৩২ বছরে কিছু না কিছু মিলেছে, কিন্তু এবার?
>৩২ বছর পর এশিয়ান গেমস থেকে এবার সম্ভবত শূন্য হাতে ফিরছে বাংলাদেশ। ২ সেপ্টেম্বর গেমস শেষ হওয়ার এত আগেই হয়তো সরাসরি কথাটা বলা যায় না। তবে পদক জেতার আশা আসলে আর কোনো ইভেন্টে নেই
পালেমবাংয়ের জাকাবাং শুটিং রেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ক্রিস্টিয়ানসেন ক্লাউস। ভিলেজে ফিরতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা। বাংলাদেশ শুটিং দলের রাইফেল কোচকে প্রশ্ন করা গেল, এই যে শুটিং ফেডারেশন অলিম্পিকে পদকের আশা নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে অনুশীলন করছে, কী মনে হয়, এশিয়ান গেমসেই যেখানে দুরবস্থা, সেখানে অলিম্পিক পদক কি আরও দূর আকাশের তারা নয়?
ক্রিস্টিয়ানসেনের বক্তব্যের সার কথা এই এশিয়ান গেমসে আসা বাংলাদেশের প্রতিটি সদস্যেরই নিশ্চিত উপলব্ধি, ‘বেশি খেলার সুযোগ না হলে এখানে এসে মাথা তুলে দাঁড়ানো যাবে না। দেখুন, কমনওয়েলথে রুপাজয়ী বাকি এখানে ১০ মিটারে ১৯ তম, ১০ মিটার পিস্তলে শাকিল ২২ তম। বুঝতেই পারছেন, এখনো কতটা পিছিয়ে আমাদের অ্যাথলেটরা।’
ভালো প্রস্তুতি এবং দীর্ঘ মেয়াদে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে এশিয়ান গেমসে আসতে হবে শুধু অংশ নেওয়ার জন্য। অবশ্য অলিম্পিকের সেই মর্মবাণী, ‘পদক নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা’ মেনে বাংলাদেশ বরাবর এশিয়ার বৃহত্তম এই গেমসে এসেছে দল ভারী করে। আরও কত দিন আসবে কে জানে!
তবে এত দিন দেশে ফেরার আগে তবু পদক তালিকায় নিজেদের নামটা দেখতে পেত বাংলাদেশ। এবার সম্ভবত আর সেই ‘সৌভাগ্য’ও হচ্ছে না। অন্তত একটি পদকের আশা ছিল যে ইভেন্টটির কাছে, সেটিও ধরাশায়ী-মহিলা কাবাডি। গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালেই যেতে পারেনি নারী কাবাডি দল।
যার পরিণাম ৩২ বছর পর এশিয়ান গেমস থেকে এবার শূন্য হাতেই ফিরছে বাংলাদেশ। ২ সেপ্টেম্বর গেমস শেষ হওয়ার এত আগেই হয়তো সরাসরি কথাটা বলা যায় না। তবে পদক জেতার আশা আসলে আর কোনো ইভেন্টে নেই। ব্রিজে প্রথম তিন ম্যাচেই জয়। কাল চতুর্থ রাউন্ড চলার সময় ১১তম ছিল বাংলাদেশ। আরও তিন রাউন্ড বাকি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পদকের আশা নেই। আজ থেকে শুরু গলফে অলৌকিক কিছু ঘটবে, সেটিও মনে করছেন না কেউ।
পেছনে তাকালে দেখা যাচ্ছে, ২০১০ গুয়াংজু এশিয়াডে ছেলেদের ক্রিকেট সোনা জেতে বাংলাদেশ। গেমসে সেটিই বাংলাদেশের একমাত্র সোনা। মেয়েরা এনেছে রুপা। এবার ক্রিকেট নেই, তাই মেয়েরা কাবাডিতে পদক পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু এখানে এসে নারী কাবাডি দল দেখল পদক জেতার সামর্থ্যটা এখন ঢাকা-জাকার্তা হেঁটে আসার মতোই কঠিন ব্যাপার। যে ম্যাচটিতে জয়ের আশা ছিল নারী কাবাডি দলের, সেটিতে ৪৪-২৮ পয়েন্টে বড় হার চীনা তাইপের কাছে। তাইপের মেয়েদের ফিটনেস-টেকনিক এত ভালো যে বাংলাদেশের মালেকা পারভীনেরা সত্যিকার অর্থে কোর্টে দাঁড়াতেই পারেননি।
গত দুবার যে কোরিয়াকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন মেয়েরা, এবার সেই কোরিয়াও বাংলাদেশকে হারিয়েছে। ইরানের কাছে হার তো ছিল অনিবার্য। হিজাব পরা ইরানের মেয়েরা কাল ভারতকে হারিয়ে জিতেছে কাবাডির সোনা। ভারতের কাছে যা বজ্রাঘাত।
১৯৭৮ ব্যাংকক এশিয়াডে প্রথম নাম লেখিয়ে পদশূন্য ছিল বাংলাদেশ। ১৯৮২ দিল্লি এশিয়াডেও দেখা মেলেনি পদকের। তবে ১৯৮৬ সিউল এশিয়ান গেমসটা হয়ে আসে আশীর্বাদ। বক্সিংয়ে মোশাররফ হোসেন গলায় তোলেন ব্রোঞ্জ পদক। এখন পর্যন্ত এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তিগত পদক ওটাই। ১৯৯০ সালে পুরুষ কাবাডির সংযোজন পদকের ঘরে দাগ ফেলতে বড় সহায় হয়ে আসে বাংলাদেশের সামনে। তখন কাবাডি খেলতই হাতে গোনা কয়েকটি দল। ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।
কম প্রতিদ্বন্দ্বিতার সেই সময় কাবাডির সৌজন্যে পদক তালিকায় নাম উঠছিল বাংলাদেশের। ১৯৯০,১৯৯৪ ও ২০০২ গেমসে পুরুষ কাবাডি এনে দেয়ে টানা তিনটি রুপা। ১৯৯৮ আর ২০০৬ সালে ব্রোঞ্জ। গত দুটি গেমসে পুরুষ কাবাডিতে কোনো পদক নেই। সেই অতৃপ্তি দূর করে দিয়েছিল নারী কাবাডি দল, যারা গত দুবারই এনেছে ব্রোঞ্জ। এবারও পদকের আশাহীন পুরুষ কাবাডিতে পদক না আসায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে নারীদেরও খালি হাতে ফেরা কষ্টদায়কই। জাতীয় খেলা কাবাডির এমন পতন দুঃখজনক।
অন্যরা এত এগিয়েছে গেছে যে পুরুষ কাবাডিতে ভারতের শ্রেষ্ঠত্বের দেয়ালই ধসে পড়েছে। গ্রুপে দুটি ম্যাচ হেরে সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি। কোরিয়ার কাছে হাড্ডাহাড্ডি হার। ইরানের কাছে হারটা অনেক বড়। বোঝাই যাচ্ছে, সাম্রাজ্য ধরে রেখে বেশি দিন শাসন করা যায় না। ভারতের সাংবাদিকেরা বলছেন, কাবাডিতে ভারতের রাজদণ্ড ফিরে পাওয়া অনেক কঠিন হবে। ইরান-কোরিয়ার নামের একদা ‘সৈনিক’ অনেক পেছন থেকে উঠে এসে উল্টো চেপে ধরেছে ‘রাজা’কে।
উল্টো দিকে দেখুন, এত দিন এশিয়াডে এসে খাবি খাওয়া বাংলাদেশের ফুটবল দল এবার অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো করেছে। এই প্রথম উঠেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে। আগে সব সময় ফিরতে হয়েছে গ্রুপ থেকেই। সেই ইতিহাস এবার ফুটবল দল পাল্টে দিয়েছে। হকিতে ওমান ও উজবেকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর কাল মালয়েশিয়ার কাছে হার। তবে ওমানের বিপক্ষ জিততে পারাটাই আসল, সেই অনুভূতি সুখের।
আর্চারিতে রিকার্ভ ইভেন্ট রোমান সানা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে উঠতেই বাদ পড়ে গেলেন বৃহস্পতিবার। কোয়ার্টারের কোয়ালিফাইংয়ে রিও অলিম্পিকের সেমিফাইনালিস্ট স্বাগতিক ইন্দোনেশিয়ার সালসাবিলা আগাতার কাছে ৬-৪ পয়েন্টে হার সানার। প্রথম দুই সেট হেরে পরের দুই সেটে ফিরে আর পারলেন না। এটা একটা আশার জায়গা ছিল। শেষ আটে ওঠাটাও কম অর্জন নয়।
তবে এসব ইভেন্টে তো আর পদকের আশা নেই। যতটা ভালো করা যায় তাই ঢের। কিন্তু ৩২ বছর পর পদকশূন্য থাকছে বাংলাদেশ-এই বাক্যটার তাৎপর্য উপলব্ধি করে মাথাভারী ক্রীড়া প্রশাসনের ঘুম যদি এবার ভাঙে!
এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ | |||
| সোনা | রুপা | ব্রোঞ্জ |
১৯৭৮ | - | - | - |
১৯৮২ | - | - | - |
১৯৮৬ | - | - | ১ |
১৯৯০ | - | ১ | - |
১৯৯৪ | - | ১ | - |
১৯৯৮ | - | - | ১ |
২০০২ | - | ১ | - |
২০০৬ | - | - | ১ |
২০১০ | ১ | ১ | ১ |
২০১৪ | - | ১ | ২ |
২০১৮ | - | - | - |