ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল ইংল্যান্ডের

ইংল্যান্ডকে বাঁচালেন হ্যারি কেন। ছবি: রয়টার্স
ইংল্যান্ডকে বাঁচালেন হ্যারি কেন। ছবি: রয়টার্স

ইংল্যান্ড গর্জাল অনেক, তবে সেটা বর্ষণে রূপ দিতে পারেনি। ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট ছিল ইংল্যান্ডের। দৃষ্টি সুখকর না হোক, রক্ষণের বুকে আতঙ্ক জাগানোর মতোই খেলেছে তারা। একের পর এক আক্রমণ করেছে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। কিন্তু কখনো স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতা, কখনো নির্বুদ্ধিতা কিংবা ভাগ্য এবং তিউনিসিয়ার গোলরক্ষকেরা বাধা হয়ে দাঁড়ালেন ইংল্যান্ডের সামনে।

ভুল পড়েননি, ইংল্যান্ডের জয়ের স্কোরলাইনটা ২-১ এর মধ্যে রাখতে দুই গোলরক্ষক ব্যবহার করতে হয়েছে তিউনিসিয়ার। মুয়েজ হাসেনের পরিবর্তে ১৫ মিনিটেই মাঠে নামতে হয়েছে ফারুক বিন মুস্তাফাকে। মাত্র ১৫ মিনিট মাঠে থাকলেও এর মাঝেই নামটা মনে রাখতে বাধ্য করেছেন মুয়েজ। প্রথম চার মিনিটের মধ্যেই যে ইংল্যান্ডকে তিনবার গোলবঞ্চিত করেছেন। এর মাঝে তৃতীয়টি শেষ পর্যন্ত অফসাইড প্রমাণিত হলেও, সেটাই কাল হয়েছে তাঁর জন্য। জেসি লিনগার্ডকে আটকাতে গিয়ে বাঁ কাঁধে চোট পান মুয়েজ। সে চোটেই মিনিট এগারো পরে মাঠ ছেড়েছেন।

এর আগেই অবশ্য গোল খেতে হয়েছে মুয়েজকে। ১১ মিনিটে কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে জোরালো হেড করেছিলেন জন স্টোনস। দারুণ এক সেভও করেছিলেন মুয়েজ কিন্তু ফিরতি বল পড়বি তো পড় হ্যারি কেনের সামনে! গোল করতে কোনো অসুবিধা হয়নি অধিনায়কের। ইংল্যান্ডের সেই গোলের পাল্টা তিউনিসিয়া দিয়েছে ৩৫ মিনিটে। পছন্দের রাইটব্যাক পজিশন থেকে সেন্টারব্যাক পজিশনে খেলতে বাধ্য হওয়া কাইল ওয়াকারের হাস্যকর এক ভুলেই গোল উপহার পেল আফ্রিকার দেশটি। ফখরেদ্দিন বিন ইউসেফকে অযথাই কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে পেনাল্টি দিলেন ওয়াকার। ঠান্ডা মাথায় সমতা ফেরালেন ফেরজানি সাসি। যোগ করা সময়ে গিয়ে এক কর্নারে দূরের পোস্টে একা বল পেয়ে যান কেন। হতভম্ব গোলরক্ষকের বোকামির সুযোগ নিয়ে ইংল্যান্ডকে জয় এনে দিয়েছেন কেন।

তিউনিসিয়ার হয়ে গোল করার পর সাসির আনন্দ। ছবি: রয়টার্স
তিউনিসিয়ার হয়ে গোল করার পর সাসির আনন্দ। ছবি: রয়টার্স

জোড়া গোল করেছেন, তবে আর গোটা দুই গোল পেতেও পারতেন কেন। দুই অর্ধে দুইবার ইংলিশ ফরোয়ার্ডকে নিয়ে রীতিমতো রেসলিং খেলেছে তিউনিসিয়ার ডিফেন্ডাররা। কিন্তু অদ্ভুত কোনো কারণে দুবারই ইংল্যান্ডের পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি উইলমার রোলদান। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি সমৃদ্ধ এক বিশ্বকাপে পরিষ্কার দুটি পেনাল্টি না পাওয়ার দুঃখ থাকবেই ইংল্যান্ডের। মজার ব্যাপার, গত বছর হয়ে যাওয়া কনফেডারেশনস কাপেও ভিএআরে নেওয়া সিদ্ধান্ত দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন রোলদান।

পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্ক হতে পারে, তবে এটা তর্কাতীতভাবে সত্য যে এই ইংল্যান্ড দল কেনের ওপর নির্ভরশীল। পুরো ম্যাচে মাত্র ৩টি শট নিতে পেরেছেন, এর দুটিই গোল। বাকি সময় তিউনিসিয়ার রক্ষণের করা নজরদারি আর ট্যাকলেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে এই স্ট্রাইকারকে।

কেনকে নিয়ে ব্যস্ত তিউনিসিয়ার রক্ষণের ফাঁকফোকরের সুবিধা নিতে পারতেন লিনগার্ড, ডেলে আলি কিংবা স্টার্লিংরা। কিন্তু এ তিনজন কিংবা বদলি নামা রাশফোর্ড যে হাস্যকর সব ভুল করায় ব্যস্ত ছিলেন। আক্রমণের শেষ ভাগে গিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা কিংবা ভুল পাস দিয়ে লেজেগোবরে করে ফেলছিলেন সবাই। এর মাঝে লিনগার্ড অবশ্য গোল দিয়েই ফেলেছিলেন প্রায়। কিন্তু একবারই যেবার একটু বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে চিপ করেছেন, সেটাই কিনা পোস্টে লেগে বেরিয়ে গেল!

সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার রোগ তিউনিসিয়ার মাঝেও দেখা গেছে। বেশ কয়েকবার ইংল্যান্ডের আড়াইজনের (ওয়াকারের মতো ফুলব্যাককে সেন্টারব্যাক বানানোর ফল) রক্ষণভাগকে বেকায়দায় পেয়েছে তারা। কিন্তু ভুল সতীর্থকে পাস দিয়ে কিংবা নিজেই চটকদার কিছু করতে গিয়ে অথবা শুকনো মাঠে হোঁচট খেয়ে হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে দলটি। তবু ইংলিশ ফরোয়ার্ডদের তুলনায় সেটা কমই ছিল।

ম্যাচের আগে পোকার হাত থেকে বাঁচতে কীটনাশক ব্যবহার করতে দেখা গেছে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের। কে জানে সেটারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়তো!