বাদ পড়ার শঙ্কা জাগিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন স্পেন

>কালিনিনগ্রাদে স্পেন-মরক্কো ম্যাচটা ২-২ গোলে ড্র।  ১৪ মিনিটে মরক্কোকে এগিয়ে নেন বুতাইব। ১৯ মিনিটে স্পেনকে সমতায় ফেরান ইসকো। ৮১ মিনিটে মরক্কোকে এগিয়ে নেন এন-নেসিরি। ৯০ মিনিটের যোগ করা সময়ে স্পেনকে উদ্ধার করেন আসপাস।   

কী নাটকটাই না হলো কালিনিনগ্রাদে! সেটিও আবার এমন সময়ে, যখন সবাই রেফারির শেষ বাঁশির অপেক্ষায়। মরক্কো ২-১ গোলে এগিয়ে। ওদিকে একই সময়ে সারানস্কে পতুর্গাল-ইরান ম্যাচ ১-১ ড্রয়ে শেষ হতে যাচ্ছে। হঠাৎ স্পেনের সামনে বিদায়ের ঝুঁকি চলে এল! এবার বিশ্বকাপে বেশির ভাগ নাটক মঞ্চায়ন হচ্ছে ৯০ মিনিটের যোগ করা সময়ে, শেষের বাঁশি বাজার খানিক আগে। স্পেন-মরক্কো ম্যাচেও কি তাই হবে?

 প্রশ্নটার উত্তর পাওয়া গেল দ্রুতই। বক্সে জটলার মধ্যে দানি কারভাহালের ক্রসে দুর্দান্ত এক ফ্লিকে বল জালে জড়িয়ে দিলেন আসপাস, ১৬ মিনিট আগে যিনি বদলি হিসেবে নেমেছেন। স্প্যনিশদের যখন শেষ মুহূর্তে ম্যাচ বাঁচানোর আনন্দ, তখনই অফসাইডের বাঁশি। স্প্যানিশদের দাবি গোল হয়েছে, মরক্কো বলছে সহকারী রেফারির সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হোক। অতঃপর নেওয়া হলো গোল রিভিউ। চরম নাটকীয়তা শেষে ভিএআরের সহায়তায় গোলটা পেয়েই গেল স্পেন। শেষ পর্যন্ত ২-২ ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ল স্পেন। বাদ পড়ার শঙ্কা জাগিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই স্পেন মাঠ ছাড়ল।

বল দখলে যোজন–যোজন এগিয়ে থাকা আর পাসিং ফুটবলে প্রতিপক্ষের রক্ষণে বারবার ঢোকার চেষ্টা করলেই হবে না, সুযোগ তৈরি করতে হবে। আর সেই সুযোগটা ঠিকঠাক কাজেও লাগাতে হবে, এ কথাটাই যেন স্পেনকে বলতে চাইল মরক্কো। স্পেনের ৭৫ শতাংশ বল দখল আর ৭৪০ পাসের বিপরীতে মরক্কো পুরো ৯০ মিনিটে ২৫০ পাসও দিতে পারেনি। অথচ তিনবার লক্ষ্যে শট নিয়ে দুবারই গোল পেয়েছে। যে একবার মরক্কো পারেনি, শুধু ভাগ্যের ছোঁয়া পায়নি বলে। ৫৬ মিনিটে সোফিয়ান আমরাবাতের শটটা ফিরেছে ক্রসবারে লেগে।

 মরক্কো প্রথম সুযোগটা পেল ১৪ মিনিটে। মাঝমাঠে ইনিয়েস্তা-রামোসের দেওয়া-নেওয়ার ভুল–বোঝাবুঝিতে বলটা ছোঁ মেরে বক্সে চিতার গতিতে ঢুকে পড়ল মরক্কোর ফরোয়ার্ড খালদি বুতাইব। পেছন থেকে পিকে ঝোড়ো গতিতে দৌড়েও পারেনি বুতাইবকে আটকাতে। ডেভিড ডি গেয়াকে হারিয়ে বল পাঠিয়ে দিলেন জালে। স্পেন অবশ্য গোলটা শোধ করতে সময় নিল ৫ মিনিট। ইনিয়েস্তার পাসে ইস্কোর ফিনিশিং। ২৫ মিনিটে আবারও স্পেনের হৃৎকম্প বাড়িয়ে দিয়েছিল বুতাইব। মাঝমাঠের থ্রো-ইনে দুর্দান্ত স্প্রিন্টে স্পেনের তিন ডিফেন্ডারকে হারিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন বক্সে। শেষ মুহূর্তে হারাতে পারেননি ডি গেয়াকে।

ড্র হলেও স্পেনের চিন্তা নেই। নির্ভাবনায় চলে যাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে, এটা যখন ভাবতে শুরু করেছেন স্প্যানিশ–সমর্থকেরা, তখনই তাদের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াল এন-নেসিরির মাথা! ফয়সাল ফজরের কর্নারে নিখুঁত হেড। ৮১ মিনিটে ২-১ গোলে পিছিয়ে থাকা স্পেন পারবে ফিরতে? ৯০ মিনিটেও উত্তর পাওয়া যায়নি। যোগ করা সময়ে ১ মিনিট শেষ হতে চলেছে। ঠিক এ সময়ে আসপাসের ফিনিশিং। সেই গোল নিয়ে আরেক নাটক। গোল হবে কি হবে না, দুই দলের খেলোয়াড় ও টিম ম্যানেজমেন্টের কথার লড়াই। স্নায়ুর ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে যাওয়া মুহূর্ত পেরিয়ে অবশেষে স্পেনের মুখে হাসি।  

স্পেন-মরক্কোর দুই দাবি, চরম সেই নাটকীয় মুহূর্ত। ছবি: রয়টার্স
স্পেন-মরক্কোর দুই দাবি, চরম সেই নাটকীয় মুহূর্ত। ছবি: রয়টার্স

এই বিশ্বকাপে দুবার স্পেনকে বাঁচিয়ে দিল প্রযুক্তি। তাদের বিপক্ষেই ভিএআরে গোল বাতিল হয়েছে ইরানের। আর আজ তো নিজেরাই গোল পেল। তবে মরক্কো মাথা উঁচু করেই মাঠ ছেড়েছে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে স্পেনকে সারাক্ষণ চোখ রাঙিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, দুদলই রোমাঞ্চকর, নাটকীয় এক ম্যাচ উপহার দিয়েছে কালিনিনগ্রাদে।