স্বপ্নার দুই পায়ে বারো আঙুল, সোনা জিততে কেঁদেছেন যন্ত্রণায়

ভারতকে হেপ্টাথলনে সোনা জিতিয়েছেন স্বপ্না। পায়ে তাঁর ১২ আঙুল। ছবি: এএফপি
ভারতকে হেপ্টাথলনে সোনা জিতিয়েছেন স্বপ্না। পায়ে তাঁর ১২ আঙুল। ছবি: এএফপি
>

দুই পায়ে ১২ আঙুল স্বপ্নার। তা দিয়েই এশিয়ান গেমস হেপ্টাথলনে জিতেছেন সোনা। ১২ আঙুলের জন্য মানানসই জুতো নেই বলে ছোটার সময় পায়ে তীব্র যন্ত্রণা হয়। অবশ্য এরপর থেকে তাঁর জন্য বানানো হবে বিশেষ জুতা

মুখে ছিল সোনার হাসি। কিন্তু পায়ে অসহনীয় যন্ত্রণা। এশিয়ান গেমসে হেপ্টাথলন জয়ের পর সোনালি সেই হাসি নিয়ে নিজের কষ্টের কথা বলেছিলেন স্বপ্না বর্মণ। সোনার মেয়ের কষ্ট কমাতে এগিয়ে এসেছে ভারতের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। ঘোষণা দিয়েছে নাইকি থেকে তাঁর জন্য বিশেষ জুতা তৈরি করিয়ে আনার।

জলপাইগুড়ির মেয়ে স্বপ্না জন্মই নিয়েছেন অঙ্গবৈকল্য নিয়ে। ছয়টি করে দুপায়ে তাঁর ১২টি আঙুল। এই অসংগতির কারণে দৌড়ানোর সময় পায়ে খুব ব্যথা হয়। এশিয়ান গেমসে হেপ্টাথলনে তাঁর সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে শেষ ইভেন্ট ৮০০ মিটার দৌড়ানোর সময়। সোনা জয়ের পর স্বপ্নার কষ্টের কথা টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারেন রেলওয়ের কামরা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির মহাব্যবস্থাপক সুধাংশু মানি। কথাগুলো শুনে স্বপ্নার জন্য কিছু করার ইচ্ছা হয়েছে তাঁর।

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে মানি বলেছেন, ‘আমরা নাইকির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাঁর (স্বপ্না) ফিরে আসার অপেক্ষা করছি আমরা, যাতে আমরা তাঁর পায়ের মাপটা জানতে পারি।’ হেপ্টাথলনের সাতটি ইভেন্টে অংশ নিতে স্বপ্নার চার জোড়া বিশেষ জুতা লাগবে বলে জানিয়েছেন মানি।

জলপাইগুড়িতে জন্ম নেওয়া স্বপ্না বেড়ে উঠেছেন চা-বাগানে। মা বাসনা বর্মণ ছিলেন চা-বাগানের শ্রমিক। বাবা চালাতেন রিকশা। কিন্তু এখন আর রিকশা চালাতে পারেন না স্বপ্নার বাবা। স্ট্রোক করায় কয়েক বছর ধরেই শয্যাশায়ী। তাঁকে দেখাশোনা করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বাসনাও। ২১ বছর বয়সী স্বপ্নাদের সংসার চলে পাথরের কোয়ারিতে কাজ করা ভাইয়ের আয়ে।

এশিয়ান গেমসে স্বপ্নার সোনা জয় তাঁর পরিবারকে অনেক উঁচুতে তুলে দিয়েছে। স্বপ্নার হেপ্টাথলন ইভেন্টটি টেলিভিশনে তাঁর পরিবারের সদস্যরা দেখেছেন-এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, স্বপ্না সোনা জয়ের পর স্বপ্নার মা মন্দিরে গিয়ে পূজা দিয়ে আসছেন।

সোনা জয়ে স্বপ্নার পরিবারের সম্মান বেড়েছে, কিন্তু আর্থিক অবস্থা তো সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। অস্ত্রোপচার করালে স্বপ্নার পায়ের সমস্যা দূর করানো সম্ভব। কিন্তু বাসনা বললেন, সেই টাকা কোথায় তাঁদের, ‘আমি কীভাবে অস্ত্রোপচার করাব! আমারও এক পায়ে ছয় আঙুল। এটাই পেয়েছে স্বপ্না। আমি মানিয়ে নিয়েছি। আমরা ভেবেছিলাম স্বপ্নাও পারবে।’

তবে এশিয়ান গেমসের সোনার সঙ্গে স্বপ্নার পরিবারে কিছু অর্থ সমাগমও হয়তো হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার পুরস্কার হিসেবে স্বপ্নাকে ১০ লাখ রুপি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এতে কি স্বপ্নার অস্ত্রোপচার করানো সম্ভব? কে জানে, বাসনার এই কথা শুনে মানিদের মতো কারও হয়তো স্বপ্নার অস্ত্রোপচারের খরচ দেওয়ার ইচ্ছাও জাগবে!