ভুটানও পাত্তা পেল না, ফাইনালে বাংলাদেশ

>
বাংলাদেশের স্ট্রাইকার আনুচিং মগিনিকে আটকানোর চেষ্টায় ভুটানের গোলরক্ষক। ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশের স্ট্রাইকার আনুচিং মগিনিকে আটকানোর চেষ্টায় ভুটানের গোলরক্ষক। ছবিঃ সংগৃহীত

কে জানত ফাইনালে ওঠার লড়াইটা এমন একপেশে হবে? ঢাকায় গত বছর মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ সাফের রাউন্ড রবিন লিগে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবারের ভুটান দলটা ছিল বেশ বদলে যাওয়া। কিন্তু সেই ভুটানকে উড়িয়ে দিয়ে আজ সেমিফাইনালে বাংলাদেশ জিতেছে ৫-০ গোলে। এই জয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে গেছে বাংলাদেশ।

ম্যাচের প্রথম দুটি গোল করেছে যমজ বোন আনাই মগিনি ও আনুচিং মগিনি। তহুরা খাতুন, মারিয়া মান্দা ও শাহেদা আক্তার করেছে একটি করে গোল। এরই মধ্যে টুর্নামেন্টে তিন ম্যাচে ২২ গোল করে ফেলেছে বাংলাদেশ! দিনের অন্য সেমিফাইনালে ভারত ২-১ গোলে হারিয়েছে নেপালকে। গতবারের মতো এবারও ফাইনালে মুখোমুখি ভারত ও বাংলাদেশ। ফাইনাল ১৮ আগস্ট শনিবার।

প্রতিপক্ষ স্বাগতিক বলেই কিনা মাঠের লড়াইয়ের আগেই গ্যালারিতে শুরু হলো আরেক লড়াই। বাদ্যি-বাজনা বাজিয়ে গ্যালারির এক পাশে হাজারখানেক ভুটানি দর্শক মাতিয়ে রাখল স্টেডিয়াম। ভুটানে কর্মরত বাংলাদেশি অনেক দর্শকও এসেছিলেন। সময় যত গড়াচ্ছিল বাংলাদেশের দর্শকেরা ততই আনন্দে ভেসেছেন। আর প্রথমার্ধ শেষ হতেই চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামের গ্যালারি খালি হতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশের মেয়েদের গতি আর ছন্দময় ফুটবলের কথা জেনেই কিনা ভুটানি কোচ শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলিয়েছেন। গোল পেতে বাংলাদেশকে তাই দূরপাল্লার শট নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। এবং সেই কৌশলেই প্রথম গোলটা এসেছে আনাইয়ের কাছ থেকে। ১৯ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া আনাইয়ের ডান পায়ের জোরালো শটে বল জালে (১-০)।

বলতে গেলে বেশির ভাগ সময়ই বাংলাদেশের পোস্টের নিচে অলস সময় কেটেছে গোলরক্ষক মাহমুদা আক্তারের। বাংলাদেশ দল এতটাই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে যে কখনো কখনো বক্স ছেড়ে মাঝবৃত্তের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে থেকেছে মাহমুদা। মারিয়া, মণিকাদের পাসিং ফুটবলে মুগ্ধ দর্শকেরা একটু পরপরই সিটি বাজিয়েছেন। করতালি দিয়েছেন তুমুল জোরে। ৩৮ মিনিটে দারুণ একটা ভলিতে বাংলাদেশের ব্যবধান দ্বিগুণ করেছে আনাইয়ের চেয়ে মিনিট তিনেক পরে পৃথিবীতে আসা আনুচিং। আর ৪৪ মিনিটে তৃতীয় গোল দিয়েছে তহুরা। ভুটানের গোলরক্ষক কিংজাং দেমার হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বলে আলতো টোকায় তহুরা আন্তর্জাতিক ফুটবলে করেছে নিজের ২৯তম গোল। বলতে গেলে ম্যাচ তখনো শেষ।

কিন্তু যে দলে প্রায় সাত-আটজন গোল স্কোরার, সেখানে অন্যরা গোল না করলে কি মানায়? ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন কালও বেশ কবার ওভার ল্যাপিং করে ভুটানের অর্ধে ঢুকে পড়েছে। কয়েকবার দূরপাল্লার শটও নিয়েছে। একবার তো ভুটানের রক্ষণের সামনে দাঁড়ানো আনুচিংয়ের পিঠে লাগায় নিশ্চিত গোল হয়নি। অধিনায়ক মারিয়া মান্দার দেওয়া ম্যাচের চতুর্থ গোলটি ছিল চোখে মায়াঞ্জন বুলিয়ে দেওয়ার মতো। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে নেওয়া রংধনু শটটি ভুটানের গোলরক্ষক কিংজাংয়ের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। টুর্নামেন্টে এটা মারিয়ার চতুর্থ গোল। এরপর ৮২ মিনিটে ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢোকা শাহেদা আক্তার দারুণ প্লেসিংয়ে করেছে ম্যাচের পঞ্চম গোল। কক্সবাজারের উখিয়ার কিশোরী কালই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেছিল। তহুরার বদলি হিসেবে নেমে কী দারুণভাবেই না অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখল গত যুব গেমসের আবিষ্কার বিকেএসপির ফুটবলার শাহেদা!

ম্যাচ শেষে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের মুখে ছিল তৃপ্তির ছোঁয়া, ‘আমরা প্রতিটি ম্যাচ ধরে ধরে খেলতে চেয়েছি। আমাদের লক্ষ্যই ছিল এটা। এভাবেই ফাইনালে উঠতে চেয়েছিলাম আমরা। এই জয়ে সব কৃতিত্ব মেয়েদের। তা ছাড়া এত দিন গোল পাচ্ছিল না বলে যে সমালোচনা হয়েছে আনুচিংকে নিয়ে, সে আজ গোল করে এর জবাব দিয়েছে। আসলে আমাদের দলের সবাই গোল স্কোরার। ফাইনালেও আমরা সর্বশক্তি দিয়ে খেলে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’

বাংলাদেশ দল: মাহমুদা, আনাই, শামসুন্নাহার সিনিয়র, নাজমা, আঁখি, নীলা, মনিকা (শামসুন্নাহার জুনিয়র), মারিয়া, আনুচিং, তহুরা (শাহেদা), সাজেদা।
গোলদাতা: (আনাই ১৮ মি., আনুচিং ৩৮ মি., তহুরা ৪৪ মি. মারিয়া ৬৮ মি. শাহেদা ৮২ মি.,)