'অর্থহীন' ম্যাচেরও কত গল্প

বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচকে অনেকেই ‘অর্থহীন’ বলেন। কিন্তু এই ম্যাচেরও আছে ইতিহাস। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচকে অনেকেই ‘অর্থহীন’ বলেন। কিন্তু এই ম্যাচেরও আছে ইতিহাস। ছবি: রয়টার্স
>

• ১৯৩০ ও ১৯৫০ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ ছিল না
• তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল ফ্রান্সের জাস্ট ফন্টেইনের
• ফাইনালে মতো সবচেয়ে বেশি তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও খেলেছে জার্মানি
• ২০০২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত টানা চারটি তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জয়ী দল ৩ গোল করেছে

কারও চোখে অর্থহীন, কারও কাছে যন্ত্রণা। বলা হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের কথা। সেমিফাইনালে হারের দুঃখ ভোলার আগেই যে মাঠে নেমে যেতে হচ্ছে দুই দলকে। সান্ত্বনাসূচক এমন এক ম্যাচ আয়োজনের আসলেই কি কোনো মানে আছে, আছে কোনো গুরুত্ব?

কী উত্তর দেবেন, তা আপনার ব্যাপার। তার আগে জেনে রাখুন, একেবারে ফেলনা নয় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। যদি তৃতীয় হওয়ার লড়াইটা না-ই থাকত, তবে বিশ্বকাপ ফুটবলের যে ইতিহাস আমাদের জানা, তা অনেকটাই বদলে যেত। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ না থাকলে হয়তো জাস্ট ফন্টেইন নামটা জানাই হতো না!

১৯৫৮ বিশ্বকাপে ১৩ গোল করেছিলেন ফ্রান্সের ফরোয়ার্ড। ৬০ বছর পরও এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড হিসেবে টিকে আছে তা। হয়তো থাকবে আরও ৬০ বছর। ধরুন, তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ বলে বিশ্বকাপে কিছু নেই, কখনো ছিল না। কী হতো, বলুন তো? ফন্টেইনের বদলে এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ডে থাকত সান্দোর ককসিসের নাম। হাঙ্গেরিয়ান কিংবদন্তি ১৯৫৪ বিশ্বকাপে করেছিলেন ১১ গোল। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ৪ গোল করেই যে ককসিসকে পেছনে ফেলেন ফন্টেইন।

৮৮ বছরের ইতিহাসে মাত্র দুটি বিশ্বকাপেই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ ছিল না,১৯৩০ ও ১৯৫০ বিশ্বকাপে। ১৯৫০ সালে তো নকআউট বলে কোনো শব্দই ছিল না। বাকি বিশ্বকাপগুলোতে কম গল্প উপহার দেয়নি স্থান নির্ধারণী এই ম্যাচ। ১৯৩৮ সালে সুইডেনের বিপক্ষে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ২ গোল করেই সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন ব্রাজিলের লিওনিদাস। শুধুই কি লিওনিদাস আর ফন্টেইন, ইতালির সালভাতোর শিলাচ্চি (১৯৯০), ক্রোয়েশিয়ার ডেভর সুকার (১৯৯৮), জার্মানির টমাস মুলার (২০১০) তো সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের গোলেই। এবারও সম্ভবত আজকের বেলজিয়াম-ইংল্যান্ডের ম্যাচেই নির্ধারিত হবে সর্বোচ্চ গোলদাতা।

বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম গোলটিও কিন্তু তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচেরই উপহার। ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর ১১ সেকেন্ডের মাথায় গোল করেছিলেন তুরস্কের হাকান সুকুর। 

ব্যর্থতার ইতিহাসও আছে। ১৯৭০ বিশ্বকাপে ‘অর্থহীন’ এই ম্যাচে হ্যাটট্রিক পেলেই ফন্টেইনের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলতেন জার্মানির জার্ড মুলার। ১৯৯৪ সালে একটি গোল পেলেই এককভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে যেতেন বুলগেরিয়ার রিস্টো স্টইচকভ। তা করতে না পেরে শুধু নিজের চুল ছিঁড়তেই বাকি রেখেছিলেন বুলগেরিয়ান স্ট্রাইকার। অনেক দেশের তো বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য হয়ে আছে এই ম্যাচ জিতে তৃতীয় হওয়াটাই।
অর্থহীন ম্যাচটাতেও তাই চোখ রাখতেই হয়।