যেখানে আফগানিস্তান ২২৭, পাকিস্তান ১২৪, বাংলাদেশ ১১, ভারত ০!

আরব আমিরাতের কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতায় ঢের এগিয়ে আছে আফগানিস্তান। ছবি: এএফপি
আরব আমিরাতের কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতায় ঢের এগিয়ে আছে আফগানিস্তান। ছবি: এএফপি
একটি জায়গায় আফগানরা এমন এগিয়ে আছে, যেখানে বাকিরা বিস্তর ব্যবধানে পিছিয়ে! সেটি হলো আরব আমিরাতে খেলার অভিজ্ঞতা। যে অভিজ্ঞতায় পাকিস্তানকেও পেরিয়ে গেছে আফগানদের এই দল!

কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে যেন চোখ। মাথায় দুই হাত। মুখের আদল ইংরেজি ‘ও’ অক্ষর চেনাচ্ছে। কাল শ্রীলঙ্কা যখন হেরে যাওয়ার পথে, প্রায় শূন্য গ্যালারিতে বিন্দুর মতো হাজির শ্রীলঙ্কান সমর্থকদের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল, চোখে তাঁরা যা দেখছেন, তা ঠিক বিশ্বাস করতে চাইছে না মন! শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তানের কাছে হারবে, এ যে তাঁদের কাছে অভাবিত!

আফগানিস্তানের ক্রিকেটের উত্থান যদিও নতুন নয়। এর আগে তারা জিম্বাবুয়েকে জিম্বাবুয়ের মাটিতে গিয়ে টানা দুই সিরিজে হারিয়ে এসেছে। আফগানদের উত্থানের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ। সত্যি বলতে কি, এবারের এশিয়া কাপে ভারত, এমনকি পাকিস্তানকেও চমকে দিতে পারে আফগানরা! অন্তত একটি জায়গায় আফগানরা এমন এগিয়ে আছে, যেখানে বাকিরা বিস্তর ব্যবধানে পিছিয়ে!

খুব বেশি হেরফের না হলে এশিয়া কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারত। বাকি তিন দলকে অন্তত একটি জায়গায় বিশেষ সমীহ করতে হবে। সেটি হলো আরব আমিরাতে খেলার অভিজ্ঞতা। যে অভিজ্ঞতায় পাকিস্তানকেও পেরিয়ে গেছে আফগানদের এই দল!

নিজ দেশে নির্বাসিত পাকিস্তান অনেক আগে থেকেই আরব আমিরাতকে নিজেদের ঘর বানিয়েছে। আফগানদের বেলায় সেটি আরও বেশি করে প্রযোজ্য। পাকিস্তান তবু প্রায় অর্ধেকের মতো ম্যাচ খেলে অ্যাওয়ে সিরিজ হিসেবে। সেখানে আফগানদের বেশির ভাগ ম্যাচ খেলতে হয় আরব আমিরাতে। আর এটাই তাদের এনে দিয়েছে বিশেষ সুবিধা। আরব আমিরাতের ডে-নাইট ম্যাচের কন্ডিশন কেমন হয়, সেটি আফগানদের চেয়ে ভালো কেউ জানে না।

দিনের প্রচণ্ড দাবদাহ সামলে খেলে যাওয়ার শারীরিক সামর্থ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে আফগানরা। সন্ধ্যার পর বলের হালকা সুইং কী করে আদায় করে নিতে হয়, সেটিও যেন সবচেয়ে ভালো জানে তারা। তা তো জানবেই। আরব আমিরাতে ম্যাচ খেলার সংখ্যায় এই আফগান স্কোয়াড বাকিদের চেয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে।

এশিয়া কাপ খেলতে আসা আফগানিস্তানের এই স্কোয়াডটি এখানে মোট ২২৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। যেখানে পাকিস্তানের বর্তমান স্কোয়াড সম্মিলিতভাবে খেলেছে ১২৪টি ওয়ানডে। পাকিস্তানের এই স্কোয়াডের সবার এখানে ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতাও নেই। বাংলাদেশ গত ম্যাচে খেলল প্রথমবারের মতো। ফলে বাংলাদেশের স্কোয়াডের এখানে ম্যাচ খেলার সম্মিলিত অভিজ্ঞতা হলো ১১। ভারত ২০০৬ সালের পর আরব আমিরাতে খেলতেই আসেনি। ফলে এই স্কোয়াডের কারও এখানে ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। ভারত আজ প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে হংকংয়ের বিপক্ষে।

ক্রিকেটে কন্ডিশন অনেক বড় ব্যাপার। এশিয়ার চেনা কন্ডিশনের সঙ্গে অনেক মিল থাকলেও অমিলও বিস্তর আছে আরব আমিরাতের কন্ডিশনে। তাই শুরু থেকে বলা হচ্ছিল, এখানে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে পাকিস্তান। ভারত এবারের এশিয়া কাপের নেপথ্য আয়োজক হলেও হোম কন্ডিশনে সুবিধা পাকিস্তানই পাচ্ছে। পাকিস্তান এই টুর্নামেন্টের ট্রফি জিতেছে মাত্র দুবার। এশিয়া কাপ জেতার জন্য মরিয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফির চ্যাম্পিয়নরা।

তবু তারা জানে, আরব আমিরাতের কন্ডিশন তাদের জন্যও খুব বেশি সুবিধার হবে না। এ কারণে পাকিস্তান এখানে খেলতে আসার আগে লাহোরের তীব্র গরমে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছে। পাশাপাশি অ্যাবোটাবাদের সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও ক্যাম্প করেছে ক্রিকেটাররা। আরব আমিরাতে টেস্ট-ওয়ানডের পাশাপাশি পিএসএলের ম্যাচও খেলেন পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা। ঘরোয়া সেই টি-টোয়েন্টি লিগ খেলার সুবাদে এখানকার কন্ডিশন দলের অনেকের কাছে পরিচিত।

কিন্তু পিএসএলে খেলেন আফগান ক্রিকেটারদেরও অনেকে। সেই সঙ্গে এখানে এতগুলো আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা। ফলে সুপার ফোরে আফগানদের সহজ প্রতিপক্ষ ধরে নিলে মারাত্মক ভুল করবে বাকি তিন দল।