এসেনসিওতে ধরাশায়ী বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা

নিজের গোলটা তুলে নেওয়ার পর এসেনসিও। ছবি: রয়টার্স
নিজের গোলটা তুলে নেওয়ার পর এসেনসিও। ছবি: রয়টার্স
>

উয়েফা নেশনস লিগে কাল রাতে ক্রোয়েশিয়াকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে স্পেন। গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টদের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হার। স্পেনের হয়ে দারুণ খেলেছেন মার্কো এসেনসিও। ছয় গোলের মধ্যে পাঁচটিতেই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অবদান রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ তারকার।

অবিশ্বাস্য রাত? সে তো বটেই। দুই দলের জন্যই কাল রাতটা ছিল স্রেফ অবিশ্বাস্য। গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া যেমন এমন হার কল্পনাও করেনি তেমনি স্পেনও কী ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিল, এত বড় জয় ধরা দেবে?

জয়ের ব্যবধানটা ৬-০। ভুল পড়েননি। স্পেনের কাছে বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা এত বড় ব্যবধানেই হেরেছে! বিশ্বকাপ ফাইনালের পর উয়েফা নেশনস লিগে এটিই ছিল ক্রোয়াটদের প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। আর এই ম্যাচেই তাঁদের দেখতে হলো নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হার! এর আগে কখনোই চার গোলের চেয়ে বেশি ব্যবধানে হারেনি ক্রোয়েশিয়া। সবচেয়ে বেশি গোল হজমের রেকর্ড ছিল পাঁচটি—২০০৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (৫-১)।

রামোসকে দিয়েও গোল করিয়েছেন এসেনসিও। দুজনের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স
রামোসকে দিয়েও গোল করিয়েছেন এসেনসিও। দুজনের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স

কিন্তু কাল উয়েফা নেশনস কাপে ঘরের মাঠে ক্রোয়েশিয়াকে নতুন ‘ইতিহাস গড়তে’ বাধ্য করেছে স্পেন। আর সেখানে ক্রোয়াটদের এই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের দলিল বলতে গেলে মার্কো এসেনসিও একাই লিখেছেন। এ দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে কাল রাতটি যদি কারও জন্য সত্যিকার অর্থেই অবিশ্বাস্য হয়ে থাকে তবে সেটি এই স্প্যানিশ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের বেলায় প্রযোজ্য। স্পেনের ছয় গোলের মধ্যে তাঁর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে পাঁচটি গোলেই!

২২ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার নিজে এক গোল করেছেন পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও তিন গোল। আর একটি গোলও তাঁর নামের পাশে যোগ হতো। যদি না বুলেট গতির শট গোলরক্ষক কালিনিচের গায়ে লেগে জালে জড়াত! কালিনিচের গায়ে লাগায় ওটা হয়েছে আত্মঘাতী। রদ্রিগো, সার্জিও রামোস আর ইসকোকে দিয়ে বাকি তিনটি গোল করিয়েছেন এসেনসিওই।

দেশের হয়ে নিজের শততম ম্যাচে এমন হার! রাকিতিচের যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। ছবি: এএফপি
দেশের হয়ে নিজের শততম ম্যাচে এমন হার! রাকিতিচের যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। ছবি: এএফপি

গোটা ম্যাচে এসেসিওর পরিসংখ্যান চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো—এক গোল, তিনটি ‘অ্যাসিস্ট’, তিনটি শট, ৫৯টি সফল পাস (৬২ পাসের মধ্যে), বল কেড়েছেন ৬ বার আর ৪টি গুরুত্বপূর্ণ পাস; স্পেনের প্রথম গোলটিতে শুধু এসেনসিওর কোনো অবদান নেই। ২৪ মিনিটে দানি কারভাহালের ক্রস থেকে হেডে ক্রোয়াটদের জাল খুঁজে নেন সাউল নিগুয়েজ। ৯ মিনিট পরই ২৫ গজ দূর থেকে বুলেট গতির শটে ব্যবধান বাড়ান এসেনসিও। স্পেনের জার্সিতে এটাই তাঁর প্রথম গোল।

দুই মিনিট পর এসেনসিও আরও একটি গোল পেতে পারতেন। বাম প্রান্ত থেকে নেওয়া তাঁর শট ক্রসবারের নিচে লেগে ক্রোয়াট গোলরক্ষক কালিনিচের পিঠ ছুঁয়ে জালে জড়ায়। এই গোলের পুরো অবদানটুকু এসেনসিও-র হলেও তা খাতায় লেখা হয় আত্মঘাতী গোল হিসেবে। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর ৪ মিনিটে এসেনসিও-র পাস থেকে বলটা কালিনিচের দুই পায়ের মাঝ দিয়ে জালে চালান করে দেন রদ্রিগো। ৪-০ গোলে এগিয়ে যায় স্পেন। এরপর ৫৭ মিনিটে কর্নার থেকে রামোসকে আর ৭০ মিনিটে ইসকোকে পাস দিয়ে গোল করান রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা।

ফিফা বর্ষসেরার সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা মদরিচও ঠেকাতে পারেননি দেশের এত বড় ব্যবধানের হার। ছবি: এএফপি
ফিফা বর্ষসেরার সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা মদরিচও ঠেকাতে পারেননি দেশের এত বড় ব্যবধানের হার। ছবি: এএফপি

বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হার মানা ক্রোয়েশিয়াকে এ ম্যাচে বলতে গেলে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। লুকা মদরিচ, ইভান রাকিতিচ, ইভান পেরিসিচরা ছিলেন ম্যাচের শুরু থেকে। দেশের হয়ে এটি ছিল রাকিতিচের শততম ম্যাচ। নিঃসন্দেহে তিনি ম্যাচটি ভুলে যেতে চাইবেন। লুই এনরিকের শিষ্যরা যেখানে ৭১ শতাংশ বল দখলে রেখেছে ক্রোয়াটরা সেখানে মাত্র ২৯ শতাংশ। স্পেনের ৭টি শটের জবাবে মাত্র ১টি শট নিতে পেরেছে জ্লাতকো দালিচের শিষ্যরা।

উয়েফা ন্যাশনস লিগে এ নিয়ে দুই ম্যাচেই জয় তুলে নিল স্পেন। এই টুর্নামেন্টে ‘এ’ লিগের চার নম্বর গ্রুপে শীর্ষ দলও স্পেন। এনরিকের শিষ্যদের পেছনে ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া।