যেমনটা স্বপ্ন দেখেছি ততটা সফল আমরা হতে পারিনি। দিন শেষে অবশ্য এটাই ফুটবল। তিনিই আমাকে আর্সেনালে এনেছিলেন, সেটা কীভাবে ভুলি? ফুটবল নিয়ে তাঁর দর্শন, ভাবনা এবং ভালো ফুটবল খেলতে তিনি সবাইকে যেভাবে তৈরি করতেন, সেটা সব সময় আমাদের সঙ্গেই থাকবে। গত মৌসুমে আমরা একটি ট্রফিও হয়তো জিততে পারিনি। কিন্তু আমি আশাবাদী, বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করতে পারব।

প্রশ্ন: আপনাকে কোন ভূমিকায় সবচেয়ে ভালো মানায়?

ওজিল: দলের প্রতিটি আক্রমণের অংশ হতে চাই এবং পুরো খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। গোলে সাহায্য করতে পারাটা আমাকে আনন্দে ভাসায়। হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে আমিও গোল করি। কিন্তু দল যেভাবে চায় সেভাবে ভূমিকা রাখাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক কোচের নিজস্ব দর্শন রয়েছে। কোচের দেখানো উপায়েই খেলতে চাই। দলীয় খেলায় সেটাই একজন খেলোয়াড়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: অনেক সময় সমালোচকেরা আপনার চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তোলে!

ওজিল: সমালোচনা বা পরিসংখ্যানের থেকে আমাকে নিয়ে আমার কোচ কী বললেন, সেটাই বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। অবশ্য আমার পরিসংখ্যানও ততটা বাজে নয়! আর আমার যদি মনে হয় নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারছি না, তবে আমি জানি কোথায় যেতে হবে, কার সঙ্গে কথা বলতে হবে। কোচ আমার চেষ্টা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেই বুঝব আমার কাজটি আমি ঠিকমতো করেছি।