প্রযুক্তির কাটাছেঁড়া: জার্মানি বনাম সুইডেন ম্যাচ

শেষ মুহূর্তের গোলেই জার্মানিকে টিকিয়ে রেখেছেন টনি ক্রুস। ছবি: রয়টার্স
শেষ মুহূর্তের গোলেই জার্মানিকে টিকিয়ে রেখেছেন টনি ক্রুস। ছবি: রয়টার্স
>ফুটবল মাঠে এখন কত ধরনের প্রযুক্তিরই না ব্যবহার হয়। এসবের সাহায্য নিয়ে চলে খেলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। প্রযুক্তি-সাহায্য নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনও বিশ্বকাপের বড় ও আলোচিত ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছে। নতুন ধারাবাহিক ‘প্রযুক্তির চোখে’র ষষ্ঠ পর্বে থাকছে জার্মানি-সুইডেন ম্যাচের বিশ্লেষণ। লিখেছেন নিশাত আহমেদ

দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে গতকাল সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে ন্যূনতম এক পয়েন্ট পেতেই হতো জার্মানিকে। না হলে প্রথম রাউন্ড থেকেই বাদ পড়ে যেতে হতো বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু যে দলে ক্রুস-নয়্যারদের মতো হিমশীতল স্নায়ুর বিশ্বজয়ীরা রয়েছেন, তাঁরা সেটা হতে দেবেন কেন? ক্রুসের শেষ মুহূর্তের ফ্রিকিকে ২-১ গোলের জয় নিয়েই শনিবার মাঠ ছেড়েছেন জার্মানরা। জার্মানির বাকি গোলটি মার্কো রয়েসের।

ঠিক কতটা ভালো খেলেছেন ক্রুস? কালকের পুরো ম্যাচটা দেখলে বলতে হয় খেলার দুই অর্ধে ঠিক দুই রকম খেলেছেন ক্রুস। প্রথমার্ধে অ-ক্রুসীয় খেলা দিয়ে জার্মানিকে ডোবানোর পেছনেও তাঁরই হাত (নাকি পা?) ছিল, আবার দ্বিতীয়ার্ধে পুনরুজ্জীবিত জার্মানদের মূল সেনাপতিও ছিলেন এই ক্রুস। ম্যাচে সুইডেনের প্রথম গোলটাও এসেছে ক্রুসের একটা ভুল ব্যাকপাস থেকেই। সেখান থেকেই সুইডিশ স্ট্রাইকার মার্কাস বার্গ বলটা নিয়ে উইংয়ে থাকা ভিক্টর ক্ল্যাসনকে দেন, ক্ল্যাসনের নিখুঁত ক্রস খুঁজে নেয় অলা তইভনেনকে। লব করে গোল করতে বিন্দুমাত্রও ভুল করেননি তইভনেন। দেখে নিন সুইডেনের গোল

নিজের ভুলে গোল হয়েছে, পুরো ম্যাচেই ক্রুসের মাথায় এই দোষটা খচখচ করছিল হয়তো। সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে কী দুর্দান্তভাবেই না ফিরে এলেন ক্রুস!

পুরো ম্যাচ খেলে ১৪৪ বার বল স্পর্শ করেছেন তিনি। সফল পাসের হার ৯৩.৪%! দ্বিতীয়ার্ধে যেন চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়েই নেমেছিলেন ক্রুস, দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়বেন! গোল করার জন্য শট নিয়েছিলেন ৪টা, যার মধ্যে একটা ছিল গোলমুখ বরাবর, সেই এক শটেই গোল দিয়েছেন তিনি! ওদিকে গোল সহায়তার জন্য ‘কি পাস’ও দিয়েছেন তিনি দুটো, দ্বিতীয়ার্ধেই!

পুরো ম্যাচে একজন যোগ্য নেতার মতো পেছন থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন ম্যানুয়েল নয়্যার। নিঃশব্দে জানিয়ে দিয়ে গেছেন, কেন দলে মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনের মতো ফর্মে থাকা গোলরক্ষক থাকলেও নয়্যারকেই কোচ জোয়াকিম লো মূল গোলরক্ষক হিসেবে চেয়েছেন! পুরো ম্যাচে শতকরা ৮০% সফল সেভ করেছেন নয়্যার, ম্যাচের শুরুর দিকেই বোয়েটেংয়ের ভুলে গোলের দিকে ধেয়ে আসা সুইডেনের আক্রমণ কী অসাধারণ পজিশনিং দক্ষতাতেই না আটকে দিয়েছেন এই নয়্যার! কে পারতেন এভাবে ওই আক্রমণ আটকাতে?

তবে জার্মানির ভঙ্গুর ডিফেন্স নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। চোটের কারণে গতকাল ম্যাচ না খেলতে পারা সেন্টারব্যাক ম্যাটস হামেলসের জায়গায় কালকে নেমেছিলেন চেলসির ডিফেন্ডার আন্তোনিও রুডিগার। তবে রুডিগার নন, জার্মান ডিফেন্সে সবচেয়ে বাজে খেলেছেন কালকে জেরোম বোয়েটেং। আগের ম্যাচেও খুব বাজে খেলা বোয়েটেং গতকাল যেন আগের দিনের খেলাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। তারই ‘পুরস্কার’স্বরূপ ৮৩ মিনিটে দেখেছেন একটি লাল কার্ড! একটিও সফল ট্যাকল করতে পারেননি এদিন বোয়েটেং, উল্টো মাঝে মাঝেই ওপরে উঠে আক্রমণে যোগ দিতে গিয়ে পরে নিচে নেমে রক্ষণ করার কথাটা বেমালুম ভুলে যাচ্ছিলেন তিনি!

 জোয়াকিম লো যথেষ্ট বুদ্ধিমান কোচ, আর পরবর্তী ম্যাচগুলোতে ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য সুযোগটা তাঁর শিষ্য ক্রুসই করে দিয়েছেন। পরের ম্যাচ থেকে সেই আগের আগ্রাসী জার্মানিকে দেখলে চমকাবেন না যেন!

অারও পড়ুন