বুট নয়, গ্লাভসেই নির্ধারিত হবে সেমিফাইনাল?

শেষ ষোলোতে কলম্বিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি ঠেকানো পিকফোর্ড সুইডেনের বিপক্ষেও ছিলেন দুর্দান্ত। রয়টার্স।
শেষ ষোলোতে কলম্বিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি ঠেকানো পিকফোর্ড সুইডেনের বিপক্ষেও ছিলেন দুর্দান্ত। রয়টার্স।
>২৮ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়ার অপেক্ষা ফুরিয়েছে ২০ বছরে। মস্কোর ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি কে হবে, সেটি নির্ধারিত হয়ে যাবে আজ রাতেই। সেই নির্ধারণে সবচেয়ে বড় প্রভাবক হতে যাচ্ছেন দুই দলের গোলরক্ষক

ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া—ফুটবলের কোনো ক্ষেত্রেই দুই দলে মিল নেই। ইংল্যান্ড বিশ্ব ফুটবলের পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হলেও ক্রোয়েশিয়া সেটি নয়। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল দুই দলকে এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিয়েছে। আজ মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে যে দল জিতবে, তারাই ১৫ জুলাইয়ের ফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে নামবে ফ্রান্সের বিপক্ষে।

দুই দলে তারকার বাহুল্য না থাকলেও খুব কম যে নেই, তা–ও নয়। হ্যারি কেইন, ডেলে আলি, লুকা মদরিচ, ইভান রাকিতিচ, মারিও মানজুকিচদের সবাই একেকজন তারকা। অথচ তাঁদের কেউ নন, বারুদের গন্ধ ছড়ানো এমন এক ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হতে পারে গোলরক্ষকদের হাতে!

ইতিহাসের অংশ হওয়ার ম্যাচে নায়ক বনে যেতে পারেন ইংল্যান্ডের জর্ডান পিকফোর্ড কিংবা ক্রোয়েশিয়ার ড্যানিয়েল সুবাসিচ। নকআউট পর্বের শুরু থেকেই যার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন দুজনেই।

বিশ্বকাপ শুরুর আগেও ইংল্যান্ডের নম্বর ওয়ান কে হবেন, সেটি ছিল বড় প্রশ্ন। জো হার্টের পড়তি ফর্ম চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের কপালে। জ্যাক বাটল্যান্ড, নিক পোপ ও পিকফোর্ডের মধ্যে যেকোনো একজনকে বেছে নিতে হতো সাউথগেটকে। তিনি বেছে নেন পিকফোর্ডকেই। ইংলিশ ক্লাব এভারটনের হয়ে খেলা ২৪ বছর বয়সী পিকফোর্ড সেই আস্থার প্রতিদান এখন পর্যন্ত দুর্দান্তভাবেই ফিরিয়ে দিয়েছেন।

গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে তিউনিসিয়া ও পানামার বিপক্ষে একটি করে গোল হজম করলেও বড় কোনো পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়নি পিকফোর্ডকে। শেষ ম্যাচে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ১-০ গোলে হারের ম্যাচেও ভালো কিছু সেভ করেছেন পিকফোর্ড।

নকআউট পর্ব আসতেই যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। কলম্বিয়ার বিপক্ষে পুরো ১২০ মিনিটে অসাধারণ কয়েকটি সেভ তো করেনই, টাইব্রেকারে কার্লোস বাক্কার শট বাজপাখির মতো লাফিয়ে সেভ করাটা তো সমর্থকদের চোখে লেগে থাকবে অনেক দিন। তাঁর ওই সেভই ইংল্যান্ডের জয়ের রাস্তা সুগম করে দেয়। বিশ্বকাপে তিনবার টাইব্রেকারে হারের পর প্রথম জয়ের সৌভাগ্য হয় ইংল্যান্ডের।

শেষ আটে সুইডেনের বিপক্ষে তো আরও দুর্দান্ত পিকফোর্ড। স্কোরলাইন বলবে ইংল্যান্ড জিতেছে ২-০ গোলে। কিন্তু যাঁরা ম্যাচ দেখেছেন, তাঁরা বলবেন সুইডেন যে গোল করতে পারল না সেটি পিকফোর্ডের বীরত্বেই। বার্গের হেড যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেছেন, সেটি এবারের বিশ্বকাপেরই অন্যতম সেরা সেভ হয়ে থাকবে। এ ছাড়া পুরো ম্যাচে পিকফোর্ডকে দেখে একবারও মনে হয়নি, দেশের হয়ে মাত্রই অষ্টম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেও ইংল্যান্ডের অন্যতম ভরসা হবেন পিকফোর্ড।

টানা দুই ম্যাচে টাইব্রেকারে পেনাল্টি ঠেকিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার ড্যানিয়েল সুবাসিচ। রয়টার্স।
টানা দুই ম্যাচে টাইব্রেকারে পেনাল্টি ঠেকিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার ড্যানিয়েল সুবাসিচ। রয়টার্স।

এদিক থেকে ক্রোয়েশিয়াও ভাবতে পারে, আমরাও বা কম কী! আমাদের আছে ড্যানিয়েল সুবাসিচ। নকআউট পর্ব ও কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া জিতেছে টাইব্রেকারে। দুটি ম্যাচেই শেষ শটে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেছেন ইভান রাকিতিচ। আর সেই জয়ের পথটা আগেই তৈরি করে রেখেছিলেন ড্যানিয়েল সুবাসিচ। ডেনমার্ক ও স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে সুবাসিচের পারফরম্যান্স মনে করিয়ে দিয়েছে ১৯৯০ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক সার্জিও গয়কোচিয়াকে। সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল মিলিয়ে টাইব্রেকারে গয়কোচিয়া মোট ৫টি শট রক্ষা করেছিলেন। এবার সুবাসিচ নকআউট ও কোয়ার্টার ফাইনাল মিলিয়ে রক্ষা করেছেন ৪টি শট। যার তিনটিই ডেনমার্কের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে।

শুধু টাইব্রেকারেই যে সুবাসিচ বীরত্ব দেখিয়েছেন, সেটি বলাটা ভুল হবে। ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপযাত্রায় গোলবারের নিচে আস্থার প্রতীক হয়ে ছিলেন পুরোটা সময়। সেমিফাইনালে খেলা টাইব্রেকারে গড়ালে ক্রোয়েশিয়া যে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে, তার পুরো কৃতিত্বটাই সুবাসিচের।

দুই গোলরক্ষকের এমন দারুণ পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপে কেবল গোল করেই নায়ক হওয়া যায় না, গোল ঠেকিয়েও দলকে জেতানো যায়। ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়ার এগারোজন বনাম এগারোজনের লড়াইয়ের ডামাডোলের মাঝেও তাই আলাদা করে নজর রাখতেই হবে জর্ডান পিকফোর্ড ও ড্যানিয়েল সুবাসিচের দিকে। দলকে ফাইনালে তুলতে পারেন কে, সেটি দেখার জন্যই এখন ফুটবল বিশ্বের অপেক্ষা।