কাজী সালাউদ্দিনের সেরা '১১'

বিশ্বকাপে তারকার ভিড়ে সেরা ১১ জন বেছে নেওয়া একটু তো কঠিনই। সেই কঠিন কাজটাই করেছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকা ফুটবলার ও বর্তমান বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ফাইনালের আগ পর্যন্ত পারফরমেন্সের ভিত্তিতে সাজিয়েছেন তাঁর সেরা একাদশ।

ফর্মেশন ৪-৩-৩

গোলরক্ষক
থিবো কোর্তোয়া (বেলজিয়াম)
পজিশন জ্ঞান দারুণ। বেলজিয়াম দলটার মেরুদণ্ড। কোর্তোয়াকে পেছনে রেখে রক্ষণ খুব আরামে খেলতে পারে। রক্ষণ জানে, বাজে গোল খাবে না কোর্তোয়া। গোলরক্ষক বাজে গোল খেলে দলের মনোবল ভেঙে যায়। খেলোয়াড়ি জীবনে এমন অনেক দেখেছি। এসব ভেবেই কোর্তোয়াকে নেওয়া।

রক্ষণভাগ

বেঞ্জামিন পাভার (ফ্রান্স)
রক্ষণে নিজের কাজে সচেতন। দৃষ্টিকটু কোনো ভুল করেনি। এটাই একজন ডিফেন্ডারের বড় গুণ। তা ছাড়া এখন তো ডিফেন্ডাররা আক্রমণেও ভূমিকা রাখে, গোলও করে। পাভার তেমনই একজন ডিফেন্ডার। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে অসাধারণ এক গোল করেছে। ওর পায়ে তেমন মিস পাস দেখিনি। রক্ষণে অন্যদের সঙ্গে বোঝাপড়াটা ভালো।

স্যামুয়েল উমতিতি (ফ্রান্স)
ফরোয়ার্ডরা গোল পাচ্ছে না। হঠাৎ একজন ডিফেন্ডার গোল করে নায়ক। সেমিফাইনালে উমতিতি যেমন করল। দারুণ হেডে গোল করে ফ্রান্সকে তুলে নিল ফাইনালে। সে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না, আক্রমণে ওঠে। আজকের আধুনিক ফুটবলে এটিই দরকার। বার্সেলোনায় খেলে অনেক পরিণত। ভরসা রাখার মতো এক ডিফেন্ডার।

ভিনসেন্ট কম্পানি (বেলজিয়াম)
অলরাউন্ড ডিফেন্ডার। সবই পারে। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে চলে এলেও রানিংটা এখনো আছে। ইংলিশ লিগে চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি আর বেলজিয়াম দলের রক্ষণ সামলানো সহজ নয়। ম্যান সিটিতে খেলছে ১০ বছর হলো। এই বিশ্বকাপে দেখেছি কম্পানির নিখুঁত সব ট্যাকল। কোনো ফাউল না করে কী সুন্দর পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে!

ইয়ান ভার্তোনে (বেলজিয়াম)

বেলজিয়ামের রক্ষণ এবার এমন ছিল যে, কাকে ছেড়ে কাকে রাখি! তিন ডিফেন্ডার তত্ত্বে এবার বেলজিয়াম কোচ উইং ব্যাক রাখেননি। ভার্তোনে সেন্টার ব্যাকে খেলেছে, টটেনহাম হটস্পারেও তাই। তবে তাকে আমি লেফট ব্যাকে নেব। এই পজিশনে এবার কেউ আমাকে সেভাবে মুগ্ধ করতে পারেনি। মার্সেলোকে ভেবেছিলাম, তবে শেষ পর্যন্ত ভার্তানোই।

 মাঝমাঠ

কেভিন ডি ব্রুইনা (বেলজিয়াম)
ব্রাজিলের বিপক্ষে ওর গোলটি ভুলব না। আক্রমণ তৈরি করতে থাকে একের পর এক। শুটিং, পাসিং সবই ভালো। পরিশ্রমী, নিজের কাজটা ভালো বোঝে। এই বিশ্বকাপে অনেক ভালো ভালো মিডফিল্ডার দেখেছি। ডি ব্রুইনা ব্যতিক্রম ওর সৃষ্টিশীলতার কারণে। বেলজিয়ামকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত টেনে আনতে ওর বড় ভূমিকা।

লুকা মদরিচ (ক্রোয়েশিয়া)
আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। সেই ম্যাচে ক্রোয়াটদের খেলা দেখে এত মুগ্ধ হয়েছিলাম যে ওদের কাছে প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল অনেক। সেই প্রত্যাশার ভরকেন্দ্রে লুকা মদরিচ, যার রানিং এবং রক্ষণ ভাঙার ক্ষমতা অসাধারণ। মাঝমাঠ একটা দলের মেরুদণ্ড, মদরিচ সেই মেরুদণ্ডের মূল অংশ।

পল পগবা (ফ্রান্স)
শক্তিশালী এক মিডফিল্ডার। ট্যাকলে ওর সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন। আক্রমণে যেমন ওঠে, প্রয়োজনে ডিফেন্সিভ থার্ডেও থাকে। গোল করার ক্ষমতা আছে। উচ্চতা ভালো। সব মিলিয়ে আদর্শ এক মিডফিল্ডারের প্রতিচ্ছবি। ফরাসিরা যে এত দাপট নিয়ে খেলেছে, পগবার তাতে বড় অবদান।

আক্রমণভাগ

এডেন হ্যাজার্ড (বেলজিয়াম)
মাঠে শেষ বিন্দু দিয়ে লড়াই করতে জানে। গোল করে, করায়ও। হ্যাজার্ডের খেলা আমার খুব ভালো লাগে। এমনিতে চেলসিতে ওকে দেখি। এবার বিশ্বকাপে হ্যাজার্ড যেন নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছে। ওর থ্রুগুলো বিপজ্জনক। খেলার মধ্যে একটা সৌন্দর্য আছে।

কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স)
এমবাপ্পের মতো তরুণ রক্ত দলে থাকলে আর কী লাগে! ছেলেটার মাঠে চলাফেরাই প্রতিপক্ষের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে যথেষ্ট। আর্জেন্টিনার জালে যেভাবে বরফ শীতল মাথায় দুবার বল পাঠিয়েছে, সেটি বিস্ময়কর। এমবাপ্পের বড় গুণ, বল পায়ে দুরন্ত। ছন্দে থাকলে ওকে আটকে রাখা যেকোনো রক্ষণের জন্যই কঠিন।

লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে)

শেষ ম্যাচে ভালো কিছু করতে পারেনি। সেটার কারণ হতে পারে, স্ট্রাইকিংয়ে ওর পার্টনার কাভানি ছিল না। দুজনের জুটিটা খুব জমে। সেই প্রমাণ পেয়েছি শেষ ষোলোয় পর্তুগালের বিপক্ষে। কাভানিকে দিয়ে কী অসাধারণ গোল করাল সুয়ারেজ! গোলের রাস্তাটা খুব ভালো চেনে। চতুর, অল্প জায়গায় শরীর ঘুরিয়ে লক্ষ্যভেদে ওস্তাদ। ফর্মেশন ৪-৩-৩ এই ফর্মেশনে তিন ফরোয়ার্ডের দুজনই প্রয়োজনে মাঝমাঠে চলে আসবে। ওরা ডিফেন্সিভ কাজগুলো করবে। আবার আক্রমণেও থাকবে। আক্রমণে তিন ফরোয়ার্ড একসঙ্গে মুভ করলে গোল চলে আসতে পারে যেকোনো সময়।

কোচ দিদিয়ের দেশম (ফ্রান্স)

একটা বিশ্বমানের দল সামলাতে দরকার উঁচু পর্যায়ের একজন কোচ। বিশ্বকাপে আসা ফুটবলারদের শেখানোর তো এমন কিছু নেই। শুধু নির্দেশনা দেবে আর মাঠে তা কার্যকর করবে ফুটবলাররা। এমন একজনকে কোচ চাই, যিনি সবার সম্মান পাবেন। দেশমও সেটাই পাচ্ছেন। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক হিসেবে তাঁর আলাদা একটা মর্যাদা তো আছেই। এ কারণেই তাঁকে বেছে নেওয়া। অধিনায়ক এডেন হ্যাজার্ড মদরিচকে অধিনায়ক হিসেবে ভেবেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হ্যাজার্ডকেই আমার ভোট। মাঠে যখন বেলজিয়াম অধিনায়কের বাহুবন্ধনী নিয়ে খেলে, একটা কর্তৃত্ব থাকে ওর শরীরের ভাষায়। সতীর্থদের ওপর নির্ভর না করে নিজেই কাজটা করতে চায়। সত্যিকারের একজন নেতা হিসেবেই মাঠে খেলে।