আজ রাতই বলে দেবে নেইমার না এমবাপ্পে

আজও ফ্রান্সের মুখে হাসি ফোটাবেন এমবাপ্পে? ছবি: রয়টার্স
আজও ফ্রান্সের মুখে হাসি ফোটাবেন এমবাপ্পে? ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সের ফুটবলে ১৯৯৮ সালে অর্জন আসলে দুটি। 

সেন্ট ডেনিসের মায়াবী রাতে দুঙ্গার ব্রাজিলকে গুঁড়িয়ে দেশমের হাতে ওঠা ওই সোনালি ট্রফি। আর এর মাস পাঁচেক পরে প্যারিসের এক শহরতলিতে ক্যামেরুনিয়ান বাবা ও আলজেরিয়ান মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া এক ছোট্ট ছেলে। ২০ বছর পর যাঁকে ফুটবল-দুনিয়া চেনে কিলিয়ান এমবাপ্পে নামে। ২০ বছর পর দিদিয়ের দেশমও যে আরও একটা বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখছেন, সেই স্বপ্নের চিত্রনাট্যে তাঁর ভূমিকা মূল নায়কের।

গতির ঝড়ে লন্ডভন্ড করে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে ভাসিয়ে দিয়েছেন ভোলগায়। নোভগোরাদে উরুগুইয়ান দেয়াল কি সেই এমবাপ্পে-ঝড় থামাতে পারবে আজ?
বয়স ১৯ হওয়ার আগেই ১৪৫ মিলিয়ান ইউরো দাম উঠেছে তাঁর। গত আগস্টে পিএসজির সঙ্গে মোনাকোর কথা হয়ে আছে, ওই দামে তারা কিনে নেবে এমবাপ্পেকে। আসলেই তিনি সেই দামের যোগ্য কি না, বোঝার উপায় ছিল না তখন। প্রতিভার চেয়ে টাকার ছড়াছড়ি বেশি যে ফুটবলের বাজারে, সেখানে এটা বোঝা কষ্টকর। সত্যি বলতে, এমবাপ্পে গত একটা মৌসুমে ক্লাবের হয়ে সেটা বোঝাতেও পারেননি। পারেননি বিশ্বকাপে ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপের প্রথম তিনটা ম্যাচেও।

কিন্তু কে জানত এমবাপ্পে আসল সময়টার অপেক্ষা করছেন! যে রাতে মেসি-রোনালদো বিদায় নিলেন রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে, সেই রাতটাতেই তিনি বোঝাবেন দামের চেয়েও কত দামি তিনি!

এমবাপ্পে ছুটছেন, তাঁর পেছনে ছুটছেন তিন আর্জেন্টাইন। থামাতে না পারলে গোল, থামাতে গেলে পেনাল্টি! ছুটতে ছুটতেই যেন পিএসজির এমবাপ্পে থেকে তিনি বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা এমবাপ্পে হয়ে গেলেন! সতীর্থ ফ্লোরিয়াঁ থভাঁ মজা করে বলেছেন, ‘আমি একটা নতুন নাম দিয়েছি ওর (এমবাপ্পের) থার্টি সেভেন।’ যাঁরা জানেন না তাঁদের জন্য তথ্য, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সেদিন ঘণ্টায় ৩৭ কিলোমিটার গতিতে ছুটেছেন এমবাপ্পে। থভাঁ যেটা দেখে মজা করে ম্যাচের পরই বলছিলেন, ‘আমার তো মনে হচ্ছিল সে স্কুটার চালাচ্ছে বুঝি মাঠে!’

প্রশ্ন হচ্ছে, আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ যেমন হাইওয়ের মতো রাস্তা বানিয়ে দিয়ে স্কুটার চালানোর সুযোগ দিয়েছে এমবাপ্পেকে, উরুগুয়ে কি সেটা দেবে? কাজানের ওই ম্যাচ দিয়ে নিজের ওপর প্রত্যাশাটা যে জায়গায় নিয়ে গেছেন ফরাসি ফরোয়ার্ড, সেটার সঙ্গে আজ নিজেই তাল মেলাতে পারবেন তো?

আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফ্রান্সের ম্যাচটা পরে দেখেছেন দিয়েগো গডিন, হোসে গিমেনেজরা। এবং দেখার পরও তাঁরা বেশ নির্ভার। মানেটা পরিষ্কার, এমবাপ্পের জন্য তৈরি তাঁরা। কতটা তৈরি বোঝা গেল উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার দিয়েগো লাক্সালতের কথায়, ‘ওরা জায়গা খুঁজবে খেলার, আমরা সেই জায়গা দেব না। ওদের ফরোয়ার্ডদের অস্বস্তিতে ফেলতে হবে। এটাই আমাদের পরিকল্পনা।’ উরুগুয়ের কোচ অস্কার তাবারেজের কথাও প্রায় একই রকম, ‘জায়গা দিলে ফ্রান্স কিন্তু আমাদের জন্য কঠিন করে তুলবে সবকিছু।’

কিন্তু সতর্ক থেকেও কি থামানো যাবে এমবাপ্পে-ঝড়? ফরাসি ফরোয়ার্ডের বিখ্যাত সতীর্থ পল পগবা কিন্তু বলেই দিয়েছেন, ‘ও আমার চেয়েও প্রতিভাবান। ওকে কোনোভাবে থামানো যাবে না। এতই দুর্দান্ত সে।’ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে এমবাপ্পেকে দেখে ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপজয়ী হোর্হে ভালদানোও বলেছেন, ‘ওর সামনে যে চ্যালেঞ্জ, তার চেয়ে ওর প্রতিভা ঢের বেশি।’

ফুটবল বিশ্বে মেসি-রোনালদোর উত্তরসূরি হিসেবে নেইমার এত দিন একাই ছিলেন। গত এক মৌসুমে নেইমারের সঙ্গে এমবাপ্পের নামটাও শোনা যাচ্ছে মাঝেমধ্যে। তবে দুই ক্লাব–সতীর্থের মাঝে আসলেই কে এগিয়ে, এটা হয়তো আজই জানা যাবে!