বাংলাদেশের পেছনে থাকা পানামাই খেলল বিশ্বকাপে

বিশ্বকাপে গোল করে কাঁদলেন পানামা অধিনায়ক ফেলিপ বালোই
বিশ্বকাপে গোল করে কাঁদলেন পানামা অধিনায়ক ফেলিপ বালোই
>

১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের ফিফা র‍্যাঙ্কিং ছিল ১৩৮ আর পানামার ১৫০। অথচ এখন বিশ্বকাপে খেলছে পানামা। আর বাংলাদেশের র‍্যাঙ্কিং ১৯৪। 

পানামার অধিনায়ক ফেলিপ বালোই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করেই কেঁদেই ফেললেন। আনন্দের কান্নাই। কিন্তু এত আনন্দ তাঁর আসে কী করে, পানামা তো ততক্ষণে ৬ গোল খেয়ে গেছে। হ্যারি কেইনের ইংল্যান্ড তাদের নিয়ে রীতিমতো খেলছে! বালোই কাঁদলেন ইতিহাস গড়ে। পানামার প্রথম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করার এই ইতিহাস। এমন মুহূর্তে হার-জিতের প্রশ্ন তো অবান্তর।

এই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে কনকাকাফ অঞ্চলের এই দেশটি। মাত্র ৪০ লাখ জনসংখ্যার এই দেশ বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা, হন্ডুরাস ও ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোর মতো দেশগুলোকে পেছনে ফেলে। পানামার ফুটবল নিয়ে একটি তথ্যে চমকে যেতে পারেন ফুটবলপ্রেমীরা। আজ থেকে ২৩ বছর আগে, অর্থাৎ, ১৯৯৫ সালে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের দেশটি পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশের চেয়েও। বাংলাদেশের ছিল ১৩৮, পানামার ১৫০। ২৩ বছরের ব্যবধানে পানামা বিশ্বকাপ খেলছে, বিশ্ব ফুটবল তো দূরের কথা, এশীয় পর্যায়েও বাংলাদেশের ফুটবল প্রায় অস্তিত্বহীন। ফিফা র‍্যাঙ্কিং ১৯৪!

ফিফা র‍্যাঙ্কিং চালু করে ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৩-৯৬ পর্যন্ত পানামা র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে ছিল। ১৯৯৬ সালে একপর্যায়ে বাংলাদেশের ফিফা র‍্যাঙ্কিং যখন ১১০, পানামার তখন ১২৬। ছিয়ানব্বইয়ের জুলাইয়ে পানামা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে যায়। তা-ও সে সময় ব্যবধান খুব বেশি ছিল না। দেশটি র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবারের মতো এক শর নিচে নেমে আসে ২০০৫ সালে। বাংলাদেশ তত দিনে পৌঁছে গেছে ১৪৯-এ। এরপর থেকে পানামার র‍্যাঙ্কিং কখনো এগিয়েছে, কখনোবা পিছিয়েছেন, কিন্তু তারা কখনোই এক শর ওপরে চলে যায়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশের ফুটবল কেবল পিছিয়েছেই। ২০০৮ সালের এপ্রিলে কাজী সালাউদ্দিন যখন দায়িত্ব নেন, তখন বাংলাদেশের র‍্যাঙ্কিং ছিল ১৮০। ২০১১ সালে সেটি সর্বোচ্চ ১৩৮ হলেও ক্রমান্বয়ে আবার পিছিয়েছে। পেছাতে পেছাতে বাংলাদেশ এখন তলানিতেই। আর পানামা বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ৫৫ নম্বর স্থানে থেকে।
২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর আর এগোতে পারেনি। এশীয় পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান তৈরি করা দূরে থাক, সাফেও বাংলাদেশ চলে গেছে তলানিতে। একসময় সাফে অন্তত নিয়মিত শেষ চারে খেলা বাংলাদেশ মালদ্বীপ, নেপাল, আফগানিস্তান, এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গেও জিততে পারে না। ভারত চলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কাজী সালাউদ্দিন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে ১০ বছর কাটিয়ে দিলেও দেশের ফুটবল কেবল পিছিয়েছেই।

বাংলাদেশের পিছিয়ে যাওয়ার কারণগুলো সবারই জানা। সে কারণগুলোকেই সামনে তুলে ধরলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ গোলাম সারওয়ার টিপু, ‘পানামার ফুটবল অবকাঠামো আর আমাদের অবকাঠামো তো আর এক নয়। তাদের ক্লাব অবকাঠামোর সঙ্গে আমাদের আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তারা তৃণমূল থেকে ফুটবলার খুঁজে বের করেছে। আমরা পারিনি। অত দূর যাচ্ছি না। আমাদের জেলাগুলোতেই তো এখন লিগ হয় না। পাঁচ তারকা হোটেলে জেলা প্রতিনিধিদের ডাকা হয়, ভোটাভুটি হয়, কিন্তু এরপর সব শেষ। ফুটবল মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।’