'৯৮ ফেরাতে দুই ধাপ দূরে ফ্রান্স

ফ্রান্সের উদ্‌যাপন, এই বিশ্বকাপের নিয়মিত ছবি। ছবি: রয়টার্স
ফ্রান্সের উদ্‌যাপন, এই বিশ্বকাপের নিয়মিত ছবি। ছবি: রয়টার্স

আর দুটি ম্যাচ! ফ্রান্স তাদের ফুটবলের সবচেয়ে গৌরবময় মুহূর্ত ফিরিয়ে আনতে আর মাত্র দুটি ম্যাচ দূরে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর আবারও একটি সোনালি প্রজন্ম তারা পেয়েছে। এই প্রজন্ম সুযোগটা হাতছাড়া করতে নারাজ! আজ আরও একটি বাধা সহজেই পার হলো দিদিয়ের দেশমের দল। উরুগুয়েকে ২-০ গোলে হারিয়ে চলে গেল সেমিফাইনালে।

দুই অর্ধে ফ্রান্সের হয়ে গোল করেছেন মাদ্রিদের দুই খেলোয়াড়। ৪০ মিনিটে রিয়ালের রাফায়েল ভারান, ৬১ মিনিটে অ্যাটলেটিকোর আঁতোয়ান গ্রিজমান। এডিনসন কাভানির শূন্যতায় প্রথম মিনিট থেকে ভুগতে থাকা উরুগুয়ে ম্যাচে ফেরার একটিই সুযোগ পেয়েছিল। ডিফেন্ডার মার্টিন কাসেরেসের হেডটি জালে জড়িয়ে গেলেই সমতায় ফিরতে পারত উরুগুয়ে। বলটি ঠিক গন্তব্যেই যাচ্ছিল। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে বলটা ঠেকিয়ে দিলেন হুগো লরিস।

এমন সেভের পর যেকোনো দলই নতুন প্রাণ ফিরে পায়, অন্য দল নুইয়ে পড়ে। উরুগুয়ের বেলায়ও তা-ই হলো। আর কখনো তেমন ভয় জাগাতে পারেনি উরুগুইয়ানরা। তাদের একমাত্র সাফল্য ছিল কিলিয়ান এমবাপ্পেকে বোতলবন্দী করে রাখা। কিন্তু তাতেও ফ্রান্সের খুব একটা সমস্যা হয়নি; বরং ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে দুই দলকেই হারাল। দিয়ে রাখল বার্তা।

ব্রাজিল-বেলজিয়াম ম্যাচের জয়ী দল শেষ চারে মুখোমুখি হবে ফ্রান্সের। নকআউট পর্বের দুই ম্যাচে ৬ গোল করা ফ্রান্স জানিয়ে রাখল, যে-ই আসুক, অসুবিধা নেই! এ এমন এক ম্যাচ, যেখানে শুধু স্কোরলাইন ফ্রান্সের দাপট বোঝাতে পারছে না। তবে এই তথ্য কিছুটা সাহায্য করতে পারে। ম্যাচের ১০ মিনিটের মতো বাকি থাকতে গ্রিজমান যখন ফ্রিকিক নিচ্ছিলেন উরুগুয়ের বক্সে, তখনই কাঁদতে শুরু করে দেন ওয়ালে দাঁড়ানো হোসে হিমেনেজ! উরুগুয়ের ডিফেন্ডার বুঝতে পারছিলেন, আর কোনো সুযোগ নেই!

আজ এমবাপ্পে বন্দী থাকার পুরো সুবিধাটা তুলে নিলেন গ্রিজমান। দুটি গোলেই নাম জড়িয়ে আছে তাঁর। ভারানের গোলটি তাঁর ফ্রিকিক থেকে। গ্রিজমানের ফ্রিকিক থেকে হাওয়ায় ভেসে আসা বল ক্লিয়ার করছিলেন উরুগুয়ের ডিফেন্ডার। কোত্থেকে চিলের মতো ছোঁ মেরে হেড দিয়ে দিলেন ভারান!‍ দ্বিতীয় গোলটিও গ্রিজমানের একক কৃতিত্ব নেই। বক্সের প্রান্ত থেকে নেওয়া তাঁর শট এমন আগুনে গোলার মতো কিছু ছিল না। রেগুলেশন সেভ যাকে বলে। কিন্তু গোলরক্ষক মুসলেরা মুচলেকা দিলেন শিশুতোষ ভুলের। দুই হাতে পাঞ্চ করতে গিয়ে বল উল্টো ঠেলে দিলেন জালে! এমন এক গোল হলো, সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা গোলটা হয়েও উদ্‌যাপনের আগ্রহ পেলেন না গ্রিজমান!

কিংবা হয়তো উরুগুইয়ান ভাইদের কথা ভেবে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছেন। অ্যাটলেটিকোতে খেলার সুবাদে গডিন-হিমেনেজের সঙ্গে তাঁর দারুণ সম্পর্ক। সুয়ারেজের সঙ্গেও খাতির ভালো। আজ অবশ্য লুইস সুয়ারেজ পুরো ডুবিয়েছেন। বিশ্বকাপ থেকে দিন দশেক আগে বাড়ি ফিরছেন, এই তথ্য বার্সেলোনাকে স্বস্তি দিলেও সুয়ারেজের মিসগুলো বেশ ভাবাবে। কাভানির শূন্যতায় আরও যেন ধার হারিয়ে ফেলেছেন সুয়ারেজ।

আজ সবার নজর ছিল যাঁর ওপর, সেই এমবাপ্পে বেশ কয়েকটা ঝলক দেখিয়েছেনও। ১৫ মিনিটে ম্যাচের প্রথম সুযোগটি পেয়েছিলেন তিনিই। জিরুর হেড থেকে পাওয়া বলটি আরামে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জোরালো শট নিতে পারতেন। একদম ফাঁকায় ছিলেন বক্সে। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে হেড, বল গেল বারের ওপর দিয়ে। তবে এ-ও ঠিক, এমবাপ্পে-আতঙ্কে আজ ভুগেছে উরুগুয়ে।