পাকিস্তানের বিপক্ষে 'হ্যাটট্রিক-গার্ল' কে এই শামসুন্নাহার?

পাকিস্তানের বিপক্ষে চার গোল করা শামসুন্নাহার। ছবি: বাফুফে
পাকিস্তানের বিপক্ষে চার গোল করা শামসুন্নাহার। ছবি: বাফুফে
>৫০ মিনিটে শামসুন্নাহার যখন মাঠে নামল পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের মেয়েরা তখন এগিয়ে ৬-০ গোলে। কিন্তু মাত্র সাত মিনিটের মাথায় সেই মেয়েটিই করে বসল হ্যাটট্রিক। কলসিন্দুরের মেয়ে এই শামসুন্নাহার জুনিয়র বাংলাদেশের নারী ফুটবলের দারুণ এক প্রতিভাই।

গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধেই ৬-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের তাই সাইড বেঞ্চে বসে থাকা খেলোয়াড়দের একটু পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পেলেন। প্রথমার্ধেই জোড়া গোল করা তহুরা খাতুনকে বসিয়ে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে নামানো হলো শামসুন্নাহার জুনিয়রকে। মাঠে নেমে মাত্র সাত মিনিটের মাথাতেই শামসুন্নাহার করে বসল হ্যাটট্রিক! ম্যাচ শেষে তার গোলের সংখ্যা চার।

৫০ মিনিটে শামসুন্নাহারের পা থেকে আসে প্রথম গোল। ৫৪ আর ৫৭ মিনিটে আরও দুই গোলে হ্যাটট্রিক, শেষ গোলটা সে করেছেন ৯০ মিনিটে। গোলগুলো তো এককথায় দুর্দান্তই। তবে হ্যাটট্রিক-গার্ল এই শামসুন্নাহার কিন্তু মনোযোগের দৃশ্যপটে একেবারে নতুন নয়। এর আগে হংকংয়ের চার জাতি জকি কাপে সে হয়েছিল সেরা খেলোয়াড়।
ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার মুক্তাগাছায় শামসুন্নাহারের বাড়ি। এই বিস্ময়-প্রতিভার ফুটবল হাতেখড়ি আর উঠে আসা নারী ফুটবলের সেই বিখ্যাত ‘খনি’ হিসেবে পরিচিত কলসিন্দুর গ্রাম থেকে। সে গ্রামের মফিজ মাস্টারের হাতে হাতেখড়ি। ছোটবেলায় মাকে হারানো মেয়েটির বেড়ে ওঠা বাবা নেকবর আলী ও বড় বোনদের স্নেহে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ধোবাউড়ার কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী শামসুন্নাহারই সবার ছোট। শুধু পরিবার নয়, দলের মধ্যেও হয়তো সে কনিষ্ঠতম! শারীরিক উচ্চতা অনেক কম হওয়ায় দূর থেকে দেখলেও অনেকের মধ্য থেকে খুব সহজেই চেনা যায় এই কিশোরীকে। খর্বকায় এই মেয়েটি মাঠে নামলে পুরোপুরি অন্য জিনিস। ওকে ঠেকিয়ে রাখবে, সে সাধ্য আছে কার! গতি ও বলের নিয়ন্ত্রণে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারে সে অনায়াসেই।
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়েই উত্থান শামসুন্নাহারের। ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে জয় করেছিল গোল্ডেন বুট পুরস্কার। ২০১৫ সালে জেতে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি। স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলে সুযোগ হয়ে যায়। গত বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত কিশোরী সাফে দলে থাকলেও সেভাবে খেলার সুযোগ হয়নি। এবার বিদেশের মাটিতে শুরুর দিনই বদলি হিসেবে চার গোলের ধামাকা।
থিম্পুতে এই শামসুন্নাহারের দিকে অন্য দলগুলির যে বাড়তি দৃষ্টি থাকবে, এটা বলাই যায়। বিশেষ দৃষ্টি থাকবে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদেরও।