স্পেনকে ডুবিয়েছেন তাহলে এঁরা?

লোপেতেগির কোচ হওয়া রিয়ালের জন্য ভালো খবর হলেও স্পেনের বিশ্বকাপ-ব্যর্থতার পেছনে মূল কারণ বলে দায়ী করা হচ্ছে এ ঘটনাকেই। ছবি: রয়টার্স
লোপেতেগির কোচ হওয়া রিয়ালের জন্য ভালো খবর হলেও স্পেনের বিশ্বকাপ-ব্যর্থতার পেছনে মূল কারণ বলে দায়ী করা হচ্ছে এ ঘটনাকেই। ছবি: রয়টার্স
>স্পেন দলটিতে খেলেছেন রিয়াল-বার্সার ১০ খেলোয়াড়। বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই ক্লাবের তারকা ফুটবলাররা ছিলেন বলেই বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট ধরা হচ্ছিল দলকে। তবু পারেনি স্পেন, বিদায় নিয়েছে শেষ ষোলো থেকেই। দুর্দান্ত সব খেলোয়াড় নিয়েও কেন পারেনি স্পেন?

মস্কোয় গতকাল সার্জিও রামোস, জর্দি আলবা, কোকেরা মাঠ ছাড়লেন কাঁদতে কাঁদতে। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের তিন তারকা দেশের হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে নেমেছিলেন রাশিয়ার বিপক্ষে। পারেননি শেষ পর্যন্ত। অন্যতম ফেবারিট দল হয়েও স্পেনের বিশ্বকাপ শেষ দ্বিতীয় রাউন্ডেই। এই ব্যর্থতা বিশ্লেষণে যে বিষয়টি সবচেয়ে সামনে আসছে—স্পেন মাঠের খেলায় হারেনি, হেরেছে মাঠের বাইরের স্বার্থ আর একের পর এক ভুলে।

এই ব্যর্থতার দায় বর্তাবে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ, হুলেন লোপেতেগি আর রুবিয়ালেসের ওপর। স্প্যানিশ ফুটবলে এই তিনের পরিচয় নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রথমজন রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি, দ্বিতীয় ব্যক্তি বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে বরখাস্ত হওয়া স্প্যানিশ কোচ আর তৃতীয়জন স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মনে করে, স্পেনের এমন অপ্রত্যাশিত ব্যর্থতার দায়ভার এই তিন ব্যক্তির।

বিশ্বকাপ-উৎসব শুরু হবে হবে। নিজেদের প্রথম ম্যাচের ঠিক দুই দিন আগে স্পেনের খেলোয়াড়েরা জানতে পারলেন, তাঁদের কোচকে বরখাস্ত করা হয়েছে! ২০২২ সাল পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তিন বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন লোপেতেগি। বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে এমন ঘোষণা দলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, পাশাপাশি বিশ্বকাপে দল নির্বাচনে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে, এই আশঙ্কায় বরখাস্ত করা হয় তাঁকে।

তবে সবচেয়ে ভুল কাজটি করেছেন বোধ হয় রিয়াল সভাপতি পেরেজ। বিশ্বকাপের আগে ক্লাবের পক্ষ থেকেও কোচ নিয়োগের ঘোষণা না দিলেও হতো, এমনটাই বলছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম। স্পেনের শীর্ষ পত্রিকাগুলো দলের এ ব্যর্থতায় নাটের গুরু মানছেন পেরেজকেই। আবার বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার দুদিন আগে কোচ বদলানো যে দলের পক্ষে ইতিবাচক কিছু বয়ে আনেনি, সেটিও স্পেনের পারফরম্যান্সেই ফুটে উঠেছে। দায় এড়াতে পারেন না ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট রুবিয়ালেস। স্পেনের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা মার্কা তাই শিরোনাম করেছে, ‘ফ্লোরেন্তিনো, লোপেতেগি, রুবিয়ালেস: তোমাদের অনেক ধন্যবাদ!’

রুবিয়ালেস হিয়েরোর ওপর ভরসা রাখলেও তাঁর সিদ্ধান্ত ভালো কিছু বয়ে আনেনি স্পেনের জন্য। ছবি: রয়টার্স
রুবিয়ালেস হিয়েরোর ওপর ভরসা রাখলেও তাঁর সিদ্ধান্ত ভালো কিছু বয়ে আনেনি স্পেনের জন্য। ছবি: রয়টার্স

ইসকো-ইনিয়েস্তা, পিকে-রামোসদের নিয়ে গড়া দলটিকে গুছিয়ে নিতে হিয়েরোকে করতে হতো অতিমানবীয়, অলৌকিক কিছু। এত কম সময়ে দল গোছানো প্রায় অসম্ভব, সেটিও বিশ্বকাপের মতো ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে। ফার্নান্দো হিয়েরো তাঁর সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছেন, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বের অন্যতম বড় ক্লাবের শীর্ষ কর্তা যখন ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন এক কাজ করে বসেন, তখন তাঁরই-বা কী করার থাকে!

বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে একটি ম্যাচেও হারেনি লা রোহারা। ৯ ম্যাচে জয়, ১ ম্যাচে ড্র নিয়ে বিশ্বকাপে অংশ নেয় দলটি। বিশ্বকাপেও এই দলকে হারাতে পারেনি কোনো দল। কাল রাশিয়ার বিপক্ষেও শেষ ষোলোতে অতিরিক্ত সময়ের খেলা ১-১ গোলে সমতায় থাকায় ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয় টাইব্রেকারে। বিদায় নেয় স্পেন। অথচ এই দলটাই বাছাই পর্বে একেক ম্যাচে গোল দিয়েছে ৩টি, ৪টি, ৮টি করে। এ দলটাই কিনা বিশ্বকাপে এসে কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল! স্পেন দলের বিশ্বকাপ-ব্যর্থতায় দেশটির সংবাদমাধ্যম খেলোয়াড়দের চেয়ে দায় দিচ্ছে কর্তাব্যক্তিদের।

অসাধারণ একটি দলের বিশ্বকাপ থেকে অপ্রত্যাশিত বিদায়। ছবি: রয়টার্স
অসাধারণ একটি দলের বিশ্বকাপ থেকে অপ্রত্যাশিত বিদায়। ছবি: রয়টার্স

গত এক দশকে বিশ্ব ফুটবলে স্প্যানিশ ফুটবলের ছায়া কতটা প্রভাববিস্তারী, নতুন করে বলার আছে? গত দশকের সবচেয়ে সফল ও ধারাবাহিক দল তারা। ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো জয়ের বিরল রেকর্ডটিও এই দলের। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ভুলে এবার ভাবা হচ্ছিল, স্পেন ভালো কিছুই করবে। তবে বিশ্বকাপের ঠিক আগমুহূর্তে দলের অস্থিরতাই তাদের ডোবাল। স্প্যানিশ ফুটবলের তিন প্রভাবশালী ব্যক্তির স্বার্থের কাছে জলাঞ্জলি দিতে হলো গোটা দলের স্বপ্ন!