ক্রিকেটার বন্ধু মুশফিক চলছেন, তিনি বলছেন বিদায়

জাতীয় দলের জার্সিতে আগামীকাল শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন মামুনুর রহমান চয়ন। সংগৃহীত ছবি
জাতীয় দলের জার্সিতে আগামীকাল শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন মামুনুর রহমান চয়ন। সংগৃহীত ছবি
>বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) একই ব্যাচের ছাত্র ছিলেন ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও হকির মামুনুর রহমান চয়ন। ক্রিকেটার বন্ধু মুশফিকুর এখনো ব্যাট হাতে ও উইকেটের পেছনে অবিসংবাদিত নেতা। টার্ফে চয়নের দাপটও কম নয়। কিন্তু এখনই স্টিক তুলে রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী ডিফেন্ডার।

জাতীয় দলের জার্সিতে মেঘে মেঘে বেলা তো কম হলো না। দেখতে দেখতে প্রায় এক যুগ। সেই ২০০৬ থেকে শুরু, এখনো চলছে বেশ। নামের পাশে যোগ হয়েছে চারটি এশিয়ান গেমস খেলারও বিরল অর্জন। আর নয়, এবার স্টিকটা তুলে রাখতে চাইছেন বাংলাদেশের হকি তারকা মামুনুর রহমান চয়ন।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) একই ব্যাচের ছাত্র ছিলেন ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও হকির মামুনুর রহমান চয়ন। দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ক্রিকেট মাঠে বন্ধু মুশফিক এখনো খেলে যাচ্ছেন দাপটের সঙ্গে। টার্ফে চয়নের দাপটও কম নয়। কিন্তু এখনই স্টিক তুলে রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী ডিফেন্ডার।

এশিয়ান গেমস বাছাইপর্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক হকিতে চয়নের যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালে। সে বছরই খেলেছেন নিজের প্রথম এশিয়ান গেমস। টানা ১২ বছর জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা অভিজ্ঞ চয়ন এখনো পর্যন্ত খেলেছেন চারটি এশিয়াড। দাঁড়ি টানতে যাচ্ছেন এখানেই। আর মাত্র আর একটি ম্যাচ। আগামীকাল দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক হকি থেকে অবসর নিচ্ছেন চয়ন।

আগে শুধু ফরিদপুর শহরে চয়নেরই পাড়ার বড় ভাই মুসা মিয়া খেলেছেন চারটি এশিয়াড। চাইলে আরও কয়েক বছর খেলে মুসার রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করে দেখতে পারতেন। বয়স ৩০ হলেও এখনো তিনি জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এত দিন জাতীয় দলের ৮০ শতাংশ পেনাল্টি কর্নারই নিয়েছেন চয়ন। গোলও পেয়েছেন অনেক। ডিফেন্ডার হয়েও দেড় শর মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৭০-৮০টি গোল, যার ৮০-৯০ শতাংশই পেনাল্টি কর্নার থেকে। আন্তর্জাতিক হকিতে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮টি হ্যাটট্রিক করেছেন, যা তাঁকে অন্যদের চেয়ে করেছে আলাদা।

বেশ দাপটের সঙ্গেই খেলে যাচ্ছিলেন। অবসরে যাচ্ছেন না কেন, সেই প্রশ্নও কখনো জোরেশোরে শোনা যায়নি। কিন্তু পরিবারের কথা ভেবেই জাতীয় দলকে বিদায় বলে দিচ্ছেন ৩০ বছর বয়সী চয়ন। অবসরের ভাবনা নিয়ে আজ সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে এক আবেগময় বার্তা দিয়েছেন। যার প্রতিটি লাইনে লুকিয়ে আছে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও হকির প্রতি মায়া।

পুরস্কার নিচ্ছেন চয়ন। সংগৃহীত: ছবি
পুরস্কার নিচ্ছেন চয়ন। সংগৃহীত: ছবি

চয়নের বার্তাটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো
‘বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলে দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিনিধিত্ব করা আমার জন্য অনেক গর্বের এবং সম্মানের। আমি জাতীয় দলে দীর্ঘদিন সহকারী অধিনায়ক তারপর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছি। আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য এবং বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।

হকি থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি, হকি আছে বলেই আজ আমি চয়ন। আমার সব ভক্ত, পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আমাকে সব সময় সমর্থন করার জন্য। এই সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে কখনো ভালো খেলেছি কখনো খারাপ খেলেছি কখনো বাংলাদেশ দলের হয়ে গোল করতে পেরেছি কখনো পারি নাই কিন্তু আমি সব সময় চেষ্টা করেছি মাঠে আমার সর্বোচ্চ দেওয়ার। আমি আমার ভক্তদের সব সময় সব ম্যাচে খুশি করতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইছি

এই মুহূর্তে দল হিসেবে আমরা খুব ভালো খেলছি। আমাদের টিমের মধ্যে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। যেকোনো দলকে আমরা গোল দেওয়ার ক্ষমতা রাখি। যদি বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সঠিক পরিকল্পনা থাকে, তাহলে আমার বিশ্বাস, আমরা একদিন ওয়ার্ল্ড কাপ খেলব আর সেদিন বেশি দূরে নয়। আমি মনে করি বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল থেকে অবসর নেওয়ার এটাই আমার উপযুক্ত সময়। কালকে কোরিয়ার সঙ্গে ম্যাচ হবে আমার জাতীয় দলে খেলা শেষ ম্যাচ। আমার ফ্যামিলি সেটাই চায়।

আমি আমার বাবা-মার একমাত্র ছেলে। আর আমারও একটাই ছেলে, ওর বয়স তিন বছর। আমার ছেলেটা কীভাবে বড় হলো। কীভাবে হাঁটা শিখল। কীভাবে কথা বলা শিখছে। আমি কিছুই দেখতে পারি নাই। সবকিছু ফোনে শুনতে হয়েছে আর কত ঈদ যে দেশের বাইরে করেছি তার হিসাব নেই। এখন থেকে আমার পুরোটা সময় আমি আমার ফ্যামিলিকে দিতে চাই, আমার ছেলেকে দিতে চাই। হয়তো বুকে আর জাতীয় পতাকা দৃশ্যমান থাকবে না।

তবে দেশের প্রতি ভালোবাসা সব সময় থাকবে। হকির প্রতি ভালোবাসা সব সময় থাকবে। অনেক মিস করব আমার সাথে জাতীয় দলে খেলা সকল খেলোয়াড়দের। কত যে মজার স্মৃতি আছে বলে শেষ করা যাবে না। অনেক মিস করব খেলার আগে শুরু হওয়া আমাদের জাতীয় সংগীতকে। অন্য দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমাদের নিজেদের জাতীয় সংগীত গাওয়ার অনুভূতি যে কী তা বলে বোঝানো যাবে না।

যা-ই হোক আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন আমার ফ্যামিলিকে নিয়ে ভালো থাকতে পারি এবং আমার কর্মস্থান বাংলাদেশ নৌবাহিনী হকি দলকে সকল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি। আমি মামুনুর রহমান চয়ন সজ্ঞানে স্বইচ্ছায় কারও প্রতি কোনো অভিযোগ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল থেকে অবসর গ্রহণ করলাম।’