ইংলিশদের মাথার কাছে হারল সুইডেন

বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা ডেলে আলি। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা ডেলে আলি। ছবি: রয়টার্স
সুইডেনকে ২-০ গোলে হারিয়ে ২৮ বছর পর সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল ইংল্যান্ড। এর আগে শেষবারের মতো ১৯৯০ সালে সেমিফাইনালে খেলেছিল ইংলিশরা


আর...জুজু! ম্যাচ শেষে কথাটি তাচ্ছিল্যের সুরে বলতেই পারেন ইংলিশ ফুটবলাররা।

সুইডেনের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে তাঁদের সামনে বারবার উঁকি দিচ্ছিল ‘সুইডেন জুজু’ কথাটি। কী সেই জুজু? বিশ্বকাপের মূল পর্ব ও বাছাই পর্ব মিলিয়ে সুইডেনকে কখনোই হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড। আজ থেকে কথাটি মিথ্যা। ২-০ গোলের জয় নিয়ে ইংল্যান্ড শুধু জুজুই কাটায়নি, ২৮ বছর পর পৌঁছে গেছে সেমিফাইনালে। ইংলিশদের এই জয় এনে দিয়েছেন দুই তরুণ হ্যারি ম্যাগুয়ার ও ডেলে আলি। দুজনেই গোল করেছেন দুর্দান্ত হেডে (পড়ুন মাথা দিয়ে)। আসলে ইংল্যান্ডের মাথার কাছেই তো হার মানল সুইডেন।

ব্রিটিশদের মস্তিষ্ক যতই ক্ষুরধার থাকুক না কেন, বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে সুইডেন এত দিন ছিল বড় এক ধাঁধার নাম! সব মিলিয়ে ইংল্যান্ড ও সুইডেনের মুখোমুখি লড়াইয়ে জয়-পরাজয়ে সমতা থাকলেও, বিশ্বকাপে হিসাবটা অন্য রকম। বিশ্ব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে যে কখনোই সুইডেনকে হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড। অবশ্য বিশ্বকাপে মাত্র দুবারই মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব? সেখানেও সমতা, দুই ম্যাচের একটিতেও একে অন্যের জালে বল ঢোকাতে পারেনি ইংল্যান্ড ও সুইডেন। কিন্তু আজ থেকে কথাটি বদলে গেল। বিশ্বকাপে সুইডেনকেও হারাতে পারে ইংল্যান্ড এবং তা দাপটের সঙ্গেই।

স্কোরলাইনের ২-০ দেখলে মনে হতে পারে, ম্যাচটা একপেশে হয়েছে। আসলে তা নয়। বল দখলের লড়াই ও আক্রমণে হ্যারি কেইনের দল এগিয়ে থাকলেও, প্রতি আক্রমণ থেকে বারবার ইংলিশদের পরীক্ষা নিয়েছে সুইডিশরা। মূলত পরাজিত দলের সামনে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। গোল খাব না—এই দৃঢ়বিশ্বাস নিয়েই যেন মাঠে নেমেছিলেন ইংলিশ এই গোলরক্ষক।

ম্যাড়ম্যাড়ে ফুটবল বলতে যা বোঝায়, সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচটি। ম্যাগুয়ারের প্রথম গোলটির পরে খেলায় কিছুটা গতি ফিরেছে সত্যি। কিন্তু তা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচের মতো কিছু নয়। টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ ম্যাচটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাইলাইটস দেখাতে চাইলে, বড়জোর পাঁচ–ছয়টি মুভ দেখা যেতে পারে। সেখান থাকবে দুটি গোল, রাহিম স্টার্লিং একটি মিস ও পিকফোর্ডের দুটি সেভ। এই তো!

৩০ মিনিটে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। অ্যাশলি ইয়ংয়ের কর্নার থেকে হেডে গোলটি করেন ডিফেন্ডার ম্যাগুয়ার। বিশ্বকাপে তো প্রথম অবশ্যই, ইংল্যান্ডের জার্সিতে প্রথম গোলের খাত খুললেন ম্যানচেস্টার সিটির এই ২৫ বছর বয়সী ডিফেন্ডার। সুইডেনের সামনে এক গোলের ভরসা কী? এ তো আচমকা কোনো এক ঝড়েই সমতায় ফিরতে পারে এমিল ফোর্সবার্গরা। সেই সুযোগটা রাখলেন না ২২ বছর বয়সী আলি। ৫৮ মিনিটে লিনগার্ডের ক্রস থেকে হেডে দারুণ গোল করে দলকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যান টটেনহামের মিডফিল্ডার।

কিন্তু এর আগে ৪৫ মিনিটে স্টার্লিং যে ভুলটি করেছেন, তা হয়তো ইংলিশরা অনেক দিন মনে রাখবেন। জর্ডান হেন্ডারসনের কোটি টাকার এরিয়াল পাসে পুরোপুরি আগলা হয়ে গিয়েছিল সুইডিশ রক্ষণভাগ। গতির সঙ্গে বলের নিয়ন্ত্রণে রবিন ওলসেনকে একাও পেয়েছিলেন, কিন্তু তালগোল পাকিয়ে পাঁচ গজ দূর থেকেও বলটি জালে জড়াতে পারেননি ম্যানচেস্টার সিটির এই উইঙ্গার। তবে এতে সুইডেন গোলরক্ষক রিবন ওলসেনের অবদানও কম নয়।

ম্যাচ রিপোর্টটা এখানেই শেষ করে দেওয়া যেত। কিন্তু পিকফোর্ডের দুটি সেভ না লিখলেই নয়। ৪৭ মিনিটে গোলমুখ থেকে মার্কস বার্গের হেড বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণভাবে রক্ষা করেন পিকফোর্ড। অথচ বল জালে জড়ালেই সমতায় ফিরত সুইডেন। কে জানে সমতায় ফিরতে পারলে ফলাফলটা অন্য রকমও তো হতে পারত। ৭২ মিনিটে আবারও সুইডিশ স্ট্রাইকার মার্কসের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান এভারটন গোলরক্ষক পিকফোর্ড। বক্সের মধ্যে থেকে চকিতে ভলি নিয়েছিলেন। কিন্তু পিকফোর্ড তো পরাজিত হওয়ার নয়। আর ব্যবধানও কমানো হলো না সুইডেনের।

তবে ১২ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরে সুইডেন যা করল, তাতেই বা কম কী! সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়েই ২৪ বছর পর কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে, বীরের বেশে দেশে তো ফিরতেই পারে তারা।