সেমিফাইনাল এলেই কী ভর করে এঁদের ওপর!

ফ্রান্সকে ফাইনালে তোলার নায়ক উমতিতি। ছবি: রয়টার্স
ফ্রান্সকে ফাইনালে তোলার নায়ক উমতিতি। ছবি: রয়টার্স
>ফরাসি ডিফেন্ডারদের সুনামটা আরও পোক্ত হলো। একেবারে মোক্ষম সময়ে ডিফেন্ডার থেকে হুট করে স্ট্রাইকার হয়ে ওঠেন তাঁরা!

ম্যাচটি যখন বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, দলটির নাম যখন ফ্রান্স, একটু খেয়াল করুন। চোখ রাখুন দলটির ডিফেন্ডারদের দিকে। না, ফ্রান্সের রক্ষণভাগে নয়, আপনাকে চোখ রাখতে হবে ফরাসিদের প্রতিপক্ষ দলের রক্ষণভাগে। ফরাসি ডিফেন্ডাররা কখন যে গিয়ে গোল করে বসে!

এবারও যেটা করলেন স্যামুয়েল উমতিতি। পরশু সেন্ট পিটার্সবার্গে ৫১ মিনিটে এই সেন্টার ব্যাকের দেওয়া একমাত্র গোলেই যে মস্কোর ফাইনালের টিকিট পেয়েছে ফ্রান্স। ১৯৯৮ সালে যে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতল, সেবার সেমিফাইনালটা কার গোলে জিতেছিল মনে আছে? লিলিয়ান থুরাম। একটি নয়, দুটি গোল করেছিলেন ফরাসি ডিফেন্ডার। মজার ব্যাপার, ১৪২ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে থুরামের গোল ওই দুটিই।

১৯৮২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল ফ্রান্স। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে ৩-৩ গোলে ড্র থাকা ম্যাচে ফ্রান্সের দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন মারিয়াস ত্রেসর নামের এক ডিফেন্ডার। যার অর্থ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের সর্বশেষ ৬ গোলের চারটিরই মালিক ডিফেন্ডাররা। শেষ চারে তাহলে শুধু শুধু ফরোয়ার্ডদের নামিয়ে কী কাজ ফরাসিদের! এভাবে ভাবলে অবশ্য রাগ করতে পারেন জিনেদিন জিদান। ২০০৬ সালে তাঁর একমাত্র গোলেই যে পর্তুগালকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স।

শুধু ফ্রান্স কেন, ২০১০ সালে স্পেনকে ফাইনালে তুলেছিলেন, কে মনে আছে? ৭৫ মিনিটে সেন্টার ব্যাক কার্লোস পুয়োলের গোলে জার্মান-বাধা পেরিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে স্প্যানিশরা। ওই বিশ্বকাপেই প্রথম সেমিফাইনালে গোল পেয়েছিলেন উরুগুয়ের ডিফেন্ডার ম্যাক্সি পেরেইরা। তাঁর দল অবশ্য জেতেনি, হল্যান্ডের কাছে হেরে যায় ২-৩ গোলে।

সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ডিফেন্ডাররা গোল করেছেন ১২টি। তবে সেমিফাইনালে গোল করা ডিফেন্ডারদের একাদশ অবশ্য বানানো যাচ্ছে না। থুরাম তো এক ম্যাচেই করেছেন ২ গোল, ২ গোল আছে জার্মানির আন্দ্রেয়াস ব্রেমারও। ১৯৮৬ ও ১৯৯০-টানা দুই বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে গোল করেছেন এই লেফট ব্যাক। ১৯৮৬ সালে ফ্রান্সের বিপক্ষে জার্মানির ২-০ গোলে জয়ের প্রথমটি ও ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ অমীমাংসিত ম্যাচের একমাত্র গোলটি। টাইব্রেকারে জিতে ফাইনালে ওঠা জার্মানরা আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রেমার দেওয়া পেনাল্টি গোলে।

বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ইতিহাসে ডিফেন্ডারদের প্রথম গোলটিও এক জার্মানের। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ২-১ গোলে হারায় সে সময়ের পশ্চিম জার্মানি। জয়সূচক গোলটি করেছিলেন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। পরের বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে সেমিফাইনালে ইতালির ৪-৩ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ইতালি, দ্বিতীয় গোলটি ডিফেন্ডার তারচিসিও বারনিচের। জার্মানির প্রথম গোলটিও করেছিলেন লেফট ব্যাক কার্ল-হেইঞ্জ শ্নেলিঙ্গার।
ত্রেসর-ব্রেমা-থুরাম হয়ে ফাবিও গ্রোসো। ২০০৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ১১৯ মিনিটে গ্রোসের গোলেই কপাল পোড়ে স্বাগতিক জার্মানির। পরে অবশ্য আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরোও করেন আরেকটি গোল। 

উমতিতির পূর্বসূরিরা

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের শেষ ৬ গোলের ৪টিই ডিফেন্ডারদের

১২

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ডিফেন্ডারদের গোল

১০

সেমিফাইনালে গোল করা ডিফেন্ডারের সংখ্যা

সবচেয়ে বেশি ২টি গোল আন্দ্রেয়াস ব্রেমা ও লিলিয়ান থুরামের