ঈশ্বর, রক্ষা করো রাজাকে

>
রাজা-রানির প্রগাঢ় ভালোবাসা! ছবি: এএফপি
রাজা-রানির প্রগাঢ় ভালোবাসা! ছবি: এএফপি

ব্রুনা মার্কেজিন, সুন্দরীতমা। বয়স মাত্রই ২২। মাত্র চার বছর বয়সে টিভি নাটকে অভিনয় করেন। ২০০৩ সালে ব্রাজিলের শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর পুরস্কারের সঙ্গে আটবার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পেয়েছেন। টেলিভিশন অপেরা শো করেছেন ২০টি, পূর্ণদৈর্ঘ্য ছয়টি ছায়াছবিতে অভিনয় করেছেন। সঙ্গে মঞ্চনাটকও

রাশিয়ায় এসেছিলেন প্রথম ম্যাচের পর। সেন্ট পিটার্সবার্গে কোস্টারিকা ও মস্কোয় সার্বিয়ার সঙ্গে ব্রাজিলের শেষ দুটি গ্রুপ ম্যাচ দেখেই ফিরে গেছেন রিও ডি জেনিরোতে। ব্রুনা মার্কেজিনের কাছে সময় খুব দামি। সোপ অপেরা অভিনেত্রীর যে শো আছে রিওতে। সোপ অপেরার নাম দিউস সালভে ও’ রেই। বাংলা করলে দাঁড়ায়, ঈশ্বর, রাজাকে রক্ষা করো।

সকাল-সন্ধ্যা এমনিতেও মার্কেজিনের মনে প্রার্থনা চলছে, ‘হে ঈশ্বর, আমার রাজাকে রক্ষা করো।’ এই রাজা বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় নেইমার। মার্কেজিনের রাজা নেইমার, আর নেইমারের কাছে মার্কেজিন বেশি করে রানি। ব্রাজিলের মহাতারকা খুব করে চেয়েছিলেন মার্কেজিন রাশিয়ায় থেকে যান শেষ পর্যন্ত। মার্কেজিনেরও খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ওই যে টেলিভিশনের ব্যস্ততা, মঞ্চের ব্যস্ততা। আবার কোনো একটা পণ্যের বিজ্ঞাপনের শুটিং রয়েছে। মার্কেজিনকে ছলছল চোখে বিদায় নিতে হয়েছে মস্কো থেকে। মার্কেজিনের বিদায়ের সময় নেইমারের চোখ ছিল সিক্ত। গোটা ব্রাজিল দলটাই অবশ্য চাইছিল, নেইমারের হৃদয়ের রানি থেকে যান। তাঁর আগমন যে ছিল ভাগ্যলক্ষ্মীর মতো। এলেন, দুটি ম্যাচ দেখলেন এবং ব্রাজিল সব অনিশ্চয়তার মেঘ উড়িয়ে দিয়ে উঠে গিয়েছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে।

মাঠের খেলার মতো হৃদয় বিনিময়ের খেলাতেও নেইমার শুধু রাজা নন, মহারাজা। ১৯ বছর বয়সেই ছেলের বাবা হয়েছেন। সন্তানের মা দানিয়েলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। আবার প্রেমে পড়েছেন। কোথাও থিতু হতে পারেননি। অবশেষে খুঁজে পেয়েছেন ব্রুনা মার্কেজিনকে। মার্কেজিনের সঙ্গেও সম্পর্কটা কয়েকবার ছিন্ন হয়েছে, কিন্তু নেইমার মার্কেজিনের কাছে ফিরে গেছেন আবার। সতীর্থদের কাছে আগে যেমনটি বলেছিলেন, তাতে হয়তো এত দিন দুজনের বিয়েটাও হয়ে যেত। তবে মার্কেজিন সময় নিচ্ছেন। কেন সময় নিচ্ছেন ভেঙে বলেননি। তবে ব্রাজিলিয়ানদের ধারণা, নেইমারের এত বেশি পরিবার-ঘনিষ্ঠতা পছন্দ নয় মার্কেজিনের। তিনি নিজের মতো করে পেতে চান নেইমারকে।

আর নেইমারও! একেবারেই ‘মামিস বয়’, ‘ড্যাডিস বয়’ যাকে বলে। মা-বাবা যা বলেন, সেটাই করেন। হাতে মায়ের জন্য একটা উল্কি এঁকেছেন, বাবার জন্য একটা, বোনের জন্য একটা। আধুনিক কোনো মেয়ে আজ মেনে নিতে পারেন না তাঁর মনের মানুষটি এতটা ঘরের কোণে থাকুক! মার্কেজিনের হয়েছে সেই দশা। নেইমারকে ভালোবাসেন। আবার কখনো কখনো প্রেমিকের পাগলামি অসহ্য লাগে।

গোটা ব্রাজিলই অবশ্য মনে করে, নেইমারের পাগলামির প্রহরটা একটু বেশি লম্বাই চলছে। বয়ঃসন্ধিকালে একটু-আধটু চিত্ত-বিক্ষেপ কার না হয়! তাই বলে ২৬ বছর বয়সেও থিতু হবে না জীবন!

ব্রাজিলের সমর্থক থেকে সাংবাদিক সমাজ পর্যন্ত দেখা গেল, নেইমারকে নিয়ে এই একটা জায়গায় উদ্বিগ্ন। দৈনিক টেম্পোর প্রতিনিধি সোরাইয়া গনজালেস কণ্ঠে খানিক উদ্বেগ ঢেলেও নেইমারের পক্ষই নিলেন, ‘তুমি নেইমারকে ভালো না বেসে থাকতে পারবে না। এখনো যেন ছেলেমানুষ। আর খেলোয়াড় হিসেবে? অসাধারণ। ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতবে। কারণ, এই দলের একজন নেইমার আছে।’

সোরাইয়ার কাছে ভালো লাগে মার্কেজিনকেও, ‘মেয়েটা কী সুন্দর, কী সুন্দর! আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি ওদের চার হাত যেন এক হয়।’

ব্রুনা মার্কেজিন আসলেই সুন্দরীতমা। বয়স মাত্রই ২২। ব্রুনা রেইস মাইয়া থেকে খ্যাতির চূড়ায় উঠে নামটা রূপ নিয়েছে ব্রুনা মার্কেজিনে। মাত্র চার বছর বয়সে টিভি নাটকে অভিনয় করেন। ২০০৩ সালে ব্রাজিলের শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর পুরস্কারের সঙ্গে আটবার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পেয়েছেন। টেলিভিশন অপেরা শো করেছেন ২০টি, পূর্ণদৈর্ঘ্য ছয়টি ছায়াছবিতে অভিনয় করেছেন। সঙ্গে মঞ্চনাটকও। তাঁর সোপ অপেরার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ওই, দিউস সালভে ও’রেই—ঈশ্বর, রাজাকে বাঁচান।

রুপালি পর্দায় অভিনয়ের সময় মার্কেজিন মনে মনে সত্যিই প্রার্থনা করবেন, ঈশ্বর, আমার রাজাকে রক্ষা করো রাশিয়ায়। রাজা রক্ষা পেলে সব কাজ ফেলে, মার্কেজিন সেমিফাইনালের আগেই চলে আসবেন পুতিনের দেশে।