সুইডেনও ইংল্যান্ডের জন্য 'জুজু'?

সুইডেন-জুজু তাড়াতে ইংল্যান্ডের প্রধান ভরসা হ্যারি কেইন। ছবি: রয়টার্স
সুইডেন-জুজু তাড়াতে ইংল্যান্ডের প্রধান ভরসা হ্যারি কেইন। ছবি: রয়টার্স
>বিশ্বকাপের মূল পর্বে ও বাছাই পর্বে কখনোই সুইডেনকে হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড

‘ওদের বিপক্ষে আমাদের রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়।’
বক্তার নাম গ্যারেথ সাউথগেট। ইংল্যান্ডের কোচ কথাটা বলেছেন কোয়ার্টার ফাইনালের প্রতিপক্ষ সুইডেনকে নিয়ে। সাউথগেটের বক্তব্যকে সমর্থন দিতেই কিনা যুক্তরাজ্যের এক দৈনিক লিখল, ইংল্যান্ডের ফুটবলে সুইডিশরা হলো গিয়ে ‘জুজু’। এবার ইংল্যান্ড কি পারবে সেই ‘জুজু’ কাটাতে? পারবে সুইডেনকে হারিয়ে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে?

আর একটি-দুটি প্রশ্নও যোগ করা যায়। সুইডেন কি আসলেই ইংল্যান্ডের জুজু? সুইডেনের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের রেকর্ড কি এতই খারাপ?

ফিফার পরিসংখ্যান বলছে, দুই দলের ২৩ ম্যাচের ৭টিতে জিতেছে ইংল্যান্ড, সুইডেনও জিতেছে ৭টি। দুই দলের সর্বশেষ তিন ম্যাচের দুটিতে জিতেছে ইংল্যান্ড। যার একটি আবার ২০১২ ইউরোর গ্রুপ পর্বে। সুইডেন তাহলে ইংল্যান্ডের ‘জুজু’ হলো কীভাবে?
এখানেই আসবে বিশ্বকাপের ইতিহাস। বিশ্ব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে যে কখনোই সুইডেনকে হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড। অবশ্য বিশ্বকাপে মাত্র দুবারই মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব? সেখানেও সমতা, দুই ম্যাচের একটিতেও একে অন্যের জালে বল ঢোকাতে পারেনি ইংল্যান্ড ও সুইডেন।

তবে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব কিংবা বাছাই পর্বের ফল নয়, ইংলিশরা সুইডেনকে ‘জুজু’ মনে করছে ১৯৯২ ইউরোর স্মৃতি মনে করে। ওই বছর সুইডেনের কাছে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে হেরেই প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। ওই ম্যাচে হারের পর ইংলিশ ফুটবলের শেষই দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। এক ইংলিশ ট্যাবলয়েড শিরোনাম করেছিল ‘সুইডিশরা ২, শালগম ১’। খবরের সঙ্গে থাকা ছবি না দেখলে অবশ্য বোঝা মুশকিল হতো, শালগম আবার কী বস্তু! সে সময়ের ইংল্যান্ড কোচ গ্রাহাম টেলরের মাথার জায়গায় শালগমের ছবি বসিয়ে দিয়েছিল ট্যাবলয়েডটি। মানে কোচের মাথায় কিছু নেই আরকি! 

আরেকটি তথ্যও অবশ্য মনে আছে সাউথগেটের। ১৯৬৮ সালের পর টানা ৪৩ বছর সুইডেনকে হারাতে পারেনি তার দেশ। এই সময়ে খেলা ১২ ম্যাচে চারবার হেরেছে ইংল্যান্ড, ড্র করেছে বাকি আট ম্যাচ।
ইংল্যান্ডের কাছে সুইডিশরা তো তাহলে জুজুই! সেই সুইডেন, যারা আবার কিনা ইংলিশ ক্লাব ফুটবলের পাঁড় ভক্ত। টেলিভিশনে ইংলিশ লিগের খেলা দেখে দেখেই ইংলিশ ফুটবলের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়েছে সুইডিশরা। ইংলিশ ফুটবলের নাড়ি-নক্ষত্রও কি তাতে জানা হয়ে যায়নি!
তবে ইতিহাস তো ইতিহাসই, পরিসংখ্যানও সংখ্যা ছাড়া অন্য কিছু নয়। আজ সামারায় সেসব কি কাজে লাগবে?
ডেভিড হরক্স নামের এক ক্রীড়া মনোবিদ যেমন মনে করেন, খেলাধুলায় আগের ফল আজকের ম্যাচে কোনো প্রভাব ফেলবে না, ‘খুব কাছাকাছি সময়ের দুই দল প্রায় একই খেলোয়াড় নিয়ে একই মাঠে দু-তিনটি ম্যাচ খেলে, তাহলে আগের ম্যাচের ফল কিছুটা প্রভাব রাখতে পারে। তবে আজকের ম্যাচে এই সূত্র খাটবে না।’
তা-ই তো হওয়ার কথা। ছয় বছর পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি দুই দল। ২০১২ সালে দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই তো নেই এই বিশ্বকাপে।
তার ওপর ইংলিশরা এরই মধ্যে একটি জুজু কাটিয়ে ফেলেছে—টাইব্রেকার-জুজু। চারবারের চেষ্টায় প্রথম টাইব্রেকার জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে সাউথগেটের দল। এবার কি তাহলে সুইডেন-জুজু তাড়ানোর পালা?