বাংলাদেশ 'দীর্ঘদেহী ও দ্রুতগতি'র বোলার পাবে কোথায়?

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আবু জায়েদের বোলিং প্রশংসিত হয়েছে, কিন্তু দরকার আরও দ্রুত গতির পেসার। ছবি: এএফপি
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আবু জায়েদের বোলিং প্রশংসিত হয়েছে, কিন্তু দরকার আরও দ্রুত গতির পেসার। ছবি: এএফপি
>ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভালো করলেও টেস্টের ভরাডুবির প্রসঙ্গটা আড়াল হচ্ছে না। বাংলাদেশ দলের কোচ স্টিভ রোডস মনে করেন, টেস্টে ভালো করতে হলে দরকার দুর্দান্ত কিছু ফাস্ট বোলার

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে ফিরেছে বাংলাদেশ। এই সাফল্যের মধ্যেও ঘুরেফিরে আসছে প্রশ্ন, ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে কেন বাংলাদেশ এতটা খারাপ করেছে? ভবিষ্যতে বিদেশের মাঠে এই সংস্করণে উন্নতি করতে হলে কী করণীয়?

গায়ানায় ওয়ানডে সিরিজ চলার সময় সাকিব আল হাসান প্রশ্ন দুটির উত্তর দিয়েছিলেন এভাবে, ‘আমাদের যদি ওই মানের ফাস্ট বোলার থাকত তাহলে মনে হয় টেস্টে আরও ভালো করতাম।’ কাল ঢাকায় পৌঁছে দলের প্রধান কোচ স্টিভ রোডসও বলেছেন একই কথা, ‘টেস্টে ভালো করতে হলে আমাদের দ্রুতগতির ও দীর্ঘদেহী পেসার দরকার, যে উইকেট বরাবর বল করতে পারবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অন্যান্য দেশের বোলাররা যেটি নিয়মিত করে থাকে।’

অধিনায়ক কিংবা কোচের চাহিদা মেনে টেস্ট উপযোগী ফাস্ট বোলার কি সরবরাহ করতে পারবে বিসিবি? কাল কোচের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ নিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের কণ্ঠে অসহায়ত্ব, ‘কোচ রাহির (আবু জায়েদ) বল পছন্দ করেছে। কিন্তু টেস্টে তিনি চান লম্বা ও দ্রুতগতির বোলার। আমাদের তো ওরকম বোলার নেই। রাহি ও রনির (আবু হায়দার) সঙ্গে তিনটা নাম বলেছি। কিন্তু ওরা খুব জোরে বল করার অবস্থায় নেই। এটাই আমাদের বাস্তবতা।’

দেশের মাঠে উপমহাদেশের বাইরের কোনো দল টেস্ট সিরিজ খেলতে এলে বাংলাদেশ নিজেদের শক্তি মাথায় রেখে তৈরি করে ঘূর্ণি উইকেট। সাকিব, মেহেদী হাসান মিরাজদের মতো দুর্দান্ত কিছু স্পিনার সেই উইকেটকে কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাফল্যও এনে দিয়েছেন। কিন্তু যখন নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দেশে খেলতে যায় বাংলাদেশ, তখন কুসুমকুমারী দাশের ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে...’ কবিতার মতো অনুভব হয়, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ফাস্ট বোলার কবে...!’

এবার টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে জেসন হোল্ডার, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কেমার রোচ কী তোপটাই না দেগেছেন। শুধু বাংলাদেশের বিপক্ষে কেন, তার আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে গতির সঙ্গে মুভমেন্ট আর নিখুঁত লাইন-লেংথে যেভাবে ব্যাটসম্যানদের নাকাল করেছেন, ক্যারিবীয় পেসাররা অন্তত নিজেদের মাঠে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সংস্করণে নিজেদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার বার্তা দিয়েছেন।

উপমহাদেশের অন্য দুটি দল ভারত-শ্রীলঙ্কা যেখানে স্পিননির্ভরতার বাইরেও পেস আক্রমণ জোরালো করতে পেরেছে, বাংলাদেশ কেন পারছে না? কেন পারছে না টেস্টের দীর্ঘ মেয়াদে ভরসা জাগানোর মতো পেসার তুলে আনতে? উত্তর খোঁজার আগে চলে আসবে পাল্টা প্রশ্ন, ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কয়টা উইকেট তৈরি হয় ফাস্ট বোলিংয়ের জন্য উপযোগী করে? হয় ন্যাড়া নতুবা স্পিনসহায়ক উইকেট, এভাবে চলছে ঘরোয়া ক্রিকেট। ফাস্ট বোলার তুলে আনতে ‘পেসার হান্ট’ নামে একটা কর্মসূচি আছে বিসিবির, যেখান থেকে উঠে এসেছেন রুবেল, রবিউল, শফিউলদের মতো পেসাররা। কর্মসূচিটা চলেছে ২০০৫, ২০০৭ ও ২০১৬—তিন দফায়। গত দুই বছর কর্মসূচিটা আবারও থমকে গেছে। এ কর্মসূচি থেকে পাওয়া পেসাররা যে টেস্ট আঙিনায় দীর্ঘদিন সেবা দিতে পারছেন, সেটিও অবশ্য নয়।

এ দেশে বোলার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে স্পিনই যেন তুলনামূলক নিরাপদ। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট শুরুর সময় একজন উঠতি ক্রিকেটার পেসের বদলে স্পিনের দিকেও বেশি করে ঝুঁকছে কি না, সেটিও ভেবে দেখার। শারীরিক গঠন, আবহাওয়াও এতে ভূমিকা রাখছে হয়তো। অনেক সময় পেসারদের টেস্ট খেলার প্রতি আগ্রহ, নিষ্ঠা, পরিশ্রম করার মানসিকতা কিংবা নিজেদের ফিটনেস ধরে রাখার ক্ষেত্রে সচেতনতা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে সাফল্যের আনন্দেও তাই ‘দীর্ঘদেহী, দ্রুতি গতি’র ফাস্ট বোলারের সংকট উদ্বেগের ছায়া ফেলছে দেশের ক্রিকেটে।