১৯ বছর বয়সেই এত অর্জন

এই ট্রফিতে চুমু খাওয়ার সৌভাগ্য সবার হয় না। ১৯ বছর বয়সেই তা অর্জন করে নিয়েছেন ফরাসি সেনসেশন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ছবিঃ রয়টার্স
এই ট্রফিতে চুমু খাওয়ার সৌভাগ্য সবার হয় না। ১৯ বছর বয়সেই তা অর্জন করে নিয়েছেন ফরাসি সেনসেশন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ছবিঃ রয়টার্স

এদিকে মস্কোতে ম্যাচ শেষ হলো, ওদিকে ব্রাজিল থেকে এল টুইট। যিনি করেছেন, তাঁর নাম না বললেও খুব সহজেই ধরে ফেলা যাবে। টুইটটা এই, ‘কিলিয়ান যদি এভাবে আমার একের পর এক রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলতে শুরু করে, তাহলে আমাকে হয়তো আবার বুটজোড়ার ধুলো মুছে নামতে হবে!’

ইশ্‌, পেলের বয়সটা যদি শুধু এখন ৭৭ না হতো!
টুইটটা ব্রাজিল কিংবদন্তি করেছেন মজা করেই, ১৯ বছর বয়সী এমবাপ্পের জন্য যেটি তাঁর আদুরে প্রশংসাই। কিন্তু একবার কল্পনা করুন তো, তরুণ পেলে আবার মাঠে নামছেন, ছড়াচ্ছেন জাদু, ফুটবল নামের মায়াবী বিভ্রমে ঘোর লাগিয়ে যাচ্ছেন। এই তরুণ এমবাপ্পে, আর তরুণ পেলের লড়াইটা রেকর্ড বই ছাড়িয়ে গড়াচ্ছে মাঠে! যদি...!

কল্পনার গালে কঠিন বাস্তবের চপেটাঘাতে এখানেই থামতে হচ্ছে। পেলের তো আর মাঠে ফেরা হবে না। অবশ্য রাজার আর নিজেকে প্রমাণের কী আছে! ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির টুইটের এমবাপ্পের উত্তরটাও হলো সে রকম, ‘রাজা সব সময় রাজাই থাকবেন।’

এই বিশ্বকাপ এমবাপ্পের প্রাপ্তির খাতায় সর্বশেষ সংযোজনই এটি। জার্সিতে দ্বিতীয় তারকা বসেছে, ফ্রান্সকে সোনালি ট্রফিটার পাশাপাশি ২০১৮ বিশ্বকাপ তাঁর হাতে তুলে দিয়েছে সেরা উদীয়মানের পুরস্কারও। তবে রাশিয়ার ডায়েরিটা আবার খুলে বসলে এই ‘প্রাপ্তি’ও একচিলতে হাসি এনে দেবে এমবাপ্পের মুখে। পেলের মতো একজনের রেকর্ডে ভাগ বসানো, তাঁর কাছ থেকে একের পর এক প্রশংসাবৃষ্টিতে ভাসা...এ তো আর সবার ভাগ্যে হয় না!

এসব এমবাপ্পেকে ঘিরে প্রত্যাশাও বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক। এই বয়সের পেলের সঙ্গে তুলনাও বাড়াবাড়িই হয়ে যাবে, তবে সামনে পড়ে থাকা পুরো ক্যারিয়ার এমবাপ্পেকে হাতছানি দিচ্ছে কিংবদন্তিতুল্য কিছু করার। ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড নিজেও সেই স্বপ্নই দেখছেন। বিশ্বকাপ জেতার পর তাঁর প্রথম অনুভূতিই যা জানিয়ে দিল। নিজেই বলছেন, তাঁর একটা গল্প লেখার আছে। আর বিশ্বকাপটা এমবাপ্পের কাছে একটা পাসপোর্ট, যেটি কাজে লাগিয়ে ঢোকা যায় আরও উন্নতি, আর আরও পরিশ্রমের জগতে।

তেমন হলে, নিশ্চিত পেলের রেকর্ডের মতো আরও অনেক রেকর্ড লুটাবে তাঁর পায়ে। ব্রাজিল কিংবদন্তির কী কী রেকর্ড ছুঁয়েছেন, তা তো এতক্ষণে জানাই। নকআউটে এক ম্যাচে ২ গোল করার রেকর্ডটা আগেই ছুঁয়েছিলেন, পরশু হয়ে গেলেন পেলের পর বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করা দ্বিতীয় তরুণ, বয়সের হিসাবেও পেলের পর সবচেয়ে কম বয়সী। এমনি এমনি কি আর পেলে আবার মাঠে নেমে পড়তে চান!

বিশ্বকাপ তো জেতা হয়ে গেল, মহাতারকা হওয়ার পথযাত্রায় এমবাপ্পের পরের লক্ষ্যটাও এরই মধ্যে ঠিক হয়ে গেছে। গতি, পোস্টের সামনে খুনে মানসিকতা, সৃষ্টিশীলতা, পায়ের গতির চেয়েও গতিশীল ভাবনা...রাশিয়া বিশ্বকাপের পর এমবাপ্পেকে মেসি-রোনালদোদের উত্তরসূরিই ভাবা হচ্ছে! পরশু ম্যাচের পর বিবিসির বিশ্লেষক ও সাবেক ইংলিশ ডিফেন্ডার রিও ফার্ডিনান্ডই বলেছেন সবার ভাবনাটা, ‘বয়স ছাপিয়েও ও অনেক পরিণত। রোনালদো ও মেসি যার হাতে মুকুটটা দিয়ে যাচ্ছে, সেটি কিলিয়ান এমবাপ্পেই। আগামী কয়েক বছরে ও-ই থাকবে ব্যালন ডি’অরের মঞ্চে।’

মেসি-রোনালদোর নামের পাশে বিশ্বকাপ আছে হাহাকার হয়ে, এমবাপ্পের সেখানে এখনই জয়জয়কার। এবার শুধু ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখতে পারলেই হলো! কাজটা কঠিন, তবে এমবাপ্পের প্রেরণার অভাব নেই, ‘আমার নিজের একটা গল্প লেখার আছে, এটা মাত্রই শুরু। আরও অনেক দূর যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার।’ সেই যাওয়ার পথ কোন ‘বাহনে’ চড়ে, প্রসঙ্গক্রমে সে কথাও এল। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে তাঁর রিয়ালে যাওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। এমবাপ্পে সেটিতে পানি ঢেলে দিয়ে পরশু জানালেন, ‘পিএসজিতেই থাকছি!’

হয়তো এখনই ক্লাব, পরিবেশ, দেশ বদলে নিজের চলার মসৃণ পথটাকে শঙ্কায় ফেলতে চাইছেন না। ফার্ডিনান্ড যে পরিণতিবোধের কথা বলেছেন, সেটিও এতে স্পষ্ট। বিশ্বকাপ থেকে পাওয়া সব অর্থ দিয়ে দিয়েছেন একটা দাতব্য প্রতিষ্ঠানে। অঙ্কটা প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার ইউরো! জয়ের আনন্দ তাজা থাকতে থাকতেই তাঁর কথায়ও মিলল পরিণতিবোধের ছাপ, ‘ফ্রান্সের মানুষকে খুশি করার দায়িত্বের কথাটা আমাদের সব সময়ই মনে ছিল। আমরা জিতে যাওয়ায় দেশের মানুষও নিজেদের সমস্যাগুলো একপাশে রেখে উদ্‌যাপন করছে। এই অনুভূতির জন্যই তো খেলি আমরা!’

খেলেন তো উদ্‌যাপনের জন্যও। সেখানে অবশ্য তরুণের উদ্দামতা, ‘(বিছানায় গেলে) আমার ঘুম খুব তাড়াতাড়িই আসে। তবে আজ আমরা ঘুমাব না। উদ্‌যাপন করব।’ এমবাপ্পের এখন তো উদ্‌যাপন করারই সময়!