কেন চলে গেলেন রোনালদো?

রোনালদো এপ্রিল মাসেই বুঝে গিয়েছিলেন, এই ক্লাব তাঁকে টানছে। ছবি: রয়টার্স
রোনালদো এপ্রিল মাসেই বুঝে গিয়েছিলেন, এই ক্লাব তাঁকে টানছে। ছবি: রয়টার্স
>রোনালদো বর্তমানে বিশ্বের সেরা ফুটবলার। অথচ যেটুকু সম্মান তাঁর প্রাপ্য, সেটুকু নিশ্চিত করা হয়নি ক্লাব থেকে। বেশ কিছু বিষয় নিয়ে অখুশি ছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঠিক কী কারণে ক্লাব ছাড়লেন রোনালদো?

সাফল্যই যে শেষ কথা নয়, আরও কত হিসাব থেকে যায়, তা যেন আবার প্রমাণ করলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। রিয়াল মাদ্রিদে অবিশ্বাস্য সময় কাটানোর পর ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ক্লাবটি থেকে নতুন ঠিকানায় পাড়ি জমালেন, বীরের বেশে। বিদায়বেলায় টানা তিনবার রিয়ালকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়েছেন।

টানা দুটিসহ ৪টি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন রিয়ালের হয়ে। ক্লাবটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাও রোনালদো। এমন সব সাফল্যের পরও সিআর সেভেন যে ভেতরে-ভেতরে এতটা অসুখী ছিলেন, সেটা হয়তো কেউ ধারণা করতে পারেনি। ক্লাব প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরেছিল। কর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চলছিল ঝামেলা। অনেক দিক বিবেচনা করে, অনেক ভেবেচিন্তেই নিয়েছেন এই সিদ্ধান্ত।

রিয়ালকে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়ে নিজেকে করেছেন বিশ্বসেরা। অথচ লিওনেল মেসি যেখানে বার্ষিক বেতন পাচ্ছেন ৪১ মিলিয়ন ইউরো, নেইমারের ৩৫ মিলিয়ন ইউরো, সেখানে রোনালদো পেতেন ২১ মিলিয়ন ইউরো। ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ রোনালদোর বেতন বাড়ানোর কথা বলেও শেষ পর্যন্ত আর বাড়াননি। গত বছর রোনালদো যখন ব্যালন ডি’অর জিতলেন, পেরেজ তখনো নেইমার নিয়ে মেতে আছেন। নেইমারের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘ব্যালন ডি’অর জিততে হলে রিয়ালে আসতে হবে।’

তাঁর মতো তারকা থাকার পরও নেইমারকে নিয়ে রিয়ালের এমন আগ্রহ রোনালদোকে ক্ষুব্ধ করেছিল। ক্লাব ছাড়ার হুমকিও দিয়েছেন এসব কারণে। তবে ক্লাব থেকে সেটিকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি তখন। বিষয়গুলো কিছুটা জটিল আকারই ধারণা করেছিল। কারণ, রোনালদো ক্লাবে থাকতে চাইলেও ক্লাব থেকে তাঁকে ধরে রাখার গরজ দেখানো হয়নি। বরং বিষয়টা এমন পর্যায়ে গড়িয়েছিল, রোনালদো রিয়াল ছাড়লেও কোনো সমস্যা নেই; তবে ঘোষণাটা পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই খেলোয়াড়ের মুখ থেকেই আসতে হবে, যাতে ক্লাবের ওপর সমর্থকদের কোনো অভিযোগ না থাকে।

এই সুযোগটাই নিয়েছে জুভেন্টাস। ছোটবেলা থেকেই জুভেন্টাস অনেক প্রিয় ক্লাব, সে কথা রোনালদো অনেক আগেই জানিয়েছেন। এ বছর চ্যাম্পিয়নস লিগে জুভেন্টাসকে কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় করে দিলেও জুভেন্টাস–সমর্থকেরা রোনালদোকে যেভাবে সম্মান জানিয়েছেন তুরিনে, সেটি মনে গেঁথে গিয়েছিল তাঁর। আর তখনই হয়তো মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবা পিএসজি নয়, নতুন ঠিকানা হবে তুরিন।

তবে বিশ্বের সেরা এই খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ানো যে খুব একটা সহজ হবে না, সেটা জানা ছিল ইতালির ক্লাবটির। তবে মজার বিষয় হলো, রোনালদোকে দলে ভেড়ানোর গুঞ্জন উঠতেই জুভেন্টাসের শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। আর এই বিষয়টিই আগ্রহী করে তুলেছিল তাদের, যেকোনোভাবে যদি দলে ভেড়ানো যায়, খরচ উশুল করতে সময় লাগবে না তাদের।

জুভেন্টাস সর্বশেষ শেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে। গত চার বছরে দুবার ফাইনালে উঠলেও জেতা হয়নি মে ট্রফি। তবে এবার রোনালদোকে নিয়ে ভালো কিছু আশা করতেই পারে তারা। আর রোনালদো রিয়ালের ফর্ম জুভেন্টাসেও ধরে রাখবেন—এমনটাই আশা ‘সিআর সেভেন’ ভক্তদের।