নিদাহাস ট্রফির সেই উত্তেজনা ভুলে গেছেন মাশরাফি

এশিয়া কাপের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে মাশরাফিসহ অন্য দলের অধিনায়কেরা। ছবি: এএফপি
এশিয়া কাপের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে মাশরাফিসহ অন্য দলের অধিনায়কেরা। ছবি: এএফপি

আজ দুবাইয়ে অধিনায়কদের সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ও আফগানিস্তান অধিনায়ক আসগর আফগানের মাঝে বসেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। হঠাৎ মাশরাফি ফিসফিসিয়ে কী যেন বললেন সরফরাজ আর ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে।

বাংলাদেশ অধিনায়কের কথা শুনে সংবাদ সম্মেলনের মতো গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠানে হাসি আটকে রাখতে পারলেন না রোহিত-সরফরাজ। বিশেষ করে সরফরাজ, পাকিস্তানের অধিনায়কের কী যে কষ্ট হলো হাসি আটকে রাখতে! এ দৃশ্য দেখে বোঝা কঠিন, কাল থেকে আরব আমিরাতে শুরু হচ্ছে এশীয় ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। লড়াইয়ের ঝাঁজটা টের পাওয়া আরও কঠিন হলো আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি মাঠে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের সামনে আসা মাশরাফির কথা শুনে।

এখন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচ আর দশটা ম্যাচের মতো নয়। সামনে অনেক বিষয়, অনেক ঘটনা চলে আসবেই। চলে আসবে অনেক হিসাব-নিকাশের কথাও। অনেক বিষয়ের মধ্যে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। অনেক ঘটনার মধ্যে অবশ্যই গত মার্চের নিদাহাস ট্রফি। কলম্বোয় কী উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ না ছড়াল দুই দলের লড়াইয়ে। ১৬ মার্চ ‘সেমিফাইনালে’ রূপ নেওয়া সেই ম্যাচ মাঠে লড়াইয়ে ছাপিয়ে আলোচনায় এল নানা ঘটনার ঘনঘটায়। উত্তেজনাময় মুহূর্তে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সতীর্থদের মাঠ ছেড়ে চলে আসার ইঙ্গিত, এমনকি বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের দরজা ভাঙা—অনেক আলোচনা হয়েছে এ ম্যাচ নিয়ে।

আজ সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি। ছবি: এএফপি
আজ সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি। ছবি: এএফপি

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরেকটি লড়াইয়ের আগে কি ফিরে আসে না নিদাহাস ট্রফি-উদগত সেই উত্তাপ? মরুর দেশে তপ্ত আবহাওয়ায় মাশরাফি যেন এ আলোচনায় জলই ঢেলে দিতে চাইলেন, ‘এসব তো খেয়াল থাকে না। ভালো খেলে জেতা, এটাই উদ্দেশ্য থাকে। এর বাইরে কী হয়েছে, এসব ভাবার বিষয় নয়। আর এগুলো মনে হয় না মাঠে কোনো গুরুত্ব আছে।’ পরক্ষণে বাংলাদেশ অধিনায়ক যোগ করলেন, ‘কেউ তো কারও শত্রু না। দলের জন্য খেলতে গেলে উত্তপ্ত মুহূর্তে মাঠে কিছু ঘটনা ঘটে যায়। এসব আসলে কেউ মাথায় রাখে না। এগুলো অপ্রয়োজনীয় বিষয়।’

তবে এটা ঠিক, গত কিছুদিনে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ দলের। বিশেষ করে হাথুরু যখন বাংলাদেশকে আকস্মিক বিদায় জানিয়ে নিজের দেশ শ্রীলঙ্কার কোচ হলেন। মাশরাফি এ প্রসঙ্গও সযতনে এড়িয়ে গেলেন, ‘কাল প্রতিপক্ষ ভারত-পাকিস্তান থাকলেও জেতার ওই ইচ্ছেটা একই রকম থাকত। কাল অনেক বড় ম্যাচ। হারলে দ্বিতীয় ম্যাচেও সুযোগ থাকবে। তবে যদি প্রথম ম্যাচে ভালো করতে পারি আমাদের জন্য ভালো হবে। দ্বিতীয় ম্যাচটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে পারব। প্রথম ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এবার টুর্নামেন্টের ফরম্যাটও অন্যরকম। গ্রুপ পর্বে খেলে আবার চারটা দলকে খেলতে হবে। সূচিটাও দেখেন, টানা খেলা। এই টুর্নামেন্টে অনেক চ্যালেঞ্জ। প্রথম ম্যাচটা ভালো করলে সবদিক দিয়ে মানিয়ে নিতে সহজ হবে।’

প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা ছাড়াও বাংলাদেশকে আরও দুটি বিষয় নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। আগ থেকেই আঙুলের চোটে পড়া সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল শতভাগ ফিট নন। তবুও তাঁদের ধরেই নিশ্চিত একাদশ সাজাবে টিম ম্যানেজমেন্ট। দুজনই যে খেলতে উন্মুখ। সাকিব-তামিম খেললেও বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানাবে দুবাইয়ের কন্ডিশন-উইকেট। বাংলাদেশ নিয়মিত অনুশীলন করেছে আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি মাঠে।

যে মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ, সেটির উইকেট মাশরাফি বাদে দলের আর কারও দেখার সুযোগ হয়নি। মাশরাফি তবুও আশাবাদী, ভালো করতে হলে এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই খেলতে হবে, ‘গরম অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। আফগানিস্তান-পাকিস্তানের জন্য হয়তো সহজ হবে। তারা এখানে সব সময়ই খেলে। শ্রীলঙ্কা কিছুদিন আগে টেস্ট সিরিজ খেলে গেছে। তারা হয়তো কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারবে। এখানকার উইকেট-আবহাওয়ার সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত নই। আমাদের এই দলটা প্রথমবারের মতো এখানে খেলতে এসেছে। পিএসএলে আমাদের দু-একজন খেলেছে। এসব আমাদের হাতে নেই। তার মানে এই নয় যে এসব নিয়ে পড়ে থাকব। আমাদের ইতিবাচক থাকতে হবে। এগুলো মানিয়ে নিতে পারলে ভালো দল হয়ে ওঠা যাবে।’