বাংলাদেশ বদলে যাচ্ছে যার ছোঁয়ায়

এশিয়াডে বাংলাদেশ কোচের বড় ভরসা দুই পুরোনো সৈনিক চয়ন-জিমি। ছবি: প্রথম আলো
এশিয়াডে বাংলাদেশ কোচের বড় ভরসা দুই পুরোনো সৈনিক চয়ন-জিমি। ছবি: প্রথম আলো

গোবিনাথন কৃষ্ণমূর্তি কোচ হিসেবে কেমন? কী পরিবর্তন এনেছেন দুই মাস ধরে জাতীয় হকি দল নিয়ে কাজ করে? 

প্রশ্ন দুটি বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের মধ্য ছুড়ে দিলে চারটি উত্তর এল। এক, এই মালয়েশিয়ান কোচ ম্যাচের সময় খেলোয়াড় বদলটা বেশি করেন। কয়েক মিনটি পরপরই একসঙ্গে তিন-চারজন। যাতে ক্লান্তির বদলে পুরো দম নিয়ে নতুন খেলোয়াড় খেলতে পারেন। দুই, ভিডিও সেশনে খুব গুরুত্ব দেন। তিন, পেনাল্টি কর্নারে উন্নতি হয়েছে। চার, সবার মধ্যে এই বিশ্বাস ছড়িয়েছে যে ‘আমরা পারব।’

কিন্তু মজার ব্যাপার, নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নিয়ে এশিয়ান গেমসে যাচ্ছেন না কোচ গোবিনাথন। বাংলাদেশ দল এশিয়াডে যাওয়ার আগে বলা হতো, ষষ্ঠ বা সপ্তম হতে চাই, এবার তা নয়। এবার ‘যতটা ভালো করা যায়’ তত্ত্ব। অর্থাৎ লক্ষ্যটা উন্মুক্ত। পঞ্চম হওয়া গেলে সেটি হবে এশিয়াডে বাংলাদেশের সেরা ফল। সহকারী কোচ আশিকুজ্জামান তো বলছেনই, ‘আমাদের পঞ্চম-ষষ্ঠ স্থানের জন্য খেলা উচিত।’

বিশ্বকাপের জন্য তৈরি হচ্ছে বলে চীন এবার এশিয়াডে খেলছে না। যে কারণে একটু সুবিধাই হয়েছে বাংলাদেশের। এখন ভারত, পাকিস্তান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া-সেরা চারটি দল বাদ দিলে পঞ্চম-ষষ্ঠ হওয়ার লড়াইয়ে জাপানই একমাত্র এগিয়ে থাকছে বাংলাদেশের চেয়ে। কিন্তু কাজাখস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার আগেই বাংলাদেশের আসল লড়াইটা ২০ আগস্ট ওমানের সঙ্গে।

কেমন করবে বাংলাদেশ? কাল মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে অনুশীলনের ফাঁকে আশিকুজ্জামান বললেন, ‘গোবিনাথন এসে আমাদের ফরমেশন বদলে ফেলেছেন। আগে ডি-এর ভেতর আমরা তেমন বিপজ্জনক পাস খেলতে পারতাম না, এখন হচ্ছে। পেনাল্টি কর্নারে রক্ষণটাও ভালো হয়েছে।’
পেনাল্টি কর্নার বিশেষজ্ঞ মামুনুর রহমান চয়নের চোখে এই কোচ একটু ব্যতিক্রম, সবকিছুর গভীরে গিয়ে কাজ করছেন, ‘পেনাল্টি কর্নার আমরা আগে ভাবতাম পোস্টের কোনা দিয়ে মারলে গোল হবে। উনি বোঝালেন, গোলকিপারও ভাবে পোস্টের কোনা দিয়ে মারবে। অথচ তার আশপাশ দিয়ে মেরে গোল করার সুযোগটা নেওয়া যায়। এভাবে আমরা আগে ভাবিনি।’

এটি হবে চয়নের চতুর্থ এশিয়ান গেমস। এর আগে মুসা মিয়া রেকর্ড চারটি এশিয়ান গেমসে খেলেছেন। এবার তাঁকে ছুঁয়ে ফেলার আশায় চয়ন ভীষণ খুশি, ‘এটা বিরাট অর্জন আমার জন্য। শৃঙ্খলা ছাড়া এত লম্বা সময় খেলা অসম্ভব।’ ২০১৪ ইনচন এশিয়াডে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নিষিদ্ধ না থাকলে রাসেল মাহমুদ জিমিরও চতুর্থ এশিয়ান গেমস হতো এটি।
চয়ন বললেন, ‘কোরিয়ার সঙ্গে আমরা ড্র করে এসেছি প্রস্তুতি ম্যাচে। এখানে অনেকে বিশ্বাস করছে না। তবে এটা সত্যি। ওই আত্মবিশ্বাসটা কাজে লাগবে জাকার্তায়।’ জিমির কথা, ‘আমরা প্রচুর পরিশ্রম করছি। এই কোচ দলে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করছেন।’

দুই ‘বর্ষীয়ান’ খেলোয়াড় জিমি-চয়নকে কেমন দেখছেন? প্রতিবাদের সুরে গোবিনাথন বলেন, ‘ওদের আমি বর্ষীয়ান বলব না। ওরা হয়তো শতাধিক ম্যাচ খেলেছে, বর্ষীয়ান তখনই বলতাম, যখন ওরা দুই শর ওপরে ম্যাচ খেলত।’
বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা ম্যাচ খেলার বেশি সুযোগ পান না। ভারত এ বছর যেমন ৭০টির মতো ম্যাচ খেলেছে। বাংলাদেশ মাত্র ১৬টি। গোবিনাথনের এখানেই দুঃখ, ‘বাংলাদেশের অনেক বেশি ম্যাচ খেলা দরকার, যাতে তরুণদের সুযোগ দিয়ে তৈরি করে নিতে পারি।’ বলছেন, ‘শুরুতে আমি পাসিং এবং বল রিসিভিং নিয়ে কাজ করেছি। উন্নতির জায়গা আছে অনেক। এ জন্য সময়ের দরকার।’

আধুনিক হকিতে গতির সঙ্গে তাল মেলাতে খুব ভালো ফিটনেস দরকার। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের তা নেই। ফিটনেস-স্কিল বাড়াতে চাই ভালো মানের লিগ। যেটি বাংলাদেশে নেই বলেও আক্ষেপ কোচের। তাঁর চোখে, বাংলাদেশ দলে সমস্যা রয়ে গেছে গোল আদায়ে। তবে পেনাল্টি কর্নারে কিছু ফ্লিকার থাকে, যারা ফ্লিকে গোল করে থাকে। এই জায়গায় চয়ন, আশরাফুলদের ওপর ভরসা রাখছেন কোচ। তাঁর সবচেয়ে বেশি ভরসার জায়গা বোধ হয় দুই পুরোনো সৈনিক জিমি-চয়নের অভিজ্ঞতা।