ফিফা পণ্যের জমজমাট পসরা
স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্মারক। ইংরেজিতে বলে স্যুভেনির। এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখবে এমনই কিছু স্যুভেনির, যা অতীতে দেখা যায়নি। আর দেখা গেলেও আয়োজনটা কখনোই এবারের মতো ছিল না।
মূল আকর্ষণ খেলা হলেও এবারের বিশ্বকাপের মাঠের বাইরে অন্যতম একটি অনুষঙ্গ হিসেবে ধরা দিয়েছে স্যুভেনির। দর্শকেরা যাতে নিজের স্মরণীয় মূহূর্তগুলোকে শুধু স্মৃতিতে নয়, দৃশ্যমান বস্তু বা পন্যের মাধ্যমেও ধারণ করে রাখতে পারেন, সে জন্য ফিফার এ আয়োজন। বলা যায় ফিফার সাজানো এ পণ্যের পসরা সফল হয়েছে।
ফুটবল দর্শকেরা সাধারণত খেলা দেখার পাশাপাশি আয়োজক দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়ান কিংবা স্থানীয় মার্কেটে গিয়ে টুকিটাকি কেনাকাটা করে থাকেন। এসব এবারও ছিল। কিন্তু এসব কিছুকে ছাপিয়ে এবারের দর্শকের কাছে অন্যতম আকর্ষণ ছিল ফিফার পণ্য।
রাশিয়ার ১১টি শহরের ১২টি মাঠে এবারের বিশ্বকাপের খেলা হচ্ছে। সব শহরেই দর্শকের উৎসব উদযাপনের জন্য মেলার আয়োজন করেছে ফিফা, যার নাম ফিফা ফ্যান ফেস্ট। আর এসব মেলাতে ফিফার নিজেদের পণ্য বিক্রির জন্য আছে একটি করে ফ্যান শপ।
মস্কোতে ফিফার ফ্যানদের মেলাটি বসেছে মস্কভা নদীর পাড়ে স্পারো হিলে। ফ্যান শপে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র মারিনা, লাটা ও ইভজেনিয়া। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাগতিক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি জার্সি বিক্রি হচ্ছে রাশিয়ার। দলটির জার্সির মজুদ এখনো আছে, বিক্রিও হচ্ছে। ব্রাজিল, পর্তুগাল, জাপান, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশের জার্সি প্রদর্শীতে ঝুলতে দেখা গেছে। তবে দেখা গেল না আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, সার্বিয়া, মিশর, ইরান ও পেরুর জার্সি। দেখে মনে হতে পারে যে, ফিফা কর্তৃপক্ষ বুঝি এসব দেশকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু ইভজেনিয়া বললেন ভিন্ন কথা, ‘এ সব দেশের দেশের দর্শকের মধ্যে উন্মাদনা বেশি। তাই এসব দেশের জার্সির মজুদ প্রথম এক সপ্তাহেই শেষ হয়ে গেছে। রাশিয়ার বাইরে সবচেয়ে বেশি জার্সি বিক্রি হয়েছে মেক্সিকোর।’ অবশ্য পরে উৎসবের মাঠে গিয়ে সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে প্রদর্শণী কেন্দ্রের বিক্রয়কর্মীদের দাবির যতার্থতাও পাওয়া গেছে। আর্জেন্টিনার জার্সি পরা সমর্থকদের দেখা গেছে বিরস বদনে বসে আছেন। আর খেলা যারই হোক, যেন সব কিছুইতেই সরব উপস্থিতি থাকা চাই মেক্সিকোর ফ্যানদের।
প্রদর্শণীতে দেখা গেল, প্রতিটি দলের অফিসিয়াল জার্সি বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার রুবল করে (১ রুবল= ১ টাকা ৪০ পয়সার মতো)। আর প্রতিটি দলের জার্সির রঙের টি-শার্টের দাম দেড় হাজার রুবল। বিশ্বকাপের শিরোপা দখলের জন্য এডিডাসের তৈরি করা যে বলটি নিয়ে মাঠে কাড়াকাড়ি চলছে সেটির দাম ৯ হাজার রুবল। তবে সবার কেনার সামর্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে ফিফার প্রদর্শনীতে জায়গা করে নিয়েছে আরও দুটি বল। এর একটির দাম ৩ হাজার ৫০০ এবং অন্যটির দাম দেড় হাজার টাকা। বলাবাহুল্য, ব্যক্তির নিজস্ব আবেগ ও অনুভুতিকে মূল্য দিতে গেলে এসব জিনিস কিনে সংগ্রহে রাখার মতোই বটে।
নেকড়ের নাম শুনলে ভয় বা আতঙ্কে যে কারও গায়ে কাঁটা দিতে পারে। মজার বিষয় হলো এবারের বিশ্বকাপের মাসকট জাবিভাকা নামের একটি নেকড়ে। প্রদর্শনীতে দেখা গেছে, শিল্পীর আঁকা বা তৈরি করা জাবিভাকা বিভিন্ন অ্যাকশনে বল নিয়ে কসরত করছে। তবে তার সেই আচরণে নেই কোনো হিংস্রতা। এ সব জাবিভাকার দাম দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
প্রদর্শনীতে আরও কিছু পণ্য আছে যা বিশ্বকাপ দেখতে আসা যে কোনো ব্যক্তি কিনে সংগ্রহে রাখতে পারবেন। এর মধ্যে আছে দলের জার্সির রঙে রং করা ব্যাজ, মাফলার, পশমের তৈরি শীতের টুপি, মোবাইলের কেস, কোটপিন, মোজা ইত্যাদি। এসব পণ্যের দাম দেড় হাজার রুবল করে।
২৫ জুন কাজানের ফ্যান ফেস্টেও ফিফার পণ্যের স্টলে গেছে ক্রেতাদের ভিড়। এ দিন ছিল রাশিয়া ও উরুগুয়ের খেলা। সঙ্গত কারণে ভিড়ও বেশি ছিল। তবে মস্কোর প্রদর্শনীর তুলনায় এখানকার প্রদর্শনীকেন্দ্রের আয়তন বেশ ছোট। বিক্রয়কর্মীরা জানান, জার্সিসহ অনেক পণ্যই চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়নি। করা হলে আরও অনেকেই তাদের বিশ্বকাপের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার সুযোগ পেতেন।
কাজানেই আলাপ হয় চীন থেকে আসা ২২ বছরের তরুণী হ্যান ওয়াংয়ের সঙ্গে। খেলা দেখতে তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন এক শহর থেকে আরেক শহরে। ভলগাগ্রাদে মিশর-সৌদি আরবের খেলা দেখেই ছুটে আসেন কাজানে, সঙ্গে তাঁর শারীরিক আয়তনের প্রায় দ্বিগুণ একটি লাগেজ। বললেন, লাগেজের অর্ধেকটাই স্যুভেনিরে ভর্তি। তাঁর কাছে খেলা দেখা এবং স্যুভেনির সংগ্রহ করা-দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ।