নিজেদের টিকিটাকা বদলাবে স্পেন?

রাশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছে স্পেন।
রাশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছে স্পেন।
>

রাশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হেরে বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছে ফেবারিট স্পেন। পুরো ম্যাচে প্রায় ১১০০ পাস খেলেও মাত্র একটি গোল করতে পেরেছে তারা। সেটিও আবার আত্মঘাতী। প্রশ্ন উঠে গেছে স্পেনের খেলার পদ্ধতি নিয়েই। স্পেন কি এবার নিজেদের খেলার পদ্ধতি পরিবর্তন করবে?

ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো জেতা একমাত্র দল তারা। ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত পাঁচ বছর বিশ্ব ফুটবলে দোর্দণ্ড প্রতাপে ছড়ি ঘোরানো দলও তারা। কিন্তু হঠাৎ যেন পথ হারিয়ে ফেলেছে স্পেনের ফুটবল। ছোট ছোট পাসে সবুজ মাঠে তুলির আঁচড় এঁকে দেওয়া স্পেন যেন এখন নিজেদের জীবাশ্ম। যে টিকিটাকা ফুটবল দিয়ে বিশ্ব মাতিয়েছিল স্পেন, সেই টিকিটাকা ফুটবলই এখন বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। ধীর, দুর্দান্ত পাসিং, সৃষ্টিশীলতা, হঠাৎ গতি বাড়িয়ে দেওয়া—এই ছিল স্পেনের খেলার পদ্ধতি। আগে কাজ করলেও এখন এই পদ্ধতি কেন কাজ করছে না?

২০১৪ বিশ্বকাপ দিয়ে শুরু, বিশ্বজয়ের মুকুট ধরে রাখতে এসে গ্রুপ পর্বেই বিদায়। নেদারল্যান্ডসের কাছে প্রথম ম্যাচেই বিধ্বস্ত ৫-১ গোলে, চিলির কাছে ২-০ গোলে হেরে বিদায় নিশ্চিত হয় স্পেনের। এরপর ২০১৬ ইউরোতে ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনেও ব্যর্থ স্প্যানিশরা। ইতালির কাছে ২-০ গোলে হেরে শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নেয় লা ফুরিয়া রোহারা। বিশ্বকাপ ও ইউরো দুটোর শিরোপা খোয়ানোর জের ধরে পদত্যাগ করেন কোচ ভিসেন্তে দেল বস্ক। ২০১৮ বিশ্বকাপ সামনে রেখে দায়িত্ব দেওয়া হয় হুলেন লোপেতেগিকে। দায়িত্ব নিয়ে স্পেনকে আবারও নিজেদের রাজত্ব ফিরিয়ে দিতে কাজ করছিলেন লোপেতেগি। তাঁর অধীনে দুর্দান্ত খেলে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব পার হয় স্পেন। বিশ্বকাপের আগে লোপেতেগির অধীনে খেলা ২১ ম্যাচের কোনোটাতেই হারেনি তারা। তাদের খেলায় সেই ছন্দ, ধারটাও দেখা যাচ্ছিল আগের মতো।

কিন্তু বিশ্বকাপের আগে হঠাৎ এক ধাক্কায় এলোমেলো হয়ে যায় স্পেন। বিশ্বকাপের পর রিয়াল মাদ্রিদের কোচের দায়িত্ব নিচ্ছেন লোপেতেগি, এমন খবর চাউর হয়ে যায়। লোপেতেগির রিয়ালের সঙ্গে চুক্তির কিছুই জানত না স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন, যেটি জানার পর স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি রুবিয়ালেস বরখাস্ত করেন লোপতেগিকে। নিজের মতো করে গড়া দলটিকে নিয়ে স্পেনকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করার পথেই এগোচ্ছিলেন লোপেতেগি। তাঁকে বরখাস্ত করাটা মানতে পারেননি স্পেনের খেলোয়াড়েরাও। নিজের সিদ্ধান্তেই তবু অটল থাকেন রুবিয়ালেস। দায়িত্ব দেওয়া হয় সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি ও স্পেন ফুটবলের স্পোর্টিং ডিরেক্টর ফার্নান্দো হিয়েরোকে। পেশাদার ফুটবলের কোনো পর্যায়েই যাঁর কোচিং করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সেই হিয়েরো স্পেনকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারবেন, সেটি কোনো স্প্যানিশ সমর্থকও আশা করেছিলেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। হিয়েরো পারেননি, পারেনি স্পেনও।

স্বাগতিক রাশিয়ার সঙ্গে ১২০ মিনিটের খেলায় আদতে খেলা কতটুকু হয়েছে, সেটি নিয়ে যে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারে। পুরো ম্যাচে রাশিয়া পাস দিয়েছে কেবল ২০৬টি। যেখানে স্পেনের পাস ছিল ১১১৪টি! মাঠের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অহেতুক পাস দিয়েছে স্পেন। কোনো ফলাফল বয়ে আনেনি সেই অনর্থক পাসিং। যার মূল্য বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েই দিতে হয়েছে স্পেনকে।

এবার কি নিজেদের বদলাবে স্পেন?
এবার কি নিজেদের বদলাবে স্পেন?

স্পেন যদি আবারও সাফল্য পেতে চায়, প্রথমেই নিজেদের খেলার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। পুরোনো ধাঁচের টিকিটাকা এখনকার ফুটবলে চলে না, সেটি নিশ্চয়ই স্প্যানিশ ফুটবলের হর্তাকর্তারা বোঝেন। বর্তমান ফুটবলে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, তাতে স্পেনের খেলার পদ্ধতি বিশ্লেষণ করে সেটি অচল করে দেওয়া প্রতিপক্ষ দলের জন্য কঠিন কোনো কাজ নয়। স্পেনের টিকিটাকার মূল ভিত্তি ছিল পেপ গার্দিওলার বার্সেলোনার খেলার পদ্ধতি। ২০০৮ ইউরো, ২০১০ বিশ্বকাপ, ২০১২ ইউরো জেতা স্পেন দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ও ছিলেন গার্দিওলার বার্সেলোনা দল থেকে। ফলে একই পদ্ধতিতে খেলার কারণে স্পেনের হয়ে খেলার সময় মানিয়ে নিতে সমস্যা হতো না খেলোয়াড়দের।

কিন্তু কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের অবসরের পর দলে নতুন আসা খেলোয়াড়েরা টিকিটাকা পদ্ধতির সঙ্গে সেভাবে মানিয়ে নিতে পারেননি। যার নেতিবাচক ফল স্পেন গত তিনটি বড় টুর্নামেন্টে পেয়েছে। স্পেনের তৃণমূল পর্যায় থেকে এই টিকিটাকা পদ্ধতিতে নতুনত্ব না আনলে ভবিষ্যতে স্পেনের আন্তর্জাতিক কোনো শিরোপা জেতা সংশয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে।