রেফারিকে 'চোর' বললেন সেরেনা, ওসাকা গড়লেন ইতিহাস

ওসাকার পাশে সেরেনার বিমর্ষ মুখটাই সব বলে দিচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
ওসাকার পাশে সেরেনার বিমর্ষ মুখটাই সব বলে দিচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
>

ইউএস ওপেনে মেয়েদের একক ফাইনালে সেরেনা উইলিয়ামসকে ৬-২, ৬-৪ গেমে হারিয়ে শিরোপা জিতেছেন জাপানের নাওমি ওসাকা। উত্তপ্ত ও বিতর্কিত এই ফাইনালে আম্পায়ারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছেন সেরেনা।

নাওমি ওসাকার কাছে হার নিশ্চিতের পর নেটের কাছে গিয়ে তাঁর সঙ্গে আন্তরিকভাবেই হাত মেলান সেরেনা উইলিয়ামস। কিন্তু চেয়ার আম্পায়ার কার্লোস রামোসের সঙ্গে হাত মেলাননি। তাঁর সঙ্গে মার্কিন কৃঞ্চকলির হাত মেলানোর প্রশ্নই ওঠে না!

ইউএস ওপেনের ফাইনাল না দেখে থাকলে অবাক লাগতেই পারে। ম্যাচ শেষে আম্পায়ারের সঙ্গে করমর্দন করা তো খেলার স্পিরিটের অংশ। সেরেনা তা করেননি। ম্যাচ চলাকালে কার্লোস রামোসের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে সেরেনা বেশ কয়েকবার ক্ষোভে ফেটে পড়েন কোর্টের মধ্যেই। কোর্টেই জড়িয়েছেন বাগ্‌বিতণ্ডায়। রাগে র‍্যাকেট ছুড়ে মেরেছেন। বিরতির পর ঢুকতে চাননি কোর্টেও। হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন টুর্নামেন্ট রেফারির। কিন্তু তা আর হয়নি। শেষ পর্যন্ত সেরেনা কোর্টে ফিরলেও লড়াইয়ে কি মনোযোগ ছিল?

আম্পায়ারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন সেরেনা। ছবি: রয়টার্স
আম্পায়ারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন সেরেনা। ছবি: রয়টার্স

থাকলে লড়াইয়ে আরেকটু প্রতিদ্বন্দ্বিতার আঁচ থাকত। ওপেন যুগে সর্বোচ্চসংখ্যক গ্র্যান্ড স্লামজয়ী সেরেনা ইউএস ওপেনের ফাইনালে উঠে নিশ্চয়ই অন্য কিছুতে বুঁদ থেকে শিরোপা জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করবেন না? তাঁর প্রতিপক্ষও ছিল তুলনামূলক দুর্বল। প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের অপেক্ষায় থাকা জাপানের নাওমি ওসাকা। কিন্তু এই ওসাকার কাছেই কিনা ৬-২, ৬-৪ গেমে হেরে গেলেন সেরেনা! আসলে এবার মেয়েদের এককের ফাইনালে লড়াইয়ের চেয়ে বিতর্কই বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছে। সেটি সেরেনা বনাম কার্লোস রামোস।

তাতে ওসাকার কৃতিত্ব কিন্তু এতটুকু কমছে না। জাপানের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে কোনো গ্র্যান্ড স্লাম থেকে একক শিরোপা তুলে নিলেন এই কুড়ি বছর বয়সী। সেটিও আবার তাঁর আদর্শ সেরেনাকে হারিয়ে! আনন্দের আতিশয্যে কেঁদে ফেলা ওসাকাও কিন্তু ম্যাচের পরিস্থিতি ভুলে যাননি। বলেছেন, ‘ম্যাচটা এভাবে শেষ হওয়ায় খারাপ লাগছে।’

ওসাকার খারাপ লাগার কারণও সেই একই—সেরেনা বনাম রামোস বিতর্ক। ঘটনার শুরু দ্বিতীয় গেমের দ্বিতীয় সেট থেকে। খেলা চলাকালে সেরেনার বিপক্ষে গ্যালারি থেকে ইশারায় কোচের পরামর্শ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন রামোস। অভিযোগটা অমূলক নয়, কারণ পরে সেরেনার কোচ প্যাট্রিক মোরাতোগলু পরামর্শ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। একই কাজ করেছেন ওসাকার কোচ সাশা বাজিনও। ডব্লিউটিএ ট্যুরে কোচেরা বাইরে থেকে পরামর্শ দিতে পারলেও গ্র্যান্ড স্লামে এই নিয়ম নেই।

কোর্টেই র‍্যাকেট ছুড়ে মারেন মার্কিন এই তারকা। ছবি: রয়টার্স
কোর্টেই র‍্যাকেট ছুড়ে মারেন মার্কিন এই তারকা। ছবি: রয়টার্স

এই কাজে সেরেনার বিপক্ষে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ আনেন রামোস। কিন্তু মার্কিন তারকা উল্টো এই অভিযোগ অস্বীকার করে আম্পায়ারকে গিয়ে বলেন, ‘আমি কখনো প্রতারণা করি না। দরকার পড়লে হেরে যাব।’ এরপর দ্বিতীয় সেটে ৩-২ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকতে রাগে র‍্যাকেট ছুড়ে মারায় সেরেনার পয়েন্ট কাটেন রামোস। এতে ভীষণ খেপে গিয়ে রামোসের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ জানান সেরেনা। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে গ্যালারির দর্শকেরাও তখন সেরেনার পক্ষ নিয়ে দুয়ো দিয়েছেন রামোসকে।
এরপর বিরতির সময় ওসাকা যখন ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে সেরেনা গিয়ে পর্তুগিজ এই আম্পায়ারকে বলেছেন, ‘তুমি মিথ্যেবাদী। জীবনে বেঁচে থাকতে আর কখনো আমার ম্যাচে আম্পায়ারিং করতে পারবে না।’ এতে আবারও আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে পরের গেমে আবারও সেরেনার পয়েন্ট কর্তন করেন রামোস। একপর্যায়ে কোর্টেও ঢুকতেও আপত্তি জানিয়েছিলেন সেরেনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোর্টে ফিরে ওসাকার কাছে হার মানলেও রামোসের কাছে মানেননি। রামোসের বিপক্ষে অভিযোগ তুলে সেরেনার তোপ, ‘সে ছেলেদের কাছ থেকে কখনো ম্যাচ কেড়ে নিতে পারে না, কারণ ওরা তাকে “চোর” বলে।’