'নেইমারের সামর্থ্যের শেষ কোথায়!'

নেইমারকে বুকে টেনে নিচ্ছেন তিতে। ছবিঃ এএফপি
নেইমারকে বুকে টেনে নিচ্ছেন তিতে। ছবিঃ এএফপি
>

ব্রাজিলের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নের নায়কের আসনে বসে আছেন নেইমার। চোট থেকে ফিরেই টানা দুই ম্যাচে গোল করেছেন তিনি। কোচ তিতের কাছেই নেইমার অনেক বড় ভরসার নাম

কোনো একক ফুটবলারের ওপর নির্ভর করে না ব্রাজিল—বিশ্ব ফুটবলের বেশ প্রচলিত কথা। কিন্তু এই সময়ে ব্রাজিল দলে একসঙ্গে আর দেখা মেলে না বিশ্বমানের একঝাঁক তারকা। এখন হাতে গোনা কয়েকজন ফুটবলারের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয় সেলেসাওদের। এ কজনের মধ্যে সবার আগে আসে নেইমারের নাম।

দলে গ্যাব্রিয়েল জেসুস, রবার্তো ফিরমিনো, উইলিয়ান ও কুতিনহোর মতো ফুটবলার থাকলেও নেইমার যে বিশেষ একজন, নতুন করে না বললেও চলছে। যার হাত (পড়ুন পা) ধরে ব্রাজিলে এসেছে অলিম্পিক ফুটবলের সোনা। সেই থেকে ফুটবলের দেশের মানুষের আশা, তাদের হেক্সা স্বপ্নটাও পূরণ করে দেবেন নেইমার। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের এই ফরোয়ার্ড ব্রাজিল দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝা গেছে বিশ্বকাপের তিন মাস আগে যখন চোটে পড়লেন।

লিগ ওয়ানে খেলার সময় নেইমার চোটে পড়লে রব উঠে যায়, ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ! বিশ্বকাপের আগে হলুদ জার্সিতে সেই নেইমার ফিরে এসেছেন। শুধুই ফেরেননি, টানা দুই ম্যাচে দৃষ্টিনন্দন ‘ব্রাজিলিয়ান ব্র্যান্ড’ গোল উপহার দিয়েই তাঁর ফেরা। রাজার রাজকীয় প্রত্যাবর্তনে সারা বিশ্বের ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটেছে। আর স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন ব্রাজিলিয়ান কোচ তিতে। গতকাল অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ের ম্যাচে নেইমারের দুর্দান্ত গোলের পর শিষ্যকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপের ড্রেস রিহার্সাল ম্যাচে অমন গোলের পর আর প্রশংসা না করে পারা যায়!

উইলিয়ানের আলতো চিপ বক্সের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বুটের সোলের টানে অস্ট্রিয়া ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলে ঠান্ডা মাথায় প্লেসিংয়ে জালে। যেন বার্তা দিলেন, ‘বিশ্বকাপ প্রস্তুত থেকো’। এ ছাড়া মাঠজুড়ে যেভাবে ফুটবলশৈলীর প্রদর্শনী করেছেন, তাতে মুগ্ধতা ঝরছে ব্রাজিল কোচ তিতের কণ্ঠে, ‘আমি জানি না নেইমারের সামর্থ্যের শেষ কোথায়! ওর টেকনিক ও সৃষ্টিশীলতা অসাধারণ। মাঠের অ্যাটাকিং থার্ডে ওকে যখন আমরা মুক্ত হয়ে ঘুরতে দিই, তখনই মারাত্মক হয়ে ওঠে সে!’

অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে গোলের আগে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ের ম্যাচেও নেইমারের গোলটি ছিল আরও অসাধারণ। সেদিন বদলি হিসেবে নামলেও তাঁর খেলা দেখে কখনোই বোঝা যায়নি, বড় ইনজুরির ধকল কাটিয়ে ৯৮ দিন পর মাঠে নেমেছেন ব্রাজিলিয়ান পোস্টার বয়। কুতিনহোর বাড়িয়ে দেওয়া বল ধরে বক্সে এগোলেন নেইমার। তিন ডিফেন্ডার ঘিরে ধরলে ইনসাইড ডজ ও শরীরের মোচড়ে ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডারদের ছিটকে ফেলে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে। নেইমারের এই গোলের ক্ষুধা বিশ্বকাপে থাকলে বিপক্ষ দলের রক্ষণভাগে ঘুম হারাম হওয়ারই কথা।

তবে ব্রাজিল দলটা একেবারেই ‘ওয়ান ম্যান’ শো নয়। বিশেষ করে আক্রমণভাগে নেইমারের সঙ্গে কারা থাকবেন—এই নিয়েই ধোঁয়াশা। গতকাল অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে খেলানো একাদশটাকেই অনেকে ভাবছেন বিশ্বকাপের একাদশ। কিন্তু তিতে তা মানতে নারাজ। খেলার আগের দিন একাদশ ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘আমি এখনো উত্তেজনার মধ্যে আছি। দলের মধ্যে অনেক বেশি প্রতিযোগিতা। আমি শুক্রবার (ম্যাচের আগের দিন) দল ঠিক করব।’