হাবিবুলদের মনে ২৩ বছর আগের 'আমিরাত-স্মৃতি'

২৩ বছর আগে আমিরাতের শারজায় অনুষ্ঠিত পঞ্চম এশিয়া কাপ বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল নতুন এক প্রজন্মের সঙ্গে। ফাইল ছবি
২৩ বছর আগে আমিরাতের শারজায় অনুষ্ঠিত পঞ্চম এশিয়া কাপ বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল নতুন এক প্রজন্মের সঙ্গে। ফাইল ছবি
>

২৩ বছর পর আরব আমিরাতে খেলতে গিয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৯৫ সালে শারজায় অনুষ্ঠিত পঞ্চম এশিয়া কাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ, মোহাম্মদ রফিক, জাভেদ ওমর, হাসিবুল হোসেন, নাঈমুর রহমান ও সাজ্জাদ আহমেদদের মতো ক্রিকেটারদের। এঁদের দুজন পরবর্তীতে দেশকে দিয়েছেন নেতৃত্ব। আমিরাতে আরও একটি এশিয়া কাপের আগে হাবিবুল-হাসিবুলদের খুব করেই মনে পড়ছে সেই স্মৃতি। ১৯৯৫ এশিয়া কাপ যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন এক যুগেরই সূচনা করেছিল। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল নতুন একটা প্রজন্মের সঙ্গে। পাঁচ বছরের মাথায় দেশের সঙ্গে সে প্রজন্মের অভিষেক ঘটেছিল টেস্ট ক্রিকেটে।

১৯৯৫ থেকে ২০১৮—২৩ বছর। লম্বা বিরতির পর আবার আরব আমিরাতে বাংলাদেশ। পঞ্চম এশিয়া কাপ খেলতে ১৯৯৫ সালে মরুর দেশে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিস্তৃত দিগন্তে পাখা মেলা শুরু হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাসুদ, হাসিবুল হোসেন, জাভেদ ওমরদের; যারা প্রত্যেকে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল নাম হিসেবে।

সব প্রথমের আলাদা রোমাঞ্চ থাকে, থাকা আলাদা অনুভূতি। রফিকের স্মৃতিতে যেমন ভেসে আছে শচীন টেন্ডুলকারের আউটটি, ‘প্রথম ম্যাচের সবকিছুই আমার কাছে বিশেষ কিছু। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে খেলছি, স্বাভাবিকভাবে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করেছে মনে। বিশেষ করে মনে পড়ে টেন্ডুলকারকে বোল্ড করে দিয়েছিলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওটাই আমার প্রথম উইকেট।’ পেসার হাসিবুলের স্মৃতিটাও বেশ মধুর। বোলিংয়ে এসেই বোল্ড করে দিয়েছিলেন রোশান মাহানামাকে। ২৩ বছর আগের স্মৃতি মনে পড়তেই একটু যেন নস্টালজিয়ায় ভুগলেন বর্তমানে বিসিবির জুনিয়র নির্বাচক, ‘প্রথম ম্যাচের স্মৃতি ভুলি কী করে! প্রথম ওভারে উইকেট পেলাম। শ্রীলঙ্কা তখনো অনেক শক্তিশালী দল। দলে কত তারকা। তবে মোটেও স্নায়ুচাপে ভুগিনি। আন্তর্জাতিক অভিষেকে শুধু বোলিংয়ের চিন্তাটাই ছিল বেশি। সাইফুল (ইসলাম) ভাই শুরুতে উইকেট পাওয়ায় আমার চাপ কমে গেয়েছিল।’

১৯৯৫ এশিয়া কাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখা হাবিবুল, পরে যিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে। হাসিবুলের মতো হাবিবুলেরও অভিষেক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে। বাংলাদেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবির নির্বাচকের স্মৃতিতে ভেসে এল মজার এক ঘটনা, ‘ওই ম্যাচে স্লো ওভার রেটের কারণে ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড আমাদের হুমকি দিলেন ম্যাচ ফি কেটে নেওয়ার। আমরা ঘাবড়েই গেলাম! পেতামই মাত্র ৫০ ডলার ম্যাচ ফি। সেটিও হারানোর শঙ্কায়। পকেট-টকেট হাতড়ে লয়েডকে আমরা বললাম, যা আছে নিয়ে যান!’

রসিকতা ছেড়ে পরক্ষণেই হাবিবুল সিরিয়াস হয়ে যান। অতীত-বর্তমান ফুটে ওঠে তাঁর মনের আয়নায়, ‘তখন অনেকদিন পর পর এশিয়া কাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বাদ পেতাম। আন্তর্জাতিক ম্যাচ না থাকলে যে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভীষণ ব্যস্ত থাকব সে উপায়ও ছিল না। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ছিল না। ভালো সুযোগ-সুবিধাও ছিল না। ছিল না কোনো পেশাদারি। তখন ভারতীয় দলের পেশাদারি ছিল সেটি এখনো আছে। আর আমরা নিজেদের বদলে এই জায়গাটায় ভারতের কাছাকাছি এসেছি। তখনকার দলের সঙ্গে এখনকার দলের তুলনা করাটা ভুল। তখন অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। এখন যেটি নেই। তখন দেশে ফুটবলের জোয়ার। ক্রিকেটে বলার মতো সমর্থকও ছিল না।’

সময় বদলেছে। বদলেছে দিন। হাবিবুলই যেমন ১৯৯৫ এশিয়া কাপের দলের সঙ্গে বর্তমান দলের তুলনা করার পক্ষে নন। তখন বাংলাদেশ যদি সম্মানজনক লড়াইয়ের জন্য খেলত, এখন লড়ে শিরোপা জিততে। এবার বাংলাদেশের কেন দুর্দান্ত কিছু করা উচিত, সেটিই বলছিলেন হাসিবুল, ‘এখনকার বাংলাদেশ অনেক ক্রিকেট খেলছে। অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে। সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। স্বাভাবিকভাবে আমাদের তুলনায় এই বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা, এখনকার খেলোয়াড়েরা বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে খেলতে নামে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ একটা পর্যায়েও চলে এসেছে। সিনিয়ররা নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারলে অনেক ভালো করবে।’

তবে হাবিবুল একটা বাস্তবতার কথা মনে করিয়ে দিলেন। বাংলাদেশকে আগে টপকাতে হবে গ্রুপ পর্বের বৈতরণি। এই পর্বে মাশরাফিদের হুমকি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। একটু পা হড়কালেই বিপদ। সংশয়-সম্ভাবনা দুটিই ভাবনায় রেখে হাবিবুল বললেন, ‘কোয়ালিফাই জিনিসটা আমার একদমই ভালো লাগে না। এতে বড় দলের বেশি ক্ষতি হয়। এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে বড় দল হিসেবেই ধরব। ধরা উচিত। কোয়ালিফাইয়ে বড় দলকে চাপে রাখে। সবার আগে এই পর্বটা পেরোতে হবে। এটা পেরোলে নিজেদের খেলা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এখন এশিয়ার সব দলই ভালো। ভারত-পাকিস্তান শুধুই নয়। শ্রীলঙ্কা অনেক শক্তিশালী। কাজটা সহজ হবে না। তবে কন্ডিশন একটা ব্যাপার। ভালো ব্যাপার হচ্ছে দল একটু আগেভাগে গেছে ওখানে।’

মোহাম্মদ রফিকের কণ্ঠেও হাবিবুলের কথারই পুনরাবৃত্তি, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে আর নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারলে ভালো কিছু সম্ভব। সেটি হলে মরুর দেশ থেকে মাশরাফিরা ফিরবেন হাসিমুখে।